চীনের বক্তব্যে খুশি নয় ঢাকা
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:২৮ এএম, ১৭ জুন ২০২৩ শনিবার
আজকাল রিপোর্ট -
বাংলাদেশের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক মনোভাব বিরূপ থাকলেও দেশটি পুরোপুরি চীনের বলয়ে যোগ দিচ্ছে না। বরং ঢাকার পররাষ্ট্র নীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরীতা নয়’ অপরিবর্তিতই থাকছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কড়া সমালোচনা করার পর চীন বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। বেইজিংয়ের মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থানের প্রতি চীন সমর্থন জানিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখন্ডতা বজায় রাখতেও চীন সার্বিক সহায়তা করবে। কারণ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য বিশে^র সকল উন্নয়নশীল দেশের মনের কথা। বুধবার বেইজিংয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এসব কথা বলেন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বক্তব্যে মোটেও খুশি নয় বাংলাদেশ। চীনের বক্তব্যের পরের দিন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেসবুকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, সার্বভৌম অধিকারের প্রশ্নে সবাই সম্মান দেখাবে, সেটাই বাংলাদেশ চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য সম্পর্কে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বক্তব্য সরকারের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলতে চায়, যে কোনও আত্মমর্যাদাশীল দেশের মতো বাংলাদেশও নিজেদের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সার্বভৌমত্বের চেতনার ভিত্তিতে সে বিষয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া রূপকল্প ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্য বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ তার সিদ্ধান্ত নেয়।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরীতা নয়’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেওয়া এই মূলমন্ত্রের ভিত্তিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক নীতি গ্রহণের যে সার্বভৌম অধিকার, তার প্রতি সব পক্ষ সম্মান প্রদর্শন করবে বলে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ওপর বাইডেন প্রশাসনের ক্রমাগত চাপ বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের কৌশল বলে অনেকে মনে করেন। বাইডেনের দুই দফার গণতন্ত্র সম্মেলনের কোনওটিতেই আমন্ত্রণ পায়নি বাংলাদেশ। মানবাধিকার লংঘনের দায়ে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ ভিসানীতি আরোপ করে ওয়াশিংটন কার্যত শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি নাখোশ ভাব প্রকাশ করেছে। এতে করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ভিসা না দিলে ২০ ঘন্টার জার্নি করে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে ওই দেশে যাওয়ার কোনও ইচ্ছা তাঁর নেই। পৃথিবীর অন্য দেশ কিংবা অন্য মহাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করবেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার কড়া সমালোচনার সুযোগ নিয়েছে চীন। চীনের মুখপাত্র এমন মন্তব্য করেছেন যেন শেখ হাসিনা চীনের বলয়ে যোগ দিয়েছেন যা যুক্তরাষ্ট্রকে আরও ক্ষুব্ধ করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক বিদ্যমান। তবে বাংলাদেশের ওপর ভর করে তা পরিচালনা করা পছন্দ নয় ঢাকার। এর আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ঢাকায় নিখোঁজ একজন বিএনপি নেতার বাসায় গেলে তা নিয়ে বেশ পানি ঘোলা হয়। আর ওই ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে নেমেছিল রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তখন মন্তব্য করেছিলেন যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে যুক্তরাষ্ট্র। তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া উভয়কে সতর্ক করেছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন তখন বলেছিলেন যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কারও কোনও মন্তব্য করার প্রয়োজন নেই। ঢাকায় বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া ও চীন এমন ধরনের বার্তা দেবার চেষ্টা করছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে বাংলাদেশ তাদের বলয়ভুক্ত হয়েছে। এটা মোটেও সত্য নয়। বরং বাংলাদেশ একটি ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি মেনে চলছে।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা সবার চোখে পড়ছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিঙ্কেন গত ২৪ মে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসানীতি ঘোষণা করে বলেছেন, যারাই ভোটদানে বাধা দেবে তাদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে, মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের বিভিন্ন গ্রুপ ক্রমাগতভাবে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে চাপ সৃষ্টির জন্যে বাইডেন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্যও একই ধরনের মতামত দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধানের কাছে চিঠি লিখেছেন।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের তৎপরতা নিয়েও গুলশান ও বারিধারায় বেশ কানাঘুষা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী দেশগুলোর কূটনীতিকরা বলছেন, শেখ হাসিনার সরকারের বদলে একটি অন্তবর্তী সরকার বসানোর চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। কাজটা চলছে পর্দার অন্তরালে। যুক্তরাষ্ট্রের সুস্পষ্ট প্রস্তাব কী সে বিষয়টি যদিও ওয়াশিংটন প্রকাশ্যে আনেনি। তবে দেশে ও বিদেশে এ বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। অন্তবর্তী সরকারের নামে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে কতোটা গ্রহণযোগ্য হচ্ছে তাও প্রশ্ন সাপেক্ষ। তবে শেখ হাসিনার সরকার ওয়াশিংটনের প্রস্তাবে খুশি নয়।
