মঙ্গলবার   ১৮ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৩ ১৪৩২   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

গোপনে রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:৩৮ এএম, ১১ নভেম্বর ২০২৩ শনিবার

যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র দেশগুলো সক্রিয়
শেষ মুহূর্তের চমকের অপেক্ষা

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা থেকে
বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিদেশী কূটনীতিকরা স্পষ্টত বিভক্ত হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোর কূটনীতিকরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গোপনে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এই প্রচেষ্টা কতটা সফল হয় তা এখনই স্পষ্ট নয়। এক্ষেত্রে, নাটকীয় কিছু ঘটলে তা শেষ মূহূর্তের চমক হিসাবে দেখা দিতে পারে। অপরদিকে, ভারত ও চীন ‘সংবিধানের আওতায় গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা’র কথা বলছে। ফলে নির্বাচন প্রশ্নে এই প্রতিবেশি দেশগুলো মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রোডম্যাপের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে। কূটনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে।
রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংলাপ আয়োজনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোর কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ সফল করার লক্ষ্যে ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতাও শুরু হয়েছে। বিদেশি কূটনীতিকরা দফায় দফায় নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করছেন। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। তবে ‘স্পর্শকাতরতার বিবেচনায়’ জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সঙ্গে চলমান উদ্যোগ নিয়ে কোনো আলোচনা হচ্ছে না। ঢাকায় নির্ভরযোগ্য সূত্র আজকালকে সংকট নিরসনে কূটনৈতিক উদ্যোগের কথা নিশ্চিত করেছে।
সূত্রমতে, শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নয়, সংকট নিরসনে দেশের বাইরেও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইইউ, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশ মিলে এ উদ্যোগ নিলেও অন্যান্য দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। সূত্র জানায়, কূটনীতিকরা নেপথ্যে থেকে রাজনৈতিক সংলাপের অনুঘটক হিসাবে কাজ করলেও সামনে আসবেন না। সামনে এলে কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ করেছেন বলে অভিযোগ উঠতে পারে। তাই তারা সতর্কতা অবলম্বন করছেন। তারা ইতোমধ্যে দলগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা সম্পন্ন করেছেন। নির্বাচনের আগে সময় খুব কম তাই সামনের কয়েকদিনে আরও অনেক বৈঠক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও ২৮ অক্টোবরের সহিংস ঘটনার কারণে কূটনৈতিক তৎপরতা কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। ওই ঘটনার কারণে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব নেতা কারাগারে থাকায় আলোচনায়ও সমস্যা হচ্ছে।
সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, সংলাপ অবশ্যই নিঃশর্ত হতে হবে। এছাড়া, ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেছেন হাস। এ বৈঠকের ফলাফল উভয়পক্ষ গোপন রেখেছে। ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, সংবিধানের আওতায় শান্তিপূর্ণ উপায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সংলাপ করার ব্যাপারে সরকারের দরজা খোলা রয়েছে। কুক বিষয়টি নিয়ে বিএনপি নেতা ড. আব্দুল মঈন খানের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গেও ব্রিটিশ দূতের বৈঠক হয়েছে বলে হাইকমিশনের ফেসবুক পেজে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সংলাপের লক্ষ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষস্থানীয় কিছু নেতার মুক্তি প্রয়োজন বলে সংশি¬ষ্টরা মনে করেন। বাংলাদেশের প্রতিবেশী হিসাবে ভারতকেও এ উদ্যোগে জড়িত করার চেষ্টা করছে দেশগুলো।
বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্যে বিদেশি কূটনীতিকরা বরাবরই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে আসছেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তারা কোনো হস্তক্ষেপ করতে চান না। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণভাবে সংকটের সমাধান করুক সেটাই তারা চান। কূটনীতিকরা এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ হোক এটা চান না বিধায় তারা প্রকাশ্য কোনো তৎপরতায় থাকবেন না। পর্দার আড়ালে থেকেই সমাধান সূত্র বের করার চেষ্টা করছেন। যদিও অতীতে বিদেশিদের উদ্যোগে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সফলতা খুব বেশি দৃশ্যমান নয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো সম্প্রতি এক যুক্ত বিবৃতিতে সহিংস ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
সংশি¬ষ্টরা বলছেন, কূটনীতিকরা সংবিধানের বাইরে গিয়ে আলোচনা করার জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন না বলে মনে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবিধানের বাইরে যেতে মোটেও রাজি নন। বিএনপি বাস্তব পরিস্থিতি অনুধাবন করে সংলাপে অংশ নিতে রাজি হলে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো, বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি, রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার, তফশিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনকে বেসামরিক ও পুলিশ প্রশাসনে রদবদল করে সমান ক্ষেত্র প্রস্তুত করার মতো ইস্যু সামনে আসতে পারে। পুলিশ হত্যা, হাসপাতালে হামলা করে অ্যাম্বুলেন্স পোড়ানো, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা এবং জ্বালাও-পোড়াও ধরনের সহিংস কর্মকান্ডের মতো অপরাধে জড়িতদের বিষয়টি রাজনৈতিক মামলায় না আনাও বিবেচ্য হতে পারে।