আরাভ খানকে ফেরানোর কৌশল খুঁজছে পুলিশ
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:৩৩ এএম, ২৫ মার্চ ২০২৩ শনিবার
আজকাল ডেস্ক
দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকান চালু করে আলোচনায় থাকা হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার পলাতক আসামি আরাভ খানকে দুবাই থেকে দেশে ফেরানোর কৌশল খুঁজছে পুলিশ। দুবাই কর্তৃপক্ষ ওই আসামিকে আমিরাতে বাংলাদেশের দূতাবাসে হস্তান্তর করলে দ্রুত তাকে দেশে আনা সম্ভব হবে। বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। কোন প্রক্রিয়ায় ওই আসামিকে দেশে ফেরানো সম্ভব হবে সে বিষয়ে কৌশল খুঁজছে পুলিশ। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন তদন্ত সংস্থা ডিবির কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে।
সূত্র বলছে, আরাভ ভারতীয় পাসপোর্টধারী হিসেবে দুবাইয়ে পালিয়ে ছিলেন। কিন্তু বিষয়টি জানাজানির পর তার দুবাইয়ে ভারতীয় পাসপোর্টের কপিও সংগ্রহ করা হয়। আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম ওরফে আপন যে বাংলাদেশের নাগরিক, সে তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরে ভারতের কাছে চিঠি দেওয়ারও প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঢাকায় ভারতের দূতাবাসে এই চিঠি পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) ও আরাভের বিরুদ্ধে থাকা হত্যা মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারপোল পলাতক আরাভের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ গ্রহণ করার পরের দিন গত সোমবার রাতে তাকে সেফহোমে নেওয়া হয়। মূলত ওই আসামিকে নিজের ফ্ল্যাটেই নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। এক ধরনের আটকাবস্থায় থাকায় সেখান থেকে পালানোর সুযোগ নেই তার। বিষয়টি দুবাই কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে না জানালেও দেশটির এনসিবি সদস্যদের সঙ্গে ঢাকার এনসিবি যোগাযোগ করে এমন তথ্য পেয়েছে। এখন দুবাই ও বাংলাদেশের মধ্যকার চুক্তি, নিয়ম-কানুনের আলোকে সবকিছু হবে।
সূত্র জানায়, দুবাই কর্তৃপক্ষ আরাভ খানকে বাংলাদেশের দূতাবাসে হস্তান্তর করলে তাকে শিগগির দেশে আনা সম্ভব হবে। তখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তাকে বিমানে তুলে দিলে ঢাকা থেকে পুলিশ রিসিভ করতে পারবে। এই প্রক্রিয়া সহজ হলেও তা বাস্তবায়নের জন্য দুদেশের মধ্যে জোর কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকতে হয় এবং ঘটনার পর কূটনৈতিক তৎপরতাও জোরালো করতে হয়। দুবাইয়ের সঙ্গে সেই সম্পর্ক বাংলাদেশের রয়েছে। দেশটির সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি থাকলেও সেটি ফৌজদারি অপরাধে দ- পাওয়া অপরাধীর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা সহজ। আরাভ এখনো কোনো মামলায় দ- না পাওয়ায় ওই প্রক্রিয়ায় তাকে ফেরানো জটিল।
ঢাকার এনসিবি ও ডিবি সূত্র বলছে, দুবাই কর্তৃপক্ষ আরাভকে আটকের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানালে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দিলে ঢাকার পুলিশ তাকে দুবাই থেকে ফিরিয়ে আনতে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এরই মধ্যে ডিবি ও এনসিবির ৪ থেকে ৫ সদস্যের নাম দেওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। তবে গতকাল বুধবার পর্যন্ত তাদের দুবাই যাওয়ার সরকারি আদেশ (জিও) হয়নি।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, পুরো প্রক্রিয়াটিই জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। কারণ, এখানে আনুষ্ঠানিক চিঠি চালাচালির বিষয় রয়েছে। এতে সময় প্রয়োজন। তা ছাড়া আরাভের ভারতীয় পাসপোর্ট থাকায় ভারতকেও এই বিষয়ে বোঝাতে হবে যে, সে বাংলাদেশের নাগরিক এবং মামলার আসামি। এখন দুদেশকে বুঝিয়ে তাদের ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর কোন প্রক্রিয়ায় ওই আসামিকে ফেরানো যাবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গত সপ্তাহে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধন করার পর ব্যাপক আলোচনা শুরু হয় জুয়েলার্সের মালিক আরাভ খানকে নিয়ে। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ক্রীড়া ও বিনোদন জগতের অনেক তারকাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দিয়েছিলেন আরাভ খান। তখনই তাকে পুলিশ সদস্য হত্যা মামলার আসামি বলে শনাক্ত করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। গোয়েন্দা পুলিশের তথ্যমতে, আরাভ খানের আসল নাম রবিউল ইসলাম। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তার বাড়ি। তিনি সোহাগ মোল্লা, হৃদয় শেখ, আপনÍএ রকম কয়েকটি নামে পরিচিত। ২০১৮ সালের ৭ জুলাই ঢাকায় পুলিশের পরিদর্শক মামুন এমরান খান খুন হন। সেই খুনের আসামি হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন রবিউল। মামলা ও নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, নারীদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করে বিত্তশালীদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া একটি চক্রের কবলে পড়েন পরিদর্শক মামুন এমরান। এরপর তাকে ধরে নিয়ে হত্যার পর পেট্রোল ঢেলে লাশ পুড়িয়ে গাজীপুরের জঙ্গলে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা।
এদিকে আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছে ইন্টারপোল। তালিকায় ৬৩তম বাংলাদেশি তিনি। বৃহস্পতিবার রাতে ইন্টারপোল ওয়েবসাইটের রেড নোটিশের তালিকায় তার নাম পাওয়া গেছে। এর আগে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছিলেন, আরাভ খানের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য ইন্টারপোলকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার যুবক রবিউল ইসলাম নিজের নাম, জাতীয়তা পরিবর্তন করে জোগাড় করেন ভারতীয় পাসপোর্ট। এ পাসপোর্টেই পাড়ি জমান সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। দুবাই পাড়ি জমিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন ‘আলাদিনের চেরাগ’।
