বুধবার   ১৯ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৪ ১৪৩২   ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক নূরে আলম সিদ্দিকী আর নেই

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:০৪ এএম, ১ এপ্রিল ২০২৩ শনিবার


আজকাল ডেস্ক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা নূরে আলম সিদ্দিকী আর নেই। গতকাল বুধবার ভোররাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ছাত্রনেতা ও রাজনীতিবিদ নূরে আলম সিদ্দিকীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সত্তরের দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা ও প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক নূরে আলম সিদ্দিকী ১৯৭০-১৯৭২ মেয়াদে ছাত্রলীগের সভাপতি এবং মুক্তিযুদ্ধের ‘চার খলিফার’ একজন ছিলেন। মুজিব বাহিনীর অন্যতম সংগঠক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। তিনি ছিলেন মুজিব বাহিনীর অন্যতম কর্ণধার। এ ছাড়া ৬ দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সব রাজনৈতিক কর্মকা-ে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন নূরে আলম সিদ্দিকী। তিনি ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন যশোর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে অংশ নিয়েছিলেন। তারপর দলীয় সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান একসময়ের এই কিংবদন্তি ছাত্রনেতা। নূরে আলম সিদ্দিকীকে মুক্তিযুদ্ধের ‘চার খলিফার একজন’ উল্লেখ করা হয়। নূরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে তাহজীব আলম সিদ্দিকী বর্তমানে ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের কিংবদন্তি ছাত্রনেতা নূরে আলম সিদ্দিকী ১৯৪০ সালের ২৬ মে যশোরের ঝিনাইদহ মহকুমায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তারপর তার বাবা ঝিনাইদহের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আসতে শুরু করেন। ছাত্রলীগের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছেড়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু সে সময়ের ঢাকা কলেজে অধ্যক্ষ সরাসরি পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ছাত্রলীগের রাজনীতি এবং শিক্ষা আন্দোলনে জড়িত থাকায় তাকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হয়ে পুনরায় সক্রিয় রাজনীতি শুরু করেন। এরপর আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন নূরে আলম সিদ্দিকী। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপিও নির্বাচিত হন তিনি।
ঝিনাইদহ ব্যুরো জানায়, দুপুর ১২টায় হেলিকপ্টারে তার মরদেহ ঝিনাইদহে আনা হয়। রাখা হয় সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। তাকে শেষবার এক নজর দেখার জন্য রাজনৈতিক কর্মী, সহকর্মী, সহপাঠীসহ নানা শ্রেণি-পেশার সেখানে জড়ো হন। সেখানে বাদ জোহর তার প্রথম নামাজে জানাজা হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এর আগে তার রাজনৈতিক জীবনী নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই এমপি, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মকবুল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান, পিপি অ্যাডভোকেট ইসমাইল হোসেন ও ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ মজিদ প্রমুখ। জানাযা শেষে আবারও হেলিকপ্টারে তার মরদেহ ঢাকার গুলশানের আজাদ মসজিদে নেওয়া হয়। সেখানে তার দ্বিতীয় জানাজা শেষে সাভারে নিজের করা মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
নূরে আলম সিদ্দিকীর মৃত্যুতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মল হকসহ মন্ত্রিসভার সদস্য ও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন গভীর শোক এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।