মঙ্গলবার   ১৮ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৪ ১৪৩২   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

নির্বাচনী পরিবেশ দেখতে আসছে যুক্তরাষ্ট্র মিশন

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:১৮ এএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ শনিবার

বাংলাদেশে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না ইইউ

মাসুদ করিম, ঢাকা থেকে -
বাংলাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ পর্যালোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আগাম মিশন অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় আসছে। প্রায় এক সপ্তাহ ঢাকায় অবস্থান করে তারা একটি বিবৃতি দেবে। এতে নির্বাচনের পরিবেশ-পরিস্থিতির উল্লেখ থাকবে। বিশেষ করে কী কী পদক্ষেপ সঠিক এবং ইতিবাচক এবং কোন কোন বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে তারও উল্লেখ থাকবে। পাশাপাশি, করনীয় সম্পর্কে থাকবে নানা সুপারিশ। এই মিশনের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে কিনা তার সিদ্ধান্ত দেবে। এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। ইইউ যদিও বলছে, আর্থিক কারণে তারা পর্যবক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, শুধু আর্থিক সংকটের কারণে নয়; বাংলাদেশে রাজনীতির পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে ইইউ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে আগামী নির্বাচনের বিশ^াসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয়ে রাজপথে পরস্পর বিরোধী অবস্থানে থেকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে নির্বাচনের সময়ে সহিংসতার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। সম্ভবত এসব কারণে ইইউ পর্যবেক্ষক পাঠাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য এখনই সিদ্ধান্ত নিতে চায় না। ঢাকায় মার্কিন দূাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যপুষ্ট ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সষ্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইন্সষ্টিটিউট (এনডিআই) স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পূর্ববর্তি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবে। প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশে ৭ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত অবস্থান করবে। তারা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন, সরকারী সংস্থা, নাগরিকবৃন্দ, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, বিদেশী কূটনীতিক সকলের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের রাজনীতি এখন উত্তাল। বিএনপি একের পর এক রোড মার্চ দিয়ে যাচ্ছে। দলটির তরফে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে এটাও বলা হয় যে, হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচিও দিতে পারে। এমন হলে সহিংসতা অনিবার্য। অতীতে এমন সহিংস পরিস্থিতির জন্যে নির্বাচন বানচাল হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ একটা ভূ-রাজনৈতিক গোলক ধাঁধাঁয় পড়ে গেছে। রাজনীতি এখন বাইরের দুনিয়ার মানুষের হাতে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা গোষ্ঠী বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার জন্যে শেখ হাসিনার সরকারের ওপর চাপ দিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আরেক লক্ষ্য বাংলাদেশ যেন চীনের প্রতি ঝুঁকে না থাকে সেটা নিশ্চিত করা। বাইডেন প্রশাসন গণতন্ত্র, মানবাধিকার প্রভৃতি বিষয়ে সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে একতরফা নির্বাচন হওয়ায় এবার যাতে একই ধরনের পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে আগেভাগে সতর্ক করছে।
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করার পথে কেউ বাঁধা দিলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাব্নে না। এই মর্মে একটি ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে সরকারী মহলের আাশঙ্কা, ভিসা নীতি কার্যকর করা হতে পারে যে কোনও সময়। যদিও দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনের এক ফাঁকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কিছুটা আলাপ করেছেন শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ উপস্থিত ছিলেন। তারা ছবিও তোলেন। এক পর্যায়ে বাইডেন মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে সেলফি তোলেন। তার কয়েক দিন পরই জাতিসংঘ সাধারন পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেন শেখ হাসিনা। সেখানে বিশে^র বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের সম্মানে এক সবংর্ধনার আয়োজন করেন বাইডেন। সেখানেও শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রন জানানো হয়েছিলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কন্যা সায়মাকে নিয়ে সম্বর্ধনায় হাজির হন। সেখানে বাইডেন ও জিল বাইডেনের সঙ্গে ছবি তোলেন।
সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ ছবি তোলার পর যুক্তরাষ্ট্র সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যে শেখ হাসিনার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা কতোটা সম্ভব এমন প্রশ্ন অনেকের মুখে মুখে। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য নীতিগত অবস্থান পরিবর্তন করবে না বলেই মনে হয়। মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ প্রধান ব্যারিষ্টার আদিলুর রহমান শুভ্রকে দুই বছরের জন্য কারাদন্ড দিলে তাতে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃৃতি দিয়েছে।