শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১   ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

শিবপুরে গুলিবিদ্ধ চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ মারা গেছেন

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:৫৪ এএম, ১ জুন ২০২৩ বৃহস্পতিবার

নরসিংদীতে বাসায় ঢুকে সন্ত্রাসীদের করা গুলিতে আহত শিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হারুনুর রশীদ খান মারা গেছেন। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (৩১ মে) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে তিনি মারা যান।

হারুনুর রশীদ খানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা শিবপুর বাসস্ট্যান্ড, কলেজগেট বাসস্ট্যান্ড, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কামারটেক, চৈতন্যা, সৃষ্টিঘর এলাকায় বিক্ষোভ করেন। এক পর্যায়ে সৃষ্টিঘর এলাকায় টায়ারে আগুন দিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।
এতে দুই পাশে যানবাহন আটকা পড়ে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম ভূইয়া রাখিলের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল হয়। বিক্ষোভকারীরা আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ তোলে।

হারুনুর রশীদ খানের ভাতিজা রাব্বি খান জানান, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে ভারতের দিল্লিতে চিকিত্সা নেন তাঁর চাচা।
হূদরোগ ও মূত্রনালিতে সংক্রমণসহ শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ৭ মে তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৯ মে রাত ১০টার দিকে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) নেওয়া হয়।

রাব্বি খান বুধবার বলেন, ‘উনাকে (হারুনুর রশীদ খান) যারা হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করেছে তাদের গ্রেপ্তারে কোনো অগ্রগতি আমার জানা নেই। এমনকি যারা মদদ দিয়ে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে তারাও প্রকাশ্যে এমপির সঙ্গে মিটিংসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে বেড়াচ্ছে।
এগুলো দেখে ও শুনে কাকু (হারুনুর রশীদ খান) খুব কষ্ট পেয়েছেন। আর সেই কষ্ট নিয়েই আজকে মারা গেলেন।’

রাব্বি খান জানান, তাঁর বাবা সাবেক এমপি রবিউল আউয়াল খান কিরনকেও দুর্বৃত্তরা ১৯৮৬ সালের ২৮ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সমাবেশ থেকে ফেরার পথে গুলি করে হত্যা করে।

পুলিশ ও বাদী সূত্রে জানা যায়, উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলির ঘটনার দিন রাতেই নরসিংদী জেলা পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে চারজনকে আটক করে। ঘটনার দুই দিন পর চেয়ারম্যানের ছেলে মো. আমিনুর রশীদ খান তাপস বাদী হয়ে পুটিয়া এলাকার আরিফ সরকারকে প্রধান আসামি করে ছয়জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে শিবপুর মডেল থানায় মামলা করেন।

মামলার আসামিরা হলেন পুটিয়া ইউনিয়নের কামারগাঁও এলাকার আরিফ সরকার (৪০), পূর্ব সৈয়দনগর এলাকার মো. মহসীন মিয়া (৪২), কামারগাঁও এলাকার ইরান মোল্লা (৩০), মুনসেফেরচর এলাকার শাকিল (৩৫), কামারগাঁও এলাকার হুমায়ুন (৩২) ও নরসিংদী শহরের ভেলানগর এলাকার গাড়িচালক নূর মোহাম্মদ (৪৮)। তাঁরা স্থানীয় এমপি জহিরুল হক ভূঞা মোহন ও তাঁর ছোট ভাই জেলা যুবলীগের সহসভাপতি জোনায়েদুল হক ভূঞা জুনুর ঘনিষ্ঠ বলে জানিয়েছে বাদীপক্ষ।

মামলার পর পুলিশ এজাহারের ৬ নম্বর আসামি নূর মোহাম্মদ এবং ৪ নম্বর আসামি শাকিলকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন নূর মোহাম্মদ। ঘটনার পর থেকে প্রধান আসামি আরিফ সরকার, মহসীন, ইরান মোল্লা ও হুমায়ুন পলাতক রয়েছেন। তাঁরা বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন বলে দাবি পুলিশের।

এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলির ঘটনায় গত ৭ মার্চ মো. ফরহাদ হোসেন ওরফে মোফাজ্জল হোসেন সরকার (৩৪) ও আরিফুল ইসলাম আরিফকে (২৮) মতিঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার বিশেষ দল। তাঁদের কাছ থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত দুটি রিভলবার ও ছয় রাউন্ড গুলিও উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা পুলিশের কাছে তাঁদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। গুলির ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান আসাদ সম্পৃক্ত বলে তাঁরা পুলিশের কাছে তথ্য দিয়েছেন।

এ বিষয়ে শিবপুর মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলির ঘটনায় হওয়া মামলায় মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত দুজন। তাঁদের মধ্যে নূর মোহাম্মদ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। আরেক এজাহারভুক্ত আসামি শাকিল কারাগারে রয়েছেন। আর প্রধান আসামিসহ চারজন দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর শোক : উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলটির দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক শোকবার্তায় জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী মরহুম হারুনুর রশীদ খানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।