মঙ্গলবার   ১৮ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৩ ১৪৩২   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

উত্তেজনা আশঙ্কায় কাঁপছে ঢাকা

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৪:১৮ এএম, ২৮ অক্টোবর ২০২৩ শনিবার

আজ সেই লগি-বৈঠার দিন ডেটলাইন ২৮ অক্টোবর

মাসুদ করিম, ঢাকা থেকে -
চারদিকে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। কী ঘটতে যাচ্ছে ঢাকায়। দেশ ও প্রবাসের মানুষের কৌতুহলী দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার দিকে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘিরে এখন উত্তেজনায় কাঁপছে ঢাকা।
আজ সেই ভয়াবহ ২৮ অক্টোবর। ২০০৬ সালের এদিন আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার সাথে জামায়াতে ইসলামীর রক্তক্ষয়ী সংঘাত হয়েছিল। প্রকাশ্যে রাস্তায় অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ও পিটিয়ে মারা হয়েছিল ১১ জনকে। ১৭ বছর আগের সেই দিনটি স্মরণ করে মানুষের মনে শঙ্কা আবারও কি ফিরে আসবে সেই দিন। নাকি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হবে রাজনৈতিক কর্মসূচি।
কাল ২৮ অক্টোবর শনিবার ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। পাল্টা হিসাবে একই দিনে আওয়ামী লীগও ডেকেছে শান্তি সমাবেশ। শোডাউনে লোক সমাগম বাড়াতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে দুই বড় দল। নানা নাটকীয়তার পর পুলিশ দু’টি সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। তবে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে জামায়াত। পুলিশের অনুমতি না পেয়েও শাপলা চত্ত্বরে সমাবেশ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে দলটি। আর পুলিশ বলছে, অনুমতি না নিয়ে সমাবেশের চেষ্টা করা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলই লাখ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। সারাদেশ থেকে নেতা-কর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ঢাকার পাশ^বর্তী জেলাগুলো থেকে বেশি লোকসমাগম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজধানীমুখী মানুষের ঢলের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী পরিস্থিতির ওপর কড়া নজরদারি শুরু করেছে। গোটা ঢাকা শহরকে নিñিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জাল বিছিয়ে রেখেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করবে বলে ঘোষণা দিচ্ছে। যদিও এতটা কাছাকাছি দূরত্বে দু’টি বড় সমাবেশ করার ঘোষণা দেবার পর থেকে উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ প্লাজা থেকে দলীয় কার্যালয় ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পর্যন্ত সমাবেশ করার জন্য পুলিশের অনুমতি নিয়েছে। বিএনপি বলছে, পল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই মহাসমাবেশ করবে।
সমাবেশের আগে কথার লড়াইয়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনীতি। বিএনপি নেতারা বলছেন, লোক সমাগম এত বেশি হবে যে অলিগলিতে পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, গলিতে ঢুকলে আর বের হতে দেয়া হবে না। বিএনপির পরিণতি হবে শাপলা চত্ত্বরের হেফাজতের চেয়েও করুন। পুলিশও কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ বলছে, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হলে তারা সহযোগিতা করবেন। তবে কোনও প্রকাশ্য নাশকতার চেষ্টা হলে ছাড় দেয়া হবে না। জামায়াতের সমাবেশ ঘিরে নাশকতার আশঙ্কা বেশি। নির্বাচন কমিশন জামাায়াতের নিবন্ধন বাতিল করায় দলটিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি পুলিশ।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতির মাঠ এখন গরম। যদিও প্রথম দিকে অনেকে মনে করেছিলেন, ২০১৪ কিংবা ২০১৮ সালের মতো একটি নির্বাচন এবারও হবে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করার পর দৃশ্যপট পাল্টে যায়। বিএনপি ও জামায়াত প্রকাশ্যে বাধাহীন জনসভা করেছে। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। অপরদিকে, আওয়ামী লীগ বলছে, তারা সংবিধানের বাইরে একচুলও নড়বে না। তবে সমঝোতা কি অনিশ্চিত, আর সমঝোতা হলেও তা কীভাবে এই প্রশ্ন রয়েছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে নির্বাচন দেবেন এমন কথা বোকারাও বিশ^াস করে না। তবে মাঝামাঝি সমঝোতার পথ কিছু কি আছে-এমন প্রশ্নের জবাব মেলেনি। রাজনৈতিক উত্তাপ-উত্তেজনার মাঝেও খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিকিৎসক দল ঢাকায় এসে চিকিৎসা দিতে শুরু করেছেন। বিএনপি চায়, সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর অনুমতি চায়। রাজনৈতিক সমঝোতার অংশ হিসাবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশে নেবার অনুমতি দেয়া হলে বরফ গললেও গলতে পারে। তার ওপর পর্দার আড়ালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টার হলে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র দৃশ্যপটে আসার পর পরই সভা-সমাবেশ করার অধিকার অনেক বেশি অবারিত হয়েছে। ভারতের হায়দরাবাদের বংশোদ্ভূত মার্কিন কর্মকর্তা আফরিন আখতার সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে বলেছেন, শুধু ভোটের দিনে পরিবেশ দিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এখনই মানে অক্টোবর থেকে রাজনৈতিক দলের অধিকার তথা সভা-সমাবেশ সরকারের তরফে বাধা-বিপত্তির কোনও কথা শোনা যাচ্ছে না। যদিও কোনও কোনও জায়গায় বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন।
নির্বাচন কমিশন বলছে, রাজনৈতিক ফয়সালা হোক বা না হোক সংবিধান মোতাবেক নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করা হবে। নভেম্বরের মাঝামাঝি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত হবে ভোট। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রতিবেশি ভারত অনেকটা প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছিল। এ বছর ভারত অনেকটা নির্বিকার। চীনের চাপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু অনুরোধ ভারতকে হজম করতে হচ্ছে। বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হোক এটা এবার ভারতও চায়। তবে ভারত এ ব্যাপারে শেখ হাসিনার সরকারের ওপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগের বিরোধী। দিল্লি মনে করে, বেশি চাপ দিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। চীন ও রাশিয়া বাংলাদেশে ঢুকে বেশি যুক্ত হতে পারে। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ ওই সকল বলয়ের দিকে ঝুঁকে যেতে পারে। বরং বাংলাদেশে যতটা সম্ভব জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রাখতে হবে।
২৮ অক্টোবর দুই দলের পাল্টাপাল্টি এই বিশাল জমায়েতকে কেন্দ্র করে রাজধানীর প্রবেশ মুখে তল্লাশি বসিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। রাজধানী ঢাকায় যানবাহন চলাচল কমে গেছে। ঢাকায় বড় সমাবেশ করার আগে মহাখালী এলাকার খাজা টাওয়ার নামের একটি বহুতল ভবনে ভয়াবহ আগুন লেগেছে। ভবনটিতে গ্রামীণ ফোনের ডেটা সিস্টেম ছিল। আগুনে ডেটা সিস্টেম পুড়ে যাওয়ায় গ্রামীণ ফোনে টেলিফোন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ইন্টারনেটে ধীরগতির সৃষ্টি হয়েছে। এসব লাইন কবে নাগাদ ঠিক হবে কেউ বলতে পারছে না। এ নিয়েও গুজব নানান ডাল-পালা ছড়াচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কী হয় তার জন্য শঙ্কিত বাংলাদেশের মানুষ।