নির্বাচনের আগে নজরদারিতে পুলিশ ও ব্যবসায়ীরা
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:৫৫ এএম, ১২ আগস্ট ২০২৩ শনিবার
দুর্নীতিবাজদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা
আজকাল রিপোর্ট -
বাংলাদেশে নির্বাচনের আগেই র্যাবের মতো পুলিশের ওপর স্যাংশন আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মার্কিন পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ প্রশাসন কি ভূমিকা নেয় তা গুরুত্বের সাথে নজরে রাখছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতে পুলিশকে ব্যবহারের অভিযোগ সরকারি দল ছাড়া অন্য সকল দলই করে আসছে।
জানা গেছে, পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সম্প্রতি ঢাকা সফরকারী মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বৈশ্বিক দূর্নীতি বিরোধী সমন্বয়কারী রিচার্ড নেফিউরের কাছে ভিডিও ডকুমেন্টসসহ তুলে ধরেছে বিএনপি। পুলিশ বাহিনীর দূর্নীতির ক্ষতিয়ানও তুলে ধরেছে তারা। এ’ছাড়া গত ১৫ দিনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতায় পুলিশের ভূিমকাকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। ঢাকায় অবস্থানকালে নেফিউর অর্ধ শতাধিক ব্যক্তির সাথে আলোচনা করেছেন। যাদের বক্তব্যে পুলিশ ও প্রশাসনের দূর্নীতি এবং পক্ষপাতমূলক আচরণকে রাজনৈতিক সহাবস্থানের পথে বড় বাধা বলে উল্লেখ করা হয়।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সাথে আলোচনায় নেফিউর সরাসরি এ দুটি সংস্থার কথা উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি তিনি রাজনীতিতে অর্থায়নে র্দুবৃত্তদের ভূমিকা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ব্যাখা করেন। পররাষ্ট্র সচিব পরে সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশনকে দুর্নীতি দমনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে। দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশের ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসার ওপরে স্যাংশন আসতে পারে। এতে যুক্তরাষ্ট্র পাশে টানতে পারে কানাডা ও যুক্তরাজ্যকেও।
উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার এই তিনটি দেশ মিলিতভাবে লেবানিজ কিছু ব্যবসায়ীর ওপর স্যাংশন আরোপ করেছে। লেবানন সেন্ট্রাল ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর রিয়াদ সালামাহ ও তার চার সহযোগী এই স্যাংশনের আওতায় পড়েছেন। উল্লেখ্য বাংলাদেশ সফরকারি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বৈশ্বিক দূনীতি বিরোধী এই সমন্বয়কারী রিচার্ড নেফিউর লেবাননের দূর্নীতির ওপর গত তিনটি মাস ধরে কাজ করেছেন।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর গত ৯ জুলাই বেলারুশের ১০১ জনের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এদের মধ্যে রাজনীতিবিদ ও কয়েকজন বিচারপতিও রয়েছেন। সেদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
ঢাকায় মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান, সরকার বিদেশিদের চাপের মধ্যে আছে কিনা। জবাবে তিনি বলেন, বিদেশীদের চাপ নয়। বিবেকের চাপে আছি।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ঢাকায় অনেকদিন ধরে পশ্চিমা কূটনীতিকরা সরব থাকলেও এতদিন অনেকটাই চুপ ছিলো প্রতিবেশী ভারত। সেই নীরবতা ভেঙ্গে গত ৩ আগষ্ট বৃহস্পতিবার দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, বাংলাদেশের নির্বাচন কিভাবে হবে সেটি দেশটির জনগণই ঠিক করবে। একই সঙ্গে ‘শান্তি থাকবে, সহিংসতা থাকবে না এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে’ এমন আশা ব্যক্ত করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে নির্ধারণ করবে নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সেভাবেই হওয়া উচিত। নেফিউরের ক্রমাগত বৈঠক, পররাষ্ট্র সচিব ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মন্তব্য এবং ভারতীয় পররাষ্ট্র দফতরের বক্তব্যের পর ঢাকার রাজনীতিতে নানা আলোচনা স্থান পাচ্ছে। সরকার সমর্থিত একটি টেলিভিশনের টক শো’তে একজন আলোচক বলেছেন, পুলিশের ওপর মার্কিন স্যাংশন জারি হলে তিনি অবাক হবেন না।
বাংলাদেশে নির্বাচন মনিটরিং করে এমন একটি সংস্থার প্রধানের কাছে সাপ্তাহিক আজকাল-এর পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচনে পুলিশ ও প্রশাসনের ভুমিকা নিরপেক্ষ রাখা সম্ভব কিনা তা জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, নির্বাচনটি কোন ধরনের সরকার বা কার অধীনে হবে বিষয়টি নির্ভও করছে তার ওপর। সরকারের ধরনই বলে দেবে কোন সংস্থার ভূমিকা কি হবে। আর বিদেশিদের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, তারা নির্বাচনে সরাসরি সম্পৃক্ত হবে না বা তা হবার সুযোগও নেই। তবে পুলিশ বা প্রশাসনের ভূমিকা যদি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে ব্যাপারে বড় বাধা হিসেবে সামনে চলে আসে তবে তারা নির্ঘাত স্যাংশন খাবে।
এদিকে দূর্নীতির বিষয়টিকে সামনে এনে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকদের ওপর স্যাংশন দেবার বিষয়টি মার্কিন প্রশাসনে গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। মার্কিন দূর্নীতি দমন বিভাগের তথ্যানুসারে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হয় মূলত ১১টি দেশে। এই দেশগুলো হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, কাতার, কানাডা, সাইপ্রাস, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র। তবে এখন সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ আসা কমে গেছে অস্বাভাবিকভাবে। এই দুটি দেশে পাচারকৃত অর্থ জব্দ হতে পারে এমন শংকা থেকেই এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে পাচারকারীরা তাদের অর্থ যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ড থেকে সরিয়ে ফেলা শুরু করে। যে তিনটি দেশে যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ড থেকে বাংলাদেশীদের অর্থ সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে সেগুলি হচ্ছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া।
