সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৬ ১৪৩১   ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

পাচার করা টাকা ফেরাতে ১০ দেশের সঙ্গে চুক্তি চায় বিএফআইইউ

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:৫৮ এএম, ২৬ অক্টোবর ২০২২ বুধবার

পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য, সাক্ষ্যপ্রমাণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য অন্তত ১০টি দেশের সঙ্গে পারস্পরিক আইনগত সহায়তা চুক্তি (এমএলএ) স্বাক্ষরের যৌক্তিকতা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অবহিত করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

টাকা ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় তথ্য, সাক্ষ্যপ্রমাণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা গ্রহণের জন্য এটি প্রয়োজন উল্লেখ করে বিষয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানানো হয়েছে।

বিএফআইইউর এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।

দেশগুলো হলো—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, হংকং-চায়না।

প্রতিবেদনটি বুধবার হলফনামা আকারে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।

বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানতে ১১ আগস্ট আদেশ দেয় হাইকোর্ট।

সুইস রাষ্ট্রদূতের এক বক্তব্যের বিষয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হলে আদালত প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেয়। এরপর আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বিএফআইইউর পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ হলফনামা আকারে তথ্য দাখিল করে। ওই হলফনামায় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় বিএফআইউ প্রধানকে তলব করা হয়।

সেই তলবে ৩১ আগস্ট হাজির হয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুরসণ না করায় বিএফআইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস ক্ষমা চান। এ সময় আদালত তাকে সতর্ক করে দেয়।

পরে আদালতের আদেশ অনুসারে মঙ্গলবার বিএফআইউ ফের প্রতিবেদন দাখিল করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা ও পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার জন্য প্রস্তাবিত রিসার্চ সেল-এ লোকবল পদায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ওই সেলে প্রয়োজনীয়সংখ্যক উপযুক্ত লোকবল পদায়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

অর্থ ফেরত আনার কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, পাচার করা অর্থ ফেরত আনা সম্পর্কিত মামলায় তথ্য-প্রমাণ বিদেশি রাষ্ট্র থেকে যথাসময়ে না পাওয়ার প্রেক্ষাপটে অ্যাটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে বিদেশে পাচারকৃত সম্পদ বাংলাদেশে ফেরত আনার বিষয়ে গঠিত টাস্কফোর্সের ৩ জানুয়ারি ষষ্ঠ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য, সাক্ষ্যপ্রমাণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা পেতে ৬-৭টি দেশের সঙ্গে পারস্পরিক আইনগত সহায়তা (এমএলএ) চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি পর্যালোচনার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, বিএফআইইউ ও বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের অংশগ্রহণে সভা আয়োজন করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এ সিদ্ধান্তের সূত্রে বিএফআইইউ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে সভা আয়োজনের অনুরোধ করে। পরবর্তীতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কোন কোন দেশের সঙ্গে এ পর্যায়ে এমএলএ চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে এবং এর যৌক্তিকতা জানানোর জন্য বিএফআইইউকে অনুরোধ করে। এ অবস্থায় বিএফআইইউ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড ও হংকং-চায়নার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের যৌক্তিকতা তুলে ধরে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, হাইকোর্টের পরামর্শ মোতাবেক ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ‘রামজিৎ মালানি বনাম ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া অ্যান্ড আদার্স’ শীর্ষক মামলার রায় সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা হয়েছে।

একই সঙ্গে ভারতের নেয়া ব্যবস্থার অনুরূপ পদক্ষেপ বাংলাদেশেও আইনানুগভাবে গ্রহণ করা যায় কি না তা পর্যালোচনার সুপারিশ পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে প্রস্তুতকৃত কৌশলপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সুইস ব্যাংকসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে প্রস্তুতকৃত কৌশলপত্র-প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটির ৩০ আগস্টের ২৬তম সভার আলোচ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল। এটি জাতীয় সমন্বয় কমিটির পরবর্তী সভায় আলোচনা ও অনুমোদন পাবে বলে আশা করছে বিএফআইইউ।