গ্রেপ্তার হয়রানি বন্ধে জাতিসংঘের আহ্বান
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৩:১২ এএম, ৪ নভেম্বর ২০২৩ শনিবার
মানবাধিকার কমিশনেরও উদ্বেগ
আজকাল রিপোর্ট -
বাংলাদেশে বিরোধী নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার, হয়রানি এখনই বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। সেই সঙ্গে রাজপথে সহিংসতা (মানুষ হত্যা, বাসে আগুনসহ যে কোনরকম সহিংসতা) বন্ধের তাগিদ দিয়েছে বৈশ্বিক সংস্থাটি। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দোজারিক বুধবার নিউইয়র্কস্থ সদর দপ্তরে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ আহ্বান জানান। মুখপাত্র বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে বিরোধী নেতাকর্মীকে বেআইনি গ্রেপ্তার, হয়রানি এবং রাজপথে সহিংসতা আর দেখতে চায় না জাতিসংঘ। ব্রিফিংয়ে বিরোধীদলের ওপর সরকারের নিপীড়ন নিয়ে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের উদ্বেগ এবং সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সরকারের ওপর চাপ তৈরির আহ্বান বিষয়ক বিবৃতির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
বাংলাদেশের চলমান সহিংস পরিস্থিতিতে বিরোধী কর্মীদের খুন এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী তার প্রশ্নে বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছে, বাংলাদেশে বিরোধীদের টার্গেট করে হয়রানি এবং কারাগারে রেখে নির্বাচনকে সুষ্ঠু হিসাবে বিবেচনা করা যাবে না। এই ক’দিনে বিরোধীদলের ৩ জন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে আনসারী জানতে চান জাতিসংঘ মহাসচিব কী সদস্য এই দেশটির চলমান পরিস্থিতিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন?
জবাবে দোজারিক বলেন, বাংলাদেশের বিষয়ে আমাদের অবস্থান পরিস্কার। দেশটিতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা প্রয়োজন। এ নিয়ে আমরা খুব দৃঢ়ভাবে কথা বলেছি। নির্বাচনের সময়টাতে হয়রানি, বেআইনি গ্রেপ্তার এবং সহিসংতা আমরা আর দেখতে চাই না, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এসব বিষয়েও কথা বলেছি।
এদিকে, বাংলাদেশে চলমান বিক্ষোভে সহিংসতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশন কার্যালয়। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) ইউএনএইচসিআরের ওয়েবসাইটে এ নিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ যখন নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে তখন আমরা সকল রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে, এ ধরনের সহিংসতা অগ্রহণযোগ্য। আমরা তাদেরকে সহিংসতায় উসকানি সৃষ্টি করতে পারে এমন বিবৃতি প্রদান বা কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয় থেকে বলা হয়, চলমান এই সহিংসতায় বেশ কয়েকজন মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য, পথচারী ও বিরোধী দলের কর্মীরা রয়েছেন। গত ২৮শে অক্টোবর বিরোধী দলের বিক্ষোভকারীরা প্রধান বিচারপতিসহ অন্য কয়েকজন বিচারকদের বাসভবনে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ৩০ জন সাংবাদিক বিক্ষোভকারী ও মোটরসাইকেলে চড়ে আসা মুখোশধারী ব্যক্তিদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন।
এদিকে জানা গেছে, বিরোধীদলের বিক্ষোভের জবাবে পুলিশ পালটা হামলা করেছে। তারা সারাদেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়িতেও অভিযান চালিয়েছে এবং নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যসহ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার ও আটক করেছে।
পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় বলেছে, পুলিশ যেন খুব প্রয়োজন হলে তবেই যেন বলপ্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। এমন সিদ্ধান্তের পেছনে সতর্কতা থাকা জরুরি বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয় বলেছে, সরকারকে অবশ্যই এই সংকটময় সময়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা রোধে সর্বোচ্চ সংযম অবলম্বন করতে হবে এবং নির্বাচনের আগে, চলাকালীন এবং পরে সকল বাংলাদেশিদের জন্য মানবাধিকার সম্পূর্ণভাবে সমুন্নত রাখতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
