বুধবার   ১৯ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৪ ১৪৩২   ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

আলোচনায় পাঁচ রাজনীতিক সংলাপের নামে নাটকীয়তা

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:৩২ এএম, ১০ জুন ২০২৩ শনিবার

 

   
বিশেষ প্রতিনিধি, নিউইয়র্ক ও ঢাকা
শেখ হাসিনার বর্তমান আমলের পুরোটাই নিষ্ক্রিয় ছিলেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা আমির হোসেন আমু। হঠাৎ তিনি সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আলোচিত হয়ে ওঠেন। আমু বলেন, ২০১৩ সালে জাতিসংঘের প্রতিনিধি অস্কার ফার্নান্দেস তারানকো আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে মধ্যস্থতা করতে এসেছিলেন। এবারও জাতিসংঘ প্রতিনিধি পাঠালে তাঁর সামনে বসে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। এর পরের দিন ৭ জুন ভিন্ন সুরে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এমন কোনও পরিস্থিতি নেই যে, জাতিসংঘের মধ্যস্থতা লাগবে। সুর পাল্টান আমু নিজেও। ইউটার্ন নিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কোনও মামার বাড়ি নয় যে, এখানে বিএনপিকে দাওয়াত খেতে আসতে হবে! আলোচনা নয়; বিএনপিকে ভোটের মাধ্যমে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সংবিধানে অধীনে নির্বাচন মেনে নিলে সংলাপের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ইতিবাচক। অপরদিকে, বিএনপি নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি এবং বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নামে ৩৫ লাখ রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করা না হলে বরফ গলবে না।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরও আলোচিত চারটি নাম হচ্ছে তোফায়েল আহমেদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেনন। তাদের গতিবিধির ভিত্তিতে রাজনীতির পূর্বাভাস পাওয়া যায়। ইত্তেফাকের কর্ণধার ও জাতীয় পার্টির একাংশের নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। মার্কিন বলয়ের এক ঘনিষ্ঠজন তিনি। তোফায়েল আহমেদ আওয়ামী লীগের জাঁদরেল নেতা। রাজনীতির নাড়িনক্ষত্র তাঁর মুঠোয়। ২০০৮ সালে ১/১১-এর পর থেকে এক রকম কোনঠাসা এই বর্ষিয়ান রাজনীতিক। রাজনীতির বর্তমান এই ডামাডোলে একেবারেই তিনি নীরব। জাসদের নেতা হিসেবে পরিচিত হলেও রাজনীতির মাঠে অনেক ঘটনার নায়ক হাসানুল হক ইনু। শেখ হাসিনার সরকারের গেল মেয়াদে তথ্যমন্ত্রী হিসেবে সরকারের মুখপাত্রের কাজ করলেও বর্তমান মেয়াদে ছিঁটকে পড়েছেন। নীরব রয়েছেন বেশ কিছুদিন ধরেই। তাঁর এই নীরবতাকে রাজনৈতিক বোদ্ধারা ভিন্ন চোখে দেখছেন। বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর গোপন বৈঠক হয়েছে বলে ঢাকায় গুজব রয়েছে। তবে তারা কেউই এ ব্যাপারে মুখ খুলছেন না। ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেননের গতিবিধিও লক্ষ্য করার মতো। পর্যবেক্ষক মহল এদের সবারই সাম্প্রতিক তৎপরতাকে নিরীক্ষণ করছেন। বাংলাদেশের মানুষ রাজনীতির অন্দরের খেলাটি দেখার অপেক্ষায় রয়েছে।
এদিকে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে সরকারি দল আওয়ামী লীগে। এক ধরনের চাপের মধ্যে থাকার কথা স্বীকারও করছেন তারা। বক্তৃতা ও বিবৃতিতে তারা সমন্বয় রাখতে পারছেন না। আইনমন্ত্রী তো নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের কথা বলে বিপদেই পড়েছিলেন। সংবাদটি প্রচারিত হবার ২৯ মিনিটের মাথায় তা সংশোধন করে ব্যাখ্যা দেয়া হয়। বলা হয়, আইনমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের কথা বোঝাতে চাননি।
ওয়াশিংটনের দিকে সতর্ক নজর: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে বিশেষ নজর রাখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী বিএনপি। বাইডেন প্রশাসনের দ্বৈতনীতি সতর্ক বার্তা দিচ্ছে। পাকিস্তানে কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র কোনও মন্তব্য করছে না। সেখানে বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চলছে। এসব বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের প্রশ্ন করা হলে তারা বলছেন, তারা প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করবেন না। ইসলামাবাদে তাদের বন্ধু-প্রতীম সরকারের সঙ্গে গোপনে তাদের মতামত জানাবেন। বাংলাদেশে সেই তুলনায় পরিস্থিতি এতটা খারাপ নয়। তবুও প্রকাশ্যে নানা মন্তব্য করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। ওয়াশিংটনের এই দ্বৈতনীতি কেন সেটাই প্রশ্ন। এভাবে বাইডেন প্রশাসন ভূ-রাজনীতি এবং কৌশলগত স্বার্থ কতটা হাসিল করতে পারবে? মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, বিএনপি’র প্রতি তাদের কোনও পক্ষপাত নেই। তাদের ভিসানীতি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নয়। যুক্তরাষ্ট্র তবে কি চায়?
বাংলাদেশ কোন পথে: শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশে ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করেছে। বিশ^ব্যাংকের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে পদ্মাসেতু নির্মাণ করেছে। মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম টানেল হচ্ছে কর্ণফুলী নদীর নীচ দিয়ে। উন্নয়নের ফিরিস্তি অনেক লম্বা। কিন্তু এই সকল সাফল্য ম্লান হয়ে যাচ্ছে সুশাসনের অভাব, দুর্নীতি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব, মানবাধিকারের খারাপ রেকর্ড এবং গণতন্ত্রের চর্চায় দুর্বলতার কারণে। বাইডেন প্রশাসন এসব বিষয় নিয়ে খুব সোচ্চার। পাশাপাশি ভূ-রাজনীতি ও কৌশলগত কারণে ওয়াশিংটনের কাছে বাংলাদেশে গুরুত্ব বাড়ছে। সে কারণে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এত মাথাব্যথা বলে আপাতত মনে হচ্ছে। সময়ের সাপেক্ষে হয়তো আরও বিষয় স্পষ্ট হবে।