কর্তৃপক্ষের মুখে তালা
বিডিনিউজ হঠাৎ বন্ধ
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:৫৪ এএম, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ শনিবার

আজকাল রিপোর্ট-
দেশের প্রথম সংবাদভিত্তিক ওয়েবপোর্টাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বন্ধ হয়ে গেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে এমন অবস্থা। ওয়েবসাইটটি খোলার পর কোনো সংবাদ দেখা যাচ্ছে না, একটি সাদা পেজ আসছে। এ অবস্থায় বিডিনিউজ বন্ধের নেপথ্যের কারণ কি সে নিয়ে জনমনে প্রশ্নের উদয় হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে বিডিনিউজের হঠাৎ এই ‘বন্ধ’ হওয়ার দায় অনেকেই সরকারকে দিচ্ছেন। আবার অনেকেই বলছেন ভারতীয় ওয়েবহোস্টিং প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত চার্জ না দেয়াসহ বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ কারণে বন্ধ রয়েছে এই নিউজ পোর্টালটি।
বিডিনিউজ বন্ধের নেপথ্যে কি সরকার, নাকি অন্য কোনো কারণ, কার দোষ কার ঘাড়ে যাচ্ছে এবং বিডিনিউজ পড়তে না পাড়ার আসল কারণ কি তা নিয়ে নেট দুনিয়ায় চলছে নানা আলোচনা। এ আলোচনায় আরও ঘি ঢেলেছে বিডিনিউজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য। এ অবস্থায় নিজেদের ফেসবুকে পেজে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ‘আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এমন সব কারণে আমাদের সংবাদ পোর্টালে পাঠকদের নিয়মিত সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইছি। আমরা পাঠকদের আশ্বস্ত করছি, ওয়েবসাইটটি ফিরিয়ে আনতে আমাদের লড়াই অব্যাহত রয়েছে। আপাতত সংবাদ পেতে চোখ রাখুন আমাদের ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, এক্স পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিডিনিউজের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক বলেন, ‘কোনো একটা ঝামেলা হয়েছে। কিন্তু সত্যিকারে কী ঝামেলা হয়েছে, তা আমাদের কর্তৃপক্ষ জানায়নি। অর্থাৎ যে সমস্যাটি হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা আমাদের পর্যায়ে আসেনি।’
বিডিনিউজের প্রধান প্রতিবেদক সুমন মাহমুদ বলেন, ‘এটা স্ট্যাগন্যান্ট (অচল) হয়ে আছে। আপনারা যেভাবে দেখছেন, আমরাও সেভাবে দেখছি। তবে ঠিক করার জন্য কাজ চলছে। কেন এমনটা হয়েছে, সেই কারণও আমাদের কাছে পৌঁছায়নি।’
এ বিষয়ে কথা হয় সংবাদমাধ্যমটির কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে। তবে তারাও জানাতে পারেননি কেন এমন হলো এবং সবকিছু কবে স্বাভাবিক হবে সে তথ্য। তারা জানান, এমন অবস্থা তাদের জন্য বেদনাদায়ক।
রাজনীতি বিশ্লেষক ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিঙ্গুইশড প্রফেসর আলী রিয়াজ ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে বিডিনিউজের দেয়া ফেসবুক পোস্টটি সংযোজন করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘প্রায় দুই দিন ধরে বিডিনিউজ২৪-এর ওয়েবসাইট অকার্যকর হয়ে আছে, ওয়েবসাইটে প্রকাশক এবং সম্পাদকের নাম ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এই সাইটের সব সংবাদ, লেখা উধাও হয়ে গেছে। কিন্তু এর কোনো ব্যাখ্যা ওই সাইটের কর্মকর্তারা দেননি। সোশ্যাল মিডিয়াতে তারা যে তথ্য জানিয়েছেন তাতে বলা হয়েছেÑ ‘আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এমন সব কারণে আমাদের সংবাদ পোর্টালে পাঠকদের নিয়মিত সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইছি। আমরা পাঠকদের আশ্বস্ত করছি, ওয়েবসাইটটি ফিরিয়ে আনতে আমাদের লড়াই অব্যাহত রয়েছে। আপাতত সংবাদ পেতে চোখ রাখুন আমাদের ফেইসবুক, ইন্সটাগ্রাম, এক্স পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে’। এই ব্যাখ্যা থেকে কী ধরনের পরিস্থিতি যা তাদের ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ তা বোঝা যায় না। এটা সহজেই অনুমেয় যে, এই পরিস্থিতি কারিগরি নয় কেননা তা হলে কর্তৃপক্ষ তা পাঠকদের অবহিত করতেন। তদুপরি কারিগরি, এমনকি হ্যাক করা হয়ে থাকলেও ‘ওয়েব সাইট ফিরিয়ে আনতে’ ‘লড়াই’ করার প্রয়োজন হতো না। লড়াই শব্দের ব্যবহার ক্ষমতাশালী প্রতিপক্ষের দিকেই ইঙ্গিত দেয়, এতটা শক্তিশালী যা একটি গণমাধ্যমের চেয়েও বেশি।’
এমন মন্তব্যে বিভিন্ন বিষয় সামনে চলে আসে। ওঠে নানা প্রশ্ন। যা সর্বোপরি বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। তবে পোস্টের আরেক অংশে আলী রিয়াজ লিখেছেন, “বিডিনিউজ২৪-এ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব সম্পর্কিত চন্দন নন্দীর একটি বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছিল। এরইমধ্যে ওই লেখাটি ভারতীয় একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে এবং সেখানে দাবি করা হয়েছে যে, বিডিনিউজ২৪ ওয়েবসাইটটি ভারত এবং বাংলাদেশে ‘ব্লক করে দেয়া হয়েছে’। তবে এই ধরনের তথ্যের বিষয়ে বিডিনিউজ২৪ কোনো রকমের প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।”