বুধবার   ১৯ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৪ ১৪৩২   ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী একই সেলে!

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:১৪ এএম, ১১ জুলাই ২০২৩ মঙ্গলবার

দীর্ঘদিন ধরেই কারাগারে আটক আছেন আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী সোহেল ওরফে ফ্রিডম সোহেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিও তিনি। তার দাপটে রাজধানীর খিলগাও, মতিঝিলসহ আশপাশ এলাকায় কাপতো এক সময়। চাঁদাবাজি, জমি দখল ও খুনাখুনি ছিল তার গ্রুপের নেশা ও পেশা। আর সেই দাপট কারাগারের ভেতরেও দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার মতই আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জাকির খান নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশ এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক। দীর্ঘদিন বিদেশে পালিয়ে ছিলেন। দেশে আসার পর ধরা পড়েন র‌্যাবের জালে। নারায়ণগঞ্জ কারাগারে ছিলেন এতদিন। দুইদিন আগে জাকির খানকে আনা হয় কাশিমপুর কারাগারে।

অভিযোগ উঠেছে, অর্থের বিনিময়ে জাকির খান ও ফ্রিডম সোহেল একই সেলে থাকছেন। বিষয়টি  নিশ্চিত করেছে কারাগারের একটি সূত্র। তবে কারা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছে, এই রকম হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। ফ্রিডম সোহেলকে আলাদাভাবেই রাখা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা  জানায়, প্রায় একযুগ বেশি সময় ধরে কারাগারে আটক আছেন ফ্রিডম সোহেল। এর আগে সোহেল আন্ডারওয়ার্ল্ড কাঁপিয়ে আসছিলেন। শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহমেদ ওরফে ফ্রিডম মানিক, রাশু, জিসান ছিল গ্রুপের অন্যতম সদস্য। ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহম্মেদ মানিক আত্মগোপন ও ফ্রিডম সোহেল কারাগারে থাকলেও তার সহযোগীরা এলাকায় সক্রিয় আছেন। সহযোগীরা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে বলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথ্য আছে। মানিকের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসাবেই সোহেল আন্ডারওয়ার্ল্ডে পরিচিত। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবনে হামলার ঘটনায় হওয়া মামলার অন্যতম আসামি সোহেল।

গ্রুপের সদস্যরা শাহজাহানপুর, মতিঝিল, পল্টন, কমলাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, ডিশ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ ও টেন্ডারের নিয়ন্ত্রণ করছে গোপনে। আর জাকির খান নারায়ণগঞ্জ এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী। তিনি নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী সাব্বির আলম হত্যা মামলার আসামি ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে থাইল্যান্ডে পলাতক ছিলেন। পরিচয় গোপন করে গত এক বছর সপরিবার ঢাকার বারিধারা এলাকায় থাকতেন। ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর তিনি নারায়ণগঞ্জ কারাগারে ছিলেন। গত শনিবার তাকে কাশিমপুর কারাগারে-৪ আনা হয়। রাখা হয় আমদানি সেলে। গতকাল সোমবার সকালে তাকে সৈকত ভবনের ৩য় তলায় ১২ নম্বর সেলে রাখা হয়। এই সেলেই আছেন ফ্রিডম সোহেল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাশিমপুর কারাগারের একরক্ষী গতকাল   বলেন, কোন সেলে আসামি রাখা হয় তা কিছু অর্থের বিনিময়ে করা হয় তা সত্য। আর এটি হচ্ছে অন্য কৌশলে। আমদানী সেলে যখনই আসামি আনা হয় তখন সেলে রাখা নিয়ে চলে আলোচনা। সব আসামির ক্ষেত্রেই একই নিয়ম। ফ্রিডম সোহেল দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের কারাগারে আছেন। সে উচ্চ মাপের সন্ত্রাসী। জাকির খানও বড় সন্ত্রাসী। শনিবার তাকে এই কারাগারে আনা হয়। আজ (গতকাল) তাকে ফ্রিডম সোহেল যে সেলে রাখা হয়েছে ওই সেলেই তাকে আপাতত রাখা হয়েছে। তবে বিষয়টি ঊর্ধ্বতনরা অবহিত হয়েছেন। এখন তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবেন।

তবে এই কারাগারে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা কথা বলেন দেশ রূপান্তরের সঙ্গে। তিনি তার পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি। তিনি বলেন, ফ্রিডম সোহেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তাকে আলাদা সেলে রাখা হয়েছে। জাকির খানকে কয়েকদিন আগে আনা হয় এখানে। তবে ফ্রিডম সোহেল যে সেলে রাখা হয়েছে জাকির খানকে ওই সেলে রাখা হয়নি। অর্থের বিনিময়ে সেলে রাখা হয় তা একদম মিথ্যা কথা। আমাদের কারাগারে এই ধরনের কিছু হওয়ার সুযোগই নেই।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৯ অক্টোবর ১৯৮৯ সালের আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার দায়ে ফ্রিডম পার্টির ১১ জনকে ২০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। আদালত প্রত্যেক আসামিকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। দোষী প্রমাণিত না হওয়ায় একজনকে খালাস দেয়া হয়। সাজপ্রাপ্ত আসামিরা হচ্ছেন- সোহেল ওরফে ফ্রিডম সোহেল, গোলাম সারোয়ার মামুন, জজ মিয়া, সৈয়দ নাজমুল মাকসুদ মুরাদ, মিজানুর রহমান, খন্দকার আমীরুল ইসলাম, মোহাম্মদ শাহজাহান ওরফে বালু, কাজী ইমাম হোসেন, লে. কর্নেল (অব) খন্দকার আব্দুর রশীদ, জাফর আহমেদ মানিক অন্যতম। ২০০৯ সালের ৫ জুলাই ১৬ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়।

এদিকে, জাকির খানের বিরুদ্ধে চারটি হত্যাসহ অন্তত অর্ধশত মামলা রয়েছে। এসব মামলায় বিভিন্ন সময় কারাগারেও ছিলেন। কিন্তু কারাগার থেকে মুক্তির পর তিনি আবার দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠেন। তিনি নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ এলাকায় বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী ও মাদকের সামা্রজ্য গড়ে তোলেন। দেওভোগ এলাকার সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে হত্যা করে শহরে ত্রাস সৃষ্টি করেন। ২০০৩ সালে সাব্বির আলম হত্যাকাণ্ডের পর তিনি দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান। এর পর থেকেই গ্রেপ্তার এড়াতে জাকির দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন। ১৯৯৪ সালে জাকিরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসমূলক অপরাধ দমন বিশেষ আইনে মামলা করা হয়। ওই মামলায় তার ১৭ বছরের সাজা হয়। উচ্চ আদালতে সেই সাজা কমে আট বছর হয়। - দেশ রূপান্তর