শনিবার   ১১ মে ২০২৪   বৈশাখ ২৮ ১৪৩১   ০৩ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ডেঙ্গুর তীব্রতা ৯০ ভাগ কমে পর্যাপ্ত তরল খাবারে

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৬:০৬ এএম, ২৩ অক্টোবর ২০২২ রোববার

 

ঢাকার বাইরেও ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীর সংখ্যার সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুও। এসব বিষয়ে প্রশ্নের সঙ্গে কথা বলেছেন আইইডিসিআরের পরিচালক তাহমিনা শিরীন।  

প্রশ্ন : এ বছর হঠাৎ ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ কী?

তাহমিনা শিরীন : প্রথমত জলবায়ুর পরিবর্তন।

এর সঙ্গে এডিস মশার প্রজনন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া ডেঙ্গুর একাধিক ধরন এখন সক্রিয়। ফলে সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।

প্রশ্ন : আইইডিসিআর ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর কোন ধরন পাচ্ছে?

তাহমিনা শিরীন : ঢাকায় ডেঙ্গুর ধরন ডেন-থ্রি দ্বারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে রোগী। এর সঙ্গে ডেন-ফোর রয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ডেন-ফোর পেয়েছি ১০ শতাংশ। ঢাকার বাইরে কক্সবাজার জেলায় ডেঙ্গুর ধরন ডেন-ওয়ান পাওয়া গেছে। এর সঙ্গে ডেন-থ্রি রয়েছে।

আইইডিসিআর ২০১৩ সাল থেকে ডেঙ্গু সেরুটাইপ বা ধরন পর্যবেক্ষণ করছে। এ পর্যন্ত চারটি ধরন শনাক্ত করা হয়েছে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুর ধরন ডেন-ওয়ান এবং ডেন-টু ছিল। ২০১৮ সালে ডেন-থ্রি দ্বারা আক্রান্ত শুরু হয়। ২০১৯ সালে এর হার ছিল ৯০ শতাংশ। ২০২১-এ সেটি হয় শতভাগ।

 প্রশ্ন: আগে রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রবণতা সবচেয়ে বেশি ছিল জানতাম। এখন সেটি ছড়িয়েছে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ প্রায় ৫০টি জেলায়। এর সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ৫০ শতাংশ ঢাকার বাইরের এলাকার। এর কারণ কী?

তাহমিনা শিরীন : প্রথমত, ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তি বিভিন্ন পরিবহনে করে নিজ জেলায় যাচ্ছে। সেখান থেকে আবার ঢাকায় আসছে। দ্বিতীয় হলো, মানুষের সঙ্গে এডিস মশাও ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে, যেমন—ট্রেন, বাস বা অন্যান্য গাড়িতে করে বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানেও আবার মশার ডিম পাড়ার পরিবেশ রয়েছে এবং তারা ডিম পাড়ছে। বিশেষ করে মানুষ বাসার ফ্রিজ, এসি, চৌবাচ্চায় পানি জমে আছে কি না, সেটি খেয়াল রাখছে না। ফলে সেখানেও মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

প্রশ্ন : ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা দ্রুত শকে চলে যাওয়ার কারণ কী?

তাহমিনা শিরীন : আমাদের দেশে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক দিন ধরে। ফলে একাধিকবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। কেউ একাধিকবার ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে তীব্রতা বাড়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

প্রশ্ন : একজন রোগী কিভাবে বুঝবেন তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত?

তাহমিনা শিরীন : হঠাৎ তীব্র জ্বর হওয়া। জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার থেমে থেমে হতে পারে। প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, মাংসপেশিতে, গিড়ায় গিড়ায় ব্যথা—এগুলো ডেঙ্গুর সাধারণ লক্ষণ।

প্রশ্ন : একজন রোগী কখন হাসপাতালে ভর্তি হবেন?

তাহমিনা শিরীন : পেট ব্যথা করা বা ডায়রিয়া হওয়া, বারবার বমি বা রক্তবমি করা, দাঁতের মাড়ি বা নাক থেকে রক্ত ঝরা—এসব দেখা দিলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী যদি পর্যাপ্ত তরল খাবার খায়, তবে ৯০ শতাংশ সিভিয়ারিটি (তীব্রতা) কমে যাবে। যেমন—খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি, ফলের রস, স্যুপ, ভাতের মাড় ