শুক্রবার   ১৬ মে ২০২৫   জ্যৈষ্ঠ ২ ১৪৩২   ১৮ জ্বিলকদ ১৪৪৬

ঘুমের সমস্যার জন্য পেট দায়ী নয়তো?

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৭:৪৭ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ শুক্রবার

অনেক কারণেই আমাদের ঘুমে সমস্যা তৈরি হয়। তবে ঘুমের সাথে খুব নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত আমাদের শরীরের মাইক্রোবায়োম। মাইক্রোবায়োম কী? এটি আমাদের পাকস্থলী ও অন্ত্রে বাস করা ক্ষুদ্র সব জীবাণু ও ভাইরাসের সমন্বিত রূপ, বিশেষ করে, আমাদের অন্ত্রে এদের আধিক্য থাকে সবচাইতে বেশি। খাবার হজমের ক্ষেত্রে এটি আমাদের সাহায্য করে। 

মাইক্রোবায়োম কিন্তু শুধু ব্যাকটেরিয়া আর ভাইরাসের মিশ্রণ নয়, এতে আছে প্রায় ১০০ মিলিয়নের বেশি স্নায়ু। ডোপামিন, সেরোটোনিনসহ ঘুমের জন্য সাহায্যকারী সব হরমোন উৎপাদন করে এটি। আমাদের শরীরের ভালো থাকা, খারাপ থাকা, মস্তিষ্ক ও নার্ভাস সিস্টেমের মধ্যে বড় একটি ভূমিকা পালন করে মাইক্রোবায়োম। 

অনেকসময় একে মানবদেহের দ্বিতীয় মস্তিষ্ক বলে বিবেচনা করা হয়। আর তাই, খুব স্বাভাবিকভাবেই আমাদের পাকস্থলী আর ঘুমের মধ্যে বড় একটা সম্পর্ক রয়েছে। মাইক্রোবায়োম যেমন ঘুমে প্রভাব রাখে, তেমনি ঘুম না হলে আমাদের মাইক্রোবায়োম প্রভাবিত হয়।

তবে এর সবটাই পুরনো তথ্য। চলুন, জেনে নেওয়া যাক আমাদের পাকস্থলী ও ঘুমের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে বিজ্ঞানীদের পাওয়া নতুন কিছু তথ্য- 

১। আপনার শরীরের মাইক্রোম্বায়োমে মাইক্রো অরগানিজম কমে যাওয়া, উপকারি ব্যাকটেরিয়া কমে যাওয়া স্থুলতা ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে। এতে করে ঘুমের ক্ষেত্রেও সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

২। বয়স বাড়লে অনেকের মধ্যে ঘুমের সমস্যা দেখা যায়। একইসাথে, স্মৃতিশক্তিজনিত সমস্যাগুলোও দেখতে পাওয়া যায়। ২০১৭ সালে কেন্ট স্টেট পয়েন্টসে একদল গবেষক গবেষণা চালান এবং জানতে পারেন যে, ঘুম, স্মৃতি ও মাইক্রোবায়োমের স্বাস্থ্য— এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক আছে। ৫০-৮৫ বছর বয়সীদের মাইক্রোবায়োমের স্বাস্থ্য ও ঘুমের মধ্যকার সম্পর্ক খোঁজেন তারা এবং সেসময় এই মাইক্রোবায়োমের সাথে স্মৃতিশক্তি নিয়েও অনেক তথ্য জানতে পারেন। 

৩। ঘুমের মধ্যে শ্বাস নিতে সমস্যা হয় অনেকের। আর এই সমস্যাটি মাইক্রোবায়োমের ক্ষতিসাধন করে। অনেকসময়, এই ক্ষতি এতোটাই বড় হয়ে দাঁড়ায় যে, শরীর আবার সেটি পুরোপুরি ঠিক করে নিতে পারে না। তবে কেবল তাই নয়, এই পুরো ব্যাপারটির সাথে সম্পর্ক আছে উচ্চ রক্তচাপেরও। 

স্লিপ অ্যাপনিয়া থাকলে ব্যক্তির শরীরের মাইক্রোবায়োম যেমন আক্রান্ত হয়, তেমনি সেই আক্রান্ত মাইক্রোবায়োম উচ্চ রক্তচাপেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এজন্যই, স্লিপ অ্যাপনিয়াতে ভুগছেন এমন মানুষদের মধ্যে রক্তচাপের সমস্যা দেখতে পাওয়া যায়।

৪। অনেকের ঘুমে নানারকম সমস্যা দেখা যায়। বারবার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া, আজেবাজে স্বপ্ন দেখার মতো ঘটনা ঘটে এক্ষেত্রে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করা হয় মাইক্রোবায়োমের স্বাস্থ্যের অবনতিকে। আবার, চক্রাকার একটি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, আমাদের ঘুম না হলে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসে। অস্বাস্থ্যকর খাবার খাই আমরা। এতে করে পেটের পরিস্থিতি খারাপ হয়। এই প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ হিসেবে আবার ঘুমে সমস্যা দেখা দেয়। 

৫। পাকস্থলী ঠিকভাবে কাজ না করলে আমাদের মধ্যে চাপ ও উদ্বিগ্নতা বেড়ে যায়। মূলত, পাকস্থলীর স্বাস্থ্য ভালো থাকলে শরীরে উদ্বিগ্নতার পরিমাণ কমে যায়। মাইক্রোবায়োম মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ফলে, মাইক্রোবায়োমে কোনরকম সমস্যা দেখা দিলে আমাদের ঘুমে সমস্যা দেখা দেয়। 

মাইক্রোবায়োম ও ঘুমের সমস্যাকে দূর করতে চান? চিকিৎসকের সাথে অবশ্যই দেখা করতে পারেন এজন্য। এছাড়াও-

১। চেষ্টা করুন এমন খাবার গ্রহণ করতে, যেটি কিনা প্রক্রিয়াজাত খাবার নয়। যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। 
 
২। বেশি করে উদ্ভিজ্জ খাবার গ্রহণ করুন। সময় পেলেই অর্গানিক খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। 

৩। বেশি বেশি করে প্রিবায়োটিকস গ্রহণ করুন। এটি আপনার মাইক্রবায়োমের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আপেল, অ্যাসপারাগাস, কলা ইত্যাদি প্রিবায়টিকসের মধ্যে পড়ে। 

৪। নিয়মত শরীরচর্চা করুন।

৫। রাতে ঘুমানোর আগে হালকা কিছু খেয়ে নিন। খালি পেটে ঘুমাবেন না। 

ঘুম আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি ব্যাপার। আর ঘুমকে প্রভাবিত করে মাইক্রোবায়োম। তাই চেষ্টা করুন এই মাইক্রোবায়োমকে সুস্থ রাখার। এতে করে আপনার ঘুম হবে ভালো, আপনিও থাকবেন সুস্থ!