বুধবার   ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আশ্বিন ৯ ১৪৩২   ০১ রবিউস সানি ১৪৪৭

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ‘ডিপফেক’ ভিডিও

নিউজ ডেস্ক

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:৩৭ এএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ শনিবার

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের তথ্য : পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন প্রতিবেদন বানোয়াট

 
আজকাল রিপোর্ট
বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন ঘিরে ডিপফেক ভিডিও নিয়ে তোলপাড় চলছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনকে বানোয়াট বলে আখ্যায়িত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নীতি নির্ধারকেরা। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন। আগামী বছর বিশ্বের বেশ কিছু দেশে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশে আগামী জানুয়ারির শুরুতে জাতীয় নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা। সেখানে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সরকারপন্থী সংবাদমাধ্যম ও ইনফ্লুয়েন্সাররা (প্রভাবক) সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এআই ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন এআই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের টুলস দিয়ে এগুলো তৈরি করা হচ্ছে। এমন একটি কথিত ‘নিউজ ক্লিপে’ দেখা যায়, এআই ব্যবহার করে তৈরি করা উপস্থাপক যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা করছে। নির্বাচন সামনে রেখে শেখ হাসিনার সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে যাচ্ছে।
আরেকটি ডিপফেক ভিডিওতে (প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি ভুয়া ভিডিও) দেখা যায়, একজন বিরোধীদলীয় নেতা গাজায় ইসরায়েলের হামলার শিকার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থনের বিষয় নিয়ে ব্যঙ্গ করছেন। যা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে নিজের রাজনীতি ধ্বংসের শামিল।
আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ায় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এআই ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো ঠেকানোর জন্য প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর বিভিন্ন দেশের চাপ বাড়ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গুগল ও মেটা সম্প্রতি তাদের নীতিও ঘোষণা করেছে।
তবে বাংলাদেশের উদাহরণগুলো বলছে, নির্বাচনের ওপর এআই টুলগুলো কীভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, এটাই শুধু ভাবনার বিষয় নয়। অন্য বিষয়টি হলো এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন। কারণ, বড় বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মতো বিজ্ঞাপনের ছোট বাজার উপেক্ষা করে।
বাংলাদেশভিত্তিক গণমাধ্যম গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, এআই ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এগুলো তৈরি করা হচ্ছে ছবি ও ভিডিও সম্পাদনার সাধারণ প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে। তবে যখন এআই প্রযুক্তি দিয়ে বিপুল পরিমাণ মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হবে, সেটা কত বড় হুমকি হবে, তা কল্পনাও করা যায় না।
তেল আবিবভিত্তিক এআই ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ডি-আইডি ব্যবহার করে তৈরি একটি ডিপফেক ভিডিওতে দেখা যায়, বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান তাঁর বয়স নিয়ে মিথ্যা বলছেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্য টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট বলছে, এই ভুয়া ভিডিও তৈরি করা হয়েছে ওই নেতার সম্মানহানির জন্য। এ ব্যাপারে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ডি-আইডির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও প্রতিষ্ঠানটি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
অনলাইনে মিথ্যা তথ্য নিয়ন্ত্রণে কী করা হচ্ছে, জানতে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস যোগাযোগ করে বাংলাদেশের ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানটিও।
টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন শাবনাজ রশিদ। তিনি বলেন, প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো মিথ্যা তথ্যগুলো ধরার জন্য নির্ভরযোগ্য কোনো এআই শনাক্তকরণ টুল না থাকা। আবার কিছু টুল আছে, যেগুলো ইংরেজি ভাষা ছাড়া অন্য ভাষার কনটেন্টে (আধেয়) অকার্যকর। তিনি বলেন, বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে এআই নিয়ন্ত্রণে যে কাজ করছে, বাংলাদেশের মতো ছোট বিজ্ঞাপনের বাজারে তার প্রভাব হবে সীমিত। কারণ, তারা পশ্চিমা দেশগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে ওই কাজ করছে। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে কী হচ্ছে, সেটা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না।
এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, যুক্তরাজ্যভিত্তিক ফিনান্সিয়াল টাইমস বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট, বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্ধ তৈরির অপচেষ্টা মাত্র।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের কিছু গণমাধ্যম মাঝে মধ্যেই বাংলাদেশ সম্পর্কে বানোয়াট খবর প্রচার করে থাকে; পরে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এবারও তারা সেটাই করেছে। রাতে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন তিনি। সভা শেষে নির্বাচন ইস্যুতে বিরোধীদল ও যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে মিথ্যা খবর প্রচার করছেÑ বাংলাদেশ সরকার এমন তথ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করে না। কারো বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র করার কথা চিন্তাও করে না। বর্তমান সরকার জনগণের উপর বিশ্বাস রাখে। জনগণ ভোট দিলে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসবে।
মোমেন বলেন, যুক্তরাজ্যে কিছু দুষ্ট বাংলাদেশি আছে তারা সেখানে বসে বসে টাকা-পয়সা খরচ করে এসব করে থাকে। অনেক বড় বড় গণমাম্যম বিক্রি হয়ে গেছে। যার প্রমাণ ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের নির্যাতন নিয়ে তারা কথা বলে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিএনপিও গাজা ইস্যুতে কথা বলে না ওই সব মিডিয়াও কথা বলে না। এসব ঘটনা থেকে তাদের মধ্যে আতাতের প্রমাণ মিলে।
এদিকে, বাংলাদেশে নির্বাচন সংক্রান্ত ভুয়া খবরের (ডিপ ফেক নিউজ) বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। গত বুধবার ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র ম্যাথিউ বলেন, আমরা বাংলাদেশে নির্বাচন-সংক্রান্ত ভুয়া খবর দেখেছি। এআই ব্যবহার করে বিশ্বজুড়ে এমনটি করা হচ্ছে। এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে।