বুধবার   ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আশ্বিন ৯ ১৪৩২   ০১ রবিউস সানি ১৪৪৭

৫২ বছর পরও কেন এত প্রশ্ন?

অমিমাংসিত অনেক বিষয় পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস নেই

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:৩৬ এএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ শনিবার



বিশেষ প্রতিনিধি
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ৫২ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের অনেক বিষয় অজানা। এখনও অমিমাংসিত রয়ে গেছে ইতিহাসের প্রকৃত সত্য। স্বাধীন দেশে এখনও সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন তুলছেন মানুষ। একপক্ষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অন্যপক্ষকে বলা হচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের এক বড় লজ্জা এটি। বিজয়ের অর্ধ শতাব্দির বেশি সময় পরও জাতি হিসেবে বাংলাদেশিরা স্পষ্টত বিভক্ত।
যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশে-প্রবাসে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হলেও দিবসটি জাতীয় দিবসের মর্যাদা পায়নি। জাতীয়ভাবে পালনযোগ্য দিবসের কোনো শ্রেণিতে স্থান পায়নি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সর্বশেষ জারি করা প্রজ্ঞাপনে মোট ৮৯টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসের উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে শহীদ বুদ্দিজীবী দিবস ১৪ ডিসেম্বর নেই। ১৯৭২ সাল  থেকে প্রথাগতভাবে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস জাতীয়ভাবে পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই দিবসটি সরকারি গেজেটে না থাকার বিষয়টিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তারা আশা প্রকাশ করেন শিগগিরই বুদ্ধিজীবী দিবসটি গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করে তা প্রকাশ করা হবে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা কত এ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। জানা গেছে, স্বাধীনতার ৫২ বছর পর রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাচ্ছেন আরও অর্ধশতাধিক শহীদ বুদ্ধিজীবী। চলমান এ প্রক্রিয়ায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুতে নতুন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই অব্যাহত আছে। এর আগে দুই ধাপে ৩৩৪ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীকে গেজেট প্রকাশ করে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নতুন গেজেটের বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এ বিষয়ক জাতীয় কমিটি গঠন করেছি আমরা। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আরেকটি তালিকার বিষয়ে কমিটি কাজ করছে।’
একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি ও গবেষক শাহরিয়ার কবির জানান, শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা ও গেজেটের অন্তর্ভুক্তির জন্য ৬৫ জনের আত্মীয়-স্বজন সরাসরি আবেদন করেছেন। ‘১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’ থেকেও একটি তাালিকা তারা করেছেন। সেখানে প্রায় শতাধিক নতুন নাম আছে। উপকমিটির কাছে সেগুলো রেফার করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই চলছে। এর মধ্যে যেগুলো নির্ভরযোগ্য বা যেগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই সেগুলো নিয়ে হয়তো আরেক দফা গেজেট এই মাসে প্রকাশ করা হবে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীর প্রকৃত সংখ্যা কত-এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চেয়ার অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তো সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে এলাম। আমাদের শ্লাঘাবোধ আছে; কারণ বিগত অর্ধশতকে আমাদের নানাবিধ অর্জনে আমরা বেশ স্ফীত হয়েছি। কিন্তু মনে হয়, অতিবাহিত সময়ে আমাদের করণীয় অনেক কাজ করতে পারিনি। যেমন বিচ্ছিন্ন-এলোমেলো কিছু বর্ণনা-বিবরণ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস আজও পেলাম না। শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা কত? এর উত্তর দেওয়ার মতো তথ্য আমাদের হাতে নেই। গণমাধ্যম অনুযায়ী, এ সংখ্যা হতে পারে ১১১১। প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) ১৩ জন শহীদ সাংবাদিকের তথ্য তুলে ধরেছে তাদের প্রকাশনায়। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকা এখনো দুর্লভ। প্রয়োজন জেলাভিত্তিক তালিকা; যে কাজটি বাংলা একাডেমির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রকল্প (১৯৯৭-২০০১) করছিল। কিন্তু মহাপরিচালক হিসাবে আমার মেয়াদ শেষ হওয়ায় প্রকল্পটি অসমাপ্ত রয়ে যায়। অবশ্য সরকারি অনুমোদন ও অর্থায়ন পেতে দু’বছরের বেশি সময় লেগেছিল; আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যার কারণ ছিল। এখন শহীদ বুদ্ধিজীবীর চূড়ান্ত তালিকা দিতে পারে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। আমরা অপেক্ষমাণ থাকব।’
মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা নিয়েও বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্পষ্টত দুটি ধারা চলমান। একপক্ষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চাইতেও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বড় করে দেখতে আগ্রহী। অপরপক্ষ মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবদানকে খাট করে দেখায় উদ্গ্রীব।