বুধবার   ১৯ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৪ ১৪৩২   ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

বাংলাদেশে সাংবাদিককে পিটিয়ে হত্যা

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:৫৬ এএম, ১৭ জুন ২০২৩ শনিবার


 
ঢাকা প্রতিনিধি -
বাংলাদেশের জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় হামলা চালিয়ে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত বুধবার রাত ১০টার দিকে বকশীগঞ্জ পৌর টিঅ্যান্ডটি রোডে পাটহাটি মোড়ে সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হন নাদিম। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
গোলাম রাব্বানী নাদিম বাংলা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি এবং ৭১ টিভির বকশীগঞ্জ উপজেলার সংবাদ সংগ্রাহক। তিনি বকশীগঞ্জ কাছারিপাড়া এলাকার অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য আব্দুল করিমের ছেলে।
স্বজন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নাদিম বুধবার রাত ৯টার দিকে ল্যাপটপ নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে বকশীগঞ্জ বাজারের দিকে যান। রাত ১০টার দিকে বকশীগঞ্জ বাজারের পাটহাটি মোড়ে ১০/১২ জনের একটি সন্ত্রাসীদল তাঁর ওপর হামলা চালায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন।
হামলাকারীরা তাঁকে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। রাতেই তাঁকে জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অবস্থার আরো অবনতি হওয়ায় গতকাল ভোরে তাঁকে মমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একদল লোক নাদিমকে মাথায়-মুখে কিল-ঘুষি মারতে মারতে নিয়ে যাচ্ছে। পরে তাঁকে রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাঁর মুখে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বকশীগঞ্জ পৌরসভার গোয়ালগাঁও কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি পদে কর্মরত। মনিরা অভিযোগ করে বলেন, ‘বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম বাবুর কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়ে আমার স্বামী সংবাদ লিখেছিলেন।
সংবাদটিকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান বাবু ও তাঁর লোকজন আমার স্বামীর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন এবং তাঁকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। সেই সংবাদের কারণে বাবু আমার স্বামীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছিলেন। বুধবার আদালত মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন। একই দিন রাত ১০টার দিকে বাবু তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে আমার স্বামীর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালান।’
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগ করেও মাহমুদুল আলম বাবুকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
নাদিম-মনিরার সংসারে তিন সন্তানের মধ্যে ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন রিফাত স্নাতকে, মেয়ে রাব্বিলা উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে এবং কনিষ্ঠ মেয়ে পাপ্পু তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। মনিরা বলেন, ‘আমার স্বামীর মৃত্যুতে আমি তিন সন্তান নিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আমার স্বামীর হত্যাকারীদের আমি ফাঁসি চাই।’ এ ঘটনায় তিনি বকশীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করবেন বলে জানান।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা: সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম বাবুর ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে সাংবাদিক নাদিম সংবাদ লেখার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচিত্র পোস্ট দেন। এতে বাবু ক্ষুব্ধ হয়ে নাদিমসহ তিন সাংবাদিককে বিবাদী করে ময়মনসিংহ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছিলেন। গত বুধবার আদালতের আদেশে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। এদিন রাতে বকশীগঞ্জ বাজারের পাটহাটি মোড়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন নাদিম।
বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাবুল তালুকদার বলেন, ‘সন্ত্রাসী হামলায় সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের মৃত্যুতে আমি খুবই মর্মাহত। ঘটনাটি খুবই ঘৃণ্য ও নিন্দনীয়। সাংবাদিক নাদিম আমার খুব কাছের ছিল।’ এ ঘটনার সঙ্গে সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম বাবুর জড়িত থাকা নিয়ে সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে আমাদের দলের কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বকশীগঞ্জ থানার ওসি মো. সোহেল রানা বলেন, সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের ওপর সন্ত্রাসী হামলার পর ঘটনাস্থল থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেটা দেখে আসামিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান চলছে।