বিদ্যুৎ-জ্বালানী পরিস্থিতি নিয়ে উত্তপ্ত সংসদ!
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৩:৫৪ এএম, ২ নভেম্বর ২০২২ বুধবার
বিদ্যুৎ ও জ্বালানী পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে। বিদুৎ খাতে লুটপাট চলছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির হারুনুর রশীদ। অন্যদিকে, বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, জোট সরকারের আমলে দিনে ১৭ ঘন্টা দেশ অন্ধকারে ছিলো।
মঙ্গলবার অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে সম্পুরক প্রশ্নের সুযোগ নিয়ে বিএনপি’র সংসদীয় দলের নেতা মো. হারুনুর রশীদ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে একদিন সংসদে সাধারণ আলোচনা হওয়া দরকার।
জবাবে সাধারণ আলোচনার পক্ষে একমত প্রকাশ করেন বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, জোট সরকারের আমলে দিনে ১৭ ঘন্টা দেশ অন্ধকারে ছিলো। বিদ্যুৎ চাওয়ায় গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে।
সংসদ অধিবেশনে সম্পুরক প্রশ্নের সুযোগ নিয়ে মো. হারুনুর রশীদ বলেন, প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের প্রশ্নোত্তর অন্ততঃ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কথা ৫০ বার বলেছেন। প্রসঙ্গে ছাড়াই তিনি এটা বলেছেন। দয়া করে আপনি জানাবেন, বিএনপি আমলে বিদ্যুতের দাম কতো ছিলো, গ্যাসের দাম কতো ছিলো? দায় মুক্তি কেন এখনো বহাল রেখেছেন।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ জ্বালানী সেক্টরে লুটপাট চলছে, ভয়ানক অরাজকতা চলছে। একদিন সময় দিন, সংসদে আলোচনা হোক। আমরা আলোচনা করবো। তিনি আরো বলেন, ভুতের মুখে রাম নাম মানায় না। আমি স্পষ্ট জানতে চাচ্ছি বিএনপি সরকার যে, গ্যাসের চুক্তি করেছিলো এমন কোন কোন চুক্তির প্রমাণ আপনার কাছে আছে কিনা? থাকলে সেটা এই সংসদে উত্থাপন করবেন।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সমালোচনা করে হারুনুর রশীদ বলেন, বিএনপি আমলে চালের দাম কতো ছিলো? একটি ডিমের দাম কতো ছিলো? দুধের কেজি কতো ছিলো? এই উত্তরগুলো সংসদে দেন। শুধু দায়ি করলে হবে না। মাননীয় স্পিকার আপনি সময় নির্ধারণ করে দেন। শুধু জ্বালানী সেক্টর নিয়ে আলোচনা হোক। আজকে মানুষ হাহাকার করছে। তারা বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। আজকে জ্বালানী উপদেষ্টা বলছেন, দিনের বেলায় বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে না। এটা কি হচ্ছে? আগামী বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম আর বাড়াবো না, আপনি সেই আশ্বাস দেন।
হারুনুর রশীদের এই বক্তব্যে সরকার দলীয় সদস্যরা হৈচৈ শুরু করেন। এক পর্যায়ে স্পিকার হারুনুর রশীদকে থামানোর চেষ্টা করেন। স্পিকার তাকে প্রশ্ন করার অনুরোধ জানাতে হারুনুর রশীদ বলেন, আমি জোর সরকারের আমলে চালের দাম, তেলের দাম, ডিমের দাম, বিদ্যুতের দাম কতো ছিলো, তা জানতে চাই। এরপর প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ উত্তর দিতে উঠলে অধিবেশন কক্ষে হট্টোগোল শুরু হয়।
এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্য অনেক উত্তেজিত হয়েছেন। সত্য কথা অনেকে সহজভাবে নিতে পারেন না। আমিও চাই সংসদে একদিন সময় দেওয়া হোক। জ্বালানী নিয়ে আলোচনা হোক। নাইকো মামলা নিয়ে যে পরিমাণ তথ্য আমাদের হাতে আছে, তাদের নেতা তারেক জিয়ার বন্ধু যে পরিমাণ সাক্ষাৎকার এফবিআই’র কাছে দিয়েছেন তার রেকর্ড আমরা তুলে ধরতে চাই। সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার প্লান্টে যে পরিমাণ চুরি হয়েছে, সেই তথ্য প্রমাণও আমাদের হাতে আছে। আমরা সেগুলো এই সংসদের স্কিনে দেখাতে চাই।
