সোমবার   ২০ মে ২০২৪   জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১   ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

কাতার বিশ্বকাপ হবে পরিবেশবান্ধব

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:৫৩ এএম, ১৯ নভেম্বর ২০২২ শনিবার


আজকাল ডেস্ক
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটছে। কাতারে ইতিহাসের  সবচেয়ে ব্যয়বহুল ফুটবল বিশ্বকাপের পর্দা উঠছে আগামী রোববার। মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। থাকছে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার।  মধ্যপ্রাচ্য ও আরব বিশ্বের একমাত্র দেশ কাতার, যারা প্রথমবার কোনো ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করছে। এশিয়া মহাদেশে এর আগে মাত্র একবার বিশ্বকাপ আসর বসেছিল। ২০০২ সালের আসরে যৌথ আয়োজক ছিল দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান। এ বিষয়ে কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানি বলেন, ‘করোনা মহামারির পর পুরো বিশ্বকে এক সুতোয় বাঁধার প্রথম বড় টুর্নামেন্ট হতে যাচ্ছে কাতার বিশ্বকাপ। আরব বিশ্বে ভিন্নধর্মী এক আয়োজন করতে কাতার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’ বিশ্বকাপের আগের টুর্নামেন্টগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছিল জুন-জুলাই মাসে। কাতারে ব্যতিক্রম।
উত্তপ্ত আবহাওয়ার কারণে দেশটিতে শীতকাল অর্থাৎ নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে আয়োজন করা হচ্ছে বিশ্বকাপ। এই সময়ে বিশ্বকাপ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মত আছে অনেক। ইউরোপিয়ান লীগে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে খেলার মধ্যে থাকেন ফুটবলাররা, সেক্ষেত্রে বিষয়টিকে ইতিবাচকই মনে করছেন ডেভিড বেকহাম। সাবেক এই ইংলিশ তারকার মত, ‘২৫টির মতো ম্যাচ খেলার পর মাঠে নামছে ফুটবলাররা।
 এ সময়ে তাদের স্ট্যামিনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে। এ কারণে কাতারে এমন পারফরম্যান্স দেখা যাবে, যা সম্ভবত ইতিপূর্বে কখনো দেখা যায়নি।’ কাতারের আঁটসাঁট লোকেশনের সুবিধাও নিতে পারবেন ফুটবলাররা। বিশ্বকাপের স্টেডিয়ামগুলো খুব কাছাকাছি দূরত্বে বানানো হয়েছে। মাত্র ৫৫ কি. মি. জায়গার মধ্যেই নির্ধারিত ৮টি ভেন্যু। বিশ্বকাপের ইতিহাসে কোনো আসরেই ভেন্যুগুলো এত অল্প ব্যাসার্ধের মধ্যে ছিল না। এতে করে খুব বেশি দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না খেলোয়াড় ও ভক্ত-সমর্থকদের। ডেভিড বেকহাম বলেন, ‘খেলোয়াড়দের জন্য ব্যাপারটা স্বপ্নের মতো। আগের বিশ্বকাপেও ছোটাছুটির খুব ধকল গেছে।’ কাতারে প্রথমবার দেখা যাবে নারী রেফারি। ম্যাচ পরিচালনার জন্য ৩৬ জন রেফারির নাম ঘোষণা করেছে ফিফা। এদের মধ্যে নারী রেফারি হচ্ছেন জাপানের ইয়োশিমি ইয়ামাশিতা, ফ্রান্সের স্টেফানি ফ্রাপার এবং রুয়ান্ডার সালিমা মুকানসাঙ্গা। এ তিনজন ছাড়াও সহকারী নারী রেফারি হিসেবে থাকছেন ব্রাজিলের নিউজা বেক, মেক্সিকোর কারেন দিয়াজ মেদিনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাথরিন নেসবিত। এবার দেখা যাক টেকনোলজির দিক থেকে নতুন কী কী থাকছে। রাশিয়ায় ২০১৮ বিশ্বকাপে প্রথমবার দেখা গিয়েছিল ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর)-এর ব্যবহার। সেটিকে আরও উন্নত করা হয়েছে।
অফসাইডের সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষেত্রে চালু হচ্ছে সেমি-অটোমেটিক অফসাইড প্রযুক্তি। ভেন্যুগুলোতে বসানো হয়েছে ১২টি ট্র্যাকিং ক্যামেরা। খেলা চলাকালে কেউ অফসাইডে পড়লে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংকেত পৌঁছে যাবে ম্যাচ অফিসিয়ালদের কাছে। এই প্রযুক্তির সফল ব্যবহার দেখা গেছে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ও ফিফা আরব কাপে। আশা করা যাচ্ছে, ভিএআর নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সেটির অবসান ঘটাতে পারবে সেমি-অটো অফসাইড প্রযুক্তি। কাতার বিশ্বকাপ খেলা হবে বিশেষ ধরনের বল দিয়ে। ‘আল রিহলা’ নামের এই বলের চামড়ার গোলকের ভেতর রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির ৫০০ হার্জ আইএমইউ সেন্সর। বলের গতিবিধি নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণে রাখবে সেন্সরটি। এর সাহায্যে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত জানাতে পারবেন ভিডিও এসিস্ট্যান্ট রেফারিরা। খেলোয়াড়রা যেন নিজেদের পারফরম্যান্সের বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারেন, সেজন্য থাকছে ‘ডেটা অ্যাপ’। অ্যাপের ফিচারে থাকবে কোন খেলোয়াড় কেমন খেলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে তার অবদান কতটুকু, মাঠজুড়ে তার প্রভাব কেমন ছিল ইত্যাদি। ফিফার ফুটবল টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন ডিরেক্টর ইয়োহানেস হোলসমুলার বলেন, ‘মাঠের সৈনিকদের জন্য সম্ভাব্য সেরা প্রযুক্তির ব্যবস্থা করেছে ফিফা।’ কাতারে কার্বন-নিরপেক্ষ বিশ্বকাপ আয়োজনের ঘোষণা আগেই দিয়েছিল দেশটির সুপ্রিম কমিটি ফল ডেলিভারি অ্যান্ড লিগ্যাসি। সেই লক্ষ্যে প্রথমবার ব্যবহার করা হচ্ছে ‘অল গ্রিন’ যানবাহন। ৪৪টি মেট্রোলিংক ও ৪৮টি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট রুটে চলবে পরিবেশবান্ধব ইলেক্ট্রিক বাস।