তিন শতাধিক নেতার সাজার ভয়ে বিএনপি
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৩:৪৫ এএম, ২৯ এপ্রিল ২০২৩ শনিবার
আজকাল ডেস্ক
বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে আওয়ামী লীগ সরকার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বলে অভিযোগ রাজপথের প্রধান বিরোধী এই দলটির। এর অংশ হিসেবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেই দলের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হতে পারে বলে শঙ্কা বিএনপির। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, এর মধ্য দিয়ে দলের তিনশ থেকে চারশ নেতাকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে সাজা দেওয়া হয়েছে। তবে এতে উদ্বিগ্ন নয় শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া বিএনপি। দলটির হাইকমান্ডের মনোযোগ এখন আন্দোলনের দিকে। যদি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় হয় এবং এই সময়ে দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়, তখন প্রয়োজনে দলের দ্বিতীয় সারির নেতারা নির্বাচন করবেন। কারণ, বিএনপিতে নেতার অভাব নেই। ঈদুল ফিতরের দিন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি বলেছেন, ‘সরকার নির্বাচনের আগেই বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। পরিকল্পনার মধ্যে আছে শীর্ষ নেতাদের মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তাদের আটকে রাখা।’ বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবের মামলার রায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শুধু হাবিব নয়, দেখবেন খুব দ্রুত বিএনপি ও বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের অনেককেই এ ধরনের মিথ্যা মামলায় সাজা দেবে। আমরা লক্ষ করছি, মামলাগুলো খুব দ্রুত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।’ সাতক্ষীরায় ২০০২ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় করা অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায় গত ১৮ এপ্রিল বিএনপির সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেন আদালত। এ মামলার আসামিদের মধ্যে বাকি ৪৪ জনকে দেওয়া হয়েছে ৭ বছর করে কারাদ-। ঈদুল ফিতরের দিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে হাবিবের সাজার প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, আগামী নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে ভোটের আগেই দলের স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সাড়ে তিনশর বেশি নেতাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে দেওয়া হতে পারে। বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে সরকার এই পরিকল্পনা নিয়েছে। তখন খালেদা জিয়া বলেন, আমাকে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকেও তো মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। তাতে কী হয়েছে? এটাকে কোনো গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই। আন্দোলনকে আরও বেগবান কীভাবে করা যায়-সেদিকে আপনারা মনোযোগ দিন। আন্দোলনে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি যদি আদায় হয়–তখন দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, যেখানে মানুষ নির্বিঘেœ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। সেটাই হবে বিএনপির সফলতা। এর মধ্যে যদি দলের মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়, তাহলে প্রয়োজনে তখন বিএনপির দ্বিতীয় সারির নেতারা নির্বাচন করবেন। দলে তো নেতার অভাব নেই। খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলন ঠিক পথেই এগোচ্ছে বলে মনে করেন খালেদা জিয়া। ১০ দফা দাবি আদায়ে যে ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে তাতে তিনি সন্তুষ্ট। খালেদা জিয়া বলেছেন, বিএনপি সঠিক পথেই আছে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাও এবং আন্দোলনকে সফল কর। অন্য কোনোকিছু নিয়ে ভাবার দরকার নেই। এদিকে খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে আগের চেয়ে এখন অনেকটাই সুস্থ বলে জানান বিএনপির ওই নেতা। জানা গেছে, ১০ দফার ভিত্তিতে গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। রোজার মধ্যেও কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। চলমান আন্দোলনকে এখন আরও বেগবান করবে। তবে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু করতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড।
প্রায় ১০ মাস পর গত শনিবার ঈদুল ফিতরের রাতে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান।
পরে ফিরোজার সামনে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। খালেদা জিয়া দেশবাসীর উদ্দেশে কী বার্তা দিয়েছেন–এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বার্তা হচ্ছে এটা যে, দেশবাসী যেন ভালো থাকে তাদের মঙ্গলের জন্য। গণতন্ত্রের জন্য তারা যেভাবে কাজ করছে সেই কাজ যেন তারা করে সেটাই তিনি বলেছেন।’ প্রায় ১০ মাস পর দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘উনি কারাগারে যাওয়ার পর তার সঙ্গে সাক্ষাৎ আমাদের অনেক সীমিত ছিল। উনি বাসায় আসার পরে এ ঈদের দিনগুলোতে তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাই। আমাদের সঙ্গে অনেক দিন পর আলোচনা-সেজন্য সবাই কিছুটা আবেগাপ্লুত ছিলাম। আমরা আশা করি, খুব শিগগিরই তার সঙ্গে আমাদের আরও ঘনঘন সাক্ষাৎ হবে এবং সামনে উনি বেরিয়ে আসবেন।’
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘উনি এখনো বেশ অসুস্থ, এখনো উনার চিকিৎসা চলছে। ডাক্তার সাহেবরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন।’
দুর্নীতির মামলায় দ-িত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাজা স্থগিত করে সাময়িকভাবে মুক্তি দেওয়া হয় তাকে। এরপর থেকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় থাকছেন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত ৭৭ বছর বয়সী খালেদা জিয়া।
