মঙ্গলবার   ১৮ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৪ ১৪৩২   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

যা যা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আসছে!

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৩৯ এএম, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ শনিবার



বিশেষ প্রতিনিধি -
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আরও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার গুঞ্জন উঠেছে। নির্বাচনের আগমুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে বলে খবর দিয়েছে খোদ সরকার সমর্থক সংবাদভিত্তিক একটি ওয়েবপোর্টাল। এরআগে সরকার সমর্থক একটি দৈনিক পত্রিকায় নতুন নিষেধাজ্ঞার খবর প্রকাশের পর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আগাম ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসে। এরফলে সরকার সমর্থক ও নিউজ পোর্টালের এবারের খবরটিও তাই সরকারের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এতদিন বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কথা বলেছে। যুক্তরাষ্ট্র চায় যেকোনো মূল্যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং এই আশাবাদ ব্যক্ত করে এজন্য বাংলাদেশকে চাপ দিয়েছে তারা। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইস্যু। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচারিক কার্যক্রম ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। সামনের দিনগুলোতে এই বিচারিক কার্যক্রম দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিচার বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা, দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে দায়িত্বে থাকা একাধিক কর্মকর্তা এবং সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে এমন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। সরকারের কাছে এ খবর রয়েছে। এছাড়াও সরকারের একাধিক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।
ভিসা নিষেধাজ্ঞায় একমাত্র বিষয় না, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অন্য ধরনের চাপও প্রয়োগ করতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে এখন বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই নিরাপত্তা সম্মেলনেও আগামী নির্বাচনের প্রসঙ্গটি সামনে চলে এসেছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এই নিরাপত্তা সংলাপে ড. ইউনূস প্রসঙ্গটি উত্থাপিত হয়নি। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে যে বাংলাদেশের নির্বাচনে ড. ইউনূসই সরকারের মাথাব্যথা এবং আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উপর দৃশ্যমান চাপ প্রয়োগ করবে।
বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক অস্বস্তি এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। গত দু’বছর ধরে বাংলাদেশে নির্বাচন, আইনের শাসন, মানবাধিকার ইত্যাদি নিয়ে সোচ্চার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সাম্প্রতিক সময়ে এর সাথে যুক্ত হয়েছে ড. ইউনূস ইস্যু। শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে বিচার থেকে দায়মুক্ত দেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন মরিয়া ভূমিকা পালন করেছে। ইতিমধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, সাবেক ফার্স্ট লেডি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন সহ ১৮৩ জন ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিচারিক হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। এই অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন ১৮৩ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। এদের মধ্যে ১০০ জনের মতো নোবেল জয়ী ব্যক্তিত্ব রয়েছেন।
শুধু এটিই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ড. ইউনূসের বিচারিক প্রক্রিয়া পুরোপুরি নজর রাখছেন এবং এই বিচারিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করা হচ্ছে কিনা সেই বিষয় গুলোর দিকে লক্ষ্য রাখছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ড. ইউনূস বা অবাধ সুষ্ঠ নির্বাচন দুটি ইস্যু একটি অন্যটির পরিপূরক নয়। বরং দুটি ইস্যু পৃথক। দুটি ইস্যুতেই দায় মুক্তি দিলে নির্বাচনের বিষয়টি উপেক্ষা করবে। কিন্তু বিভিন্ন কূটনৈতিক প্রাপ্ত খবরে নিশ্চিত যাওয়া গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সে রকম অবস্থানে যাবে না। বরং যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ভাবে দুটি বিষয়ে তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই দুটি অবস্থান বাস্তবায়নের জন্য কি কি করতে পারে?
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশে আধিপত্য বিস্তার এবং সেই দেশটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অতীতে যে ধরনের পদক্ষেপগুলো নিয়েছে বাংলাদেশেও ধাপে ধাপে সেই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নিয়ে কি কি করতে পারে তার একটি ধারণা পাওয়া গেছে বিভিন্ন কূটনৈতিক মহলের সঙ্গে আলাপ করে।
১. ভিসা নিষেধাজ্ঞা: ভিসা নিষেধাজ্ঞার কথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে। ২৪ মে ঘোষিত নতুন ভিসা নীতি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এখানে শুধু নির্বাচনের বিষয় নয়, নির্বাচনের বাইরেও মানবাধিকার বা অন্যান্য বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। গতকাল জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ইউনূসের ওপর অবিচার করা হচ্ছে বলে বিবৃতি দিয়েছেন। এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এতে সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত হলো ইউনূসের ইসুটিকে মানবাধিকার ইস্যু হিসেবেই দেখছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর সেটি যদি হয় তাহলে ইউনূস ইস্যুতেও অনেকের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২. সামরিক অর্থায়নে টান: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংলাপ চলছে। গত মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দুই দেশের নবম নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই সংলাপে নেতৃত্ব দেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিক সামরিক বিষয়ক উপ সহকারী মন্ত্রী মিরা রেজনিক যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই বৈঠকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে এবং এই সামরিক সহায়তাগুলোর ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কঠোর নীতিমালা আরোপ করতে পারে বা সহায়তা হ্রাস বা বন্ধ করতে পারে।
৩. অর্থনৈতিক চাপ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারির আগে অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ধাপে ধাপে অর্থনীতির ওপর চাপ প্রয়োগ করে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও অর্থনীতিতে সংকোচন নীতি করে ধাপে ধাপে অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধির কৌশল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছে।
৪. বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারে। এটি চাপ প্রয়োগের এক ধরনের কৌশল বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।
৫. অন্যান্য দেশগুলোকেও বাংলাদেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করার জন্য চাপ প্রয়োগ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র দেশগুলোকেও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করা, সংকোচন করার ক্ষেত্রে চাপ দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন এবং ড. ইউনূসকে নিয়ে পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে এ ধরনের পদক্ষেপগুলো নিতে পারে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র কখন কি ধরনের পদক্ষেপ নেবে তা তাদের নিজস্ব কূটনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে নিবে বলে বিভিন্ন মহল মনে করছেন। তবে নতুন যে নিষেধাজ্ঞা আসছে সেই আলোচনা বেশ জোরেশোরেই চলছে।