খাম্বা কোম্পানী তৈরির পর লুটপাটের হিসাবও আমাদের কাছে আছে। নির্বাচন সামনে আসছে, প্রস্তুত থাকুন সবকিছু আমরা দেশবাসীকে দেখাবো।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জোট সরকারের আমলে সকলেই ১৭ ঘন্টা অন্ধকারে ছিলেন। আর উনি বিদ্যুতের দামের কথা বলেন। অন্ধকারে থাকার যে সংকট, সেই কষ্টের কথা বলেন। সেই সময় বিদ্যুতের অবচয় ছিলো ৪৪ শতাংশ। এই অপচয়টা দুর্নীতির মধ্যে পড়ে। ৫ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান হয়েছেন তারা। বিদ্যুৎ চাওয়ার কারণে কানসাটে গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে।
এরপর সম্পুরক প্রশ্ন উত্থাপনকালে জাপা মহাসচিব মুজিবুর হক চুন্নু বলেন, আমরা লোডশেডিং-এর মধ্যে আছি। আশা করছিলাম এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানী উপদেষ্টা জানালেন, আগামীতে দিনের বেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ গতে পারে। জানিনা কি পরিস্থিতি তৈরি হবে।
তিনি বলেন, পত্র-পত্রিকায় দেখলাম বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বেসরকারি কোম্পানী রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কোম্পানীকে ৮৬ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। আবার সঞ্চালন লাইনের অভাবে তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ নেওয়া যাচ্ছে না। আসলে পরিস্থিতি কি তা জানানোর অনুরোধ জানান তিনি।
জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, বেসরকারি কোম্পানীকে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ কতো দেওয়া হয়েছে তা জানার জন্য চিঠি দিতে হবে। জ্বালানী উপদেষ্টা পরিস্থিতি খারাপ হলে দিনের বেলা বিদ্যুৎ বন্ধের কথা বলেছেন। কিন্তু সেই অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি। আমরা ভালোর দিকে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, সঞ্চালন লাইনের কোন সমস্যা নেই। সমস্যা জ্বালানীর। সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
এদিকে, প্রশ্নোত্তর পর্বে জ্বালানী পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন বিএনপি’র রুমিন ফারহানা। তিনি বলেন, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশের ব্যয় হচ্ছে সোয়া এক লাখ কোটি টাকা। আর একই ধরণের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ভারতের ব্যয় হচ্ছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। পাকিস্তান আমলে ভূমি অধিগ্রহণ সত্ত্বেও কেন চারগুণ বেশি ব্যয় হচ্ছে? কাতারসহ অন্য দেশ থেকে সুযোগ থাকা সত্বেও স্পট মার্কেট থেকে কেন জ্বালানী কেনা হচ্ছে তা জানতে চান তিনি।
সরকারি দলের সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশে মোট উত্তোলনযোগ্য প্রমাণিত ও সম্ভাব্য গ্যাসের মজুদ (২পি) ২৮ দশমিক ৫৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। তবে শুরু হতে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ক্রমপুঞ্জিভুত গ্যাস উৎপাদনের পরিমান ১৯ দশমিক ৫৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। সে হিসেবে বর্তমানে উত্তোলনযোগ্য অবশিষ্ট মজুদের পরিমান ৯ দশমিক ০৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে বর্তমানে দৈনিক গড়ে প্রায় ২ হাজার ৩ শত মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বিবেচনায় অবশিষ্ট মজুদ গ্যাস প্রায় ১০ দশমিক ৮ বছর ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
