আমেরিকার কড়া বার্তা
মোমেন-হাস রুদ্ধদ্বার বৈঠক
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:৫৮ এএম, ৪ নভেম্বর ২০২৩ শনিবার
যুক্তরাষ্ট্র চায় সংলাপ
ঢাকা অফিস -
নির্বাচনের আগে উদ্ভূত রাজনৈতিক সংকটে সমঝোতার জন্যে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়ে বিচ্ছিন্ন আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকটি ছিল রুদ্ধদ্বার। বৈঠকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে কোনও পক্ষই খোলাসা করছে না। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস কড়া বার্তা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এতে মূলত সংলাপের বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র চায় সংলাপ।
তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র বলেছেন, বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বৈঠক করে থাকে। পরস্পরকে জানা ও কর্মপন্থার জন্যে এই বৈঠক। বিষয়টি নিয়ে সবিস্তারে আর কিছুই বলেননি তিনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকরা নির্বাচনের তফশিলের আগেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংলাপ চান। তারা মনে করেন, সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে রাজপথে সহিংসতা বাড়ছে। সমঝোতা ছাড়া তফশিল ঘোষণা হয়ে গেলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। তাই এখনই অর্থবহ সংলাপ হলে তা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথকে সুগম করবে। এ অবস্থায় শেষ মুহূর্তে সমঝোতার আশায়ও আছেন অনেকেই।
গত ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় সহিংস ঘটনার পর বিদেশি কূটনীতিকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দেশগুলো নিজেদের নাগরিকদের সতর্কভাবে চলাচলের পরামর্শ দিচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘস্থায়ী হলে বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এসব কারণে সহিংসতা চায় না দেশগুলো। ২৮ অক্টোবরের সহিংস ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগী ছয় দেশ অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নরওয়ে, যুক্তরাজ্যের দূতাবাস এক যুক্ত বিবৃতিতে সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে। বিবৃতিতে হতাহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে সব অংশীদারকে সংযত হয়ে সহিংসতা পরিহারের আহ্বান জানানো হয়। দূতাবাসগুলো অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করার জন্য আহ্বান জানায়।
এছাড়া ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকরা বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন আলোচনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংলাপের তাগিদ দিচ্ছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ঢাকায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে শর্তহীন সংলাপের মাধ্যমে সংকট নিরসনের জন্য আহ্বান জানান পিটার হাস। অপরদিকে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের সঙ্গে বৈঠককালে সংলাপের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংবিধানের আওতায় শর্তহীন সংলাপে সরকারের আপত্তি নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী বলেছেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সংলাপের ব্যাপারে তারা রাজি আছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করেছেন। ব্রাসেলস থেকে ফিরে আসার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খুনির সঙ্গে কিসের সংলাপ। বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করেছেন। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংলাপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি বিধায় অনেকে মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি ছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংলাপের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখানোর কথা নয়। কারণ সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।
কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, তড়িঘড়ি তফশিল ঘোষণা হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়বে। প্রধান দুই দলের মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে সংকট নিরসনে বিদেশিরা উৎসাহ জোগালেও তারা এমন সংলাপে মধ্যস্থতা করবে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনেও উৎসাহ জোগাবে। বাংলাদেশ সরকার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এসব বিষয়ে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। সম্প্রতি মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার বাংলাদেশ সফর করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান যুক্তরাষ্ট্র সফর করে আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
