সংলাপের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র
আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে : আজরা
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৬:৩০ পিএম, ১৪ জুলাই ২০২৩ শুক্রবার
আজকাল ডেস্ক -
বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সংলাপ চায় বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সাথে বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সবাই সংলাপের পক্ষে রয়েছি; কিন্তু এতে আমাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই।
দীর্ঘ দিনের অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র তার ভূমিকা রাখতে চায় বলে উল্লেখ করেন উজরা জেয়া। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি সরকারের একাধিক মন্ত্রী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। আমরা চাই, সাংবাদিকরা ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে অবাধে সংবাদ প্রচার করতে পারবে। বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, মানবপাচার রোধের বিষয়ে আমরা সহযোগিতা করব। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও সমাবেশ যেন অবাধে করা যায়, সেটিই আমাদের চাওয়া। সুশীলসমাজ যেন অবাধে কথা বলতে পারে সেটি আমরা চাই। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করছে একটি সমৃদ্ধশালী দেশের ভবিষ্যৎ। নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের অবাধ অংশগ্রহণের ওপর সেটি নির্ভর করছে। তিনি বলেন, বুধবার বাংলাদেশে দুই রাজনৈতিক দল যে র্যালি করেছে সেটি আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি এবং সেখানে কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। এটি একটি ভালো অনুশীলন এবং আমরা এটির পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক আরো গভীর করতে চায় জানিয়ে উজরা বলেন, পাঁচ দশক ধরে আমাদের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক আরো গভীর করতে চায়। আমাদের সহযোগিতার বিষয়গুলো হচ্ছে জলবায়ু, উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা। এর মধ্যে বোঝা যায় আমাদের সম্পর্ক কত মজবুত ও দৃঢ় এবং এ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা রয়েছে।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আমরা বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাই। তারা এত বিশালসংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। বুধবার আমি কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছি। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র হোস্ট কমিউনিটি এবং রোহিঙ্গাদের জন্য ২.১ বিলিয়ন ডলার মানবিক সহায়তা দিয়েছে।
বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা এবং রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন করে ৭৪ মিলিয়ন ডলার অর্থসহায়তা ঘোষণা করেন উজরা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ও মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য আমি ৭৪ মিলিয়ন ডলার ঘোষণা করছি। রোহিঙ্গাদের অর্থায়নে অন্যান্য দাতা দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বর্তমান পরিস্থিতি অনুকূলে নয় বলে মতপ্রকাশ করেন উজরা। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন যেন স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণ হয়, সেটিকে আমরা সমর্থন করি। কিন্তু বর্তমানে প্রত্যাবাসনের মতো পরিস্থিতি নেই।
বৈঠকে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং দেশটির আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার এশিয়া দফতরের উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলী কৌর উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত মে মাসে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশীদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই ভিসানীতি ঘোষণার পর দেশটির জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে প্রথম ঢাকা সফর করছেন উজরা জেয়া। চার দিনের সফরে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি ঢাকায় পৌঁছান। বুধবার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে এসে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে একের পর এক মন্ত্রীদের সাথে বৈঠক করেন তিনি। গতকাল সকালে প্রথমে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন উজরা জেয়াসহ প্রতিনিধিরা। পরে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে বৈঠক করেন তারা। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে আজ শুক্রবার ঢাকা ছাড়বে মার্কিন প্রতিনিধিদলটি।
ইউএনবি জানায়, প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সাথে বৈঠকের পর আন্ডার সেক্রেটারি জেয়া টুইটে লেখেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করি এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা করি।’ আন্ডার সেক্রেটারি এবং প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশের উদার আতিথেয়তা এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থনের অব্যাহত প্রয়োজনীয়তার বিষয়েও আলোচনা করেন। তিনি আরো লেখেন, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং বাংলাদেশের ওই অঞ্চলের জনগণকে সহায়তা করতে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি দিতে পেরে গর্বিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
আন্ডার সেক্রেটারি আরো লিখেছেন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশে চলমান সঙ্কট মোকাবেলায় ৭৪ মিলিয়নেরও বেশি সহায়তা দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এবং স্থানীয়দের সহায়তার জন্য ৬১ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে। একইসাথে অন্য দাতা ও সম্ভাব্য দাতাদের অব্যাহত সমর্থনের আহ্বান জানান তিনি।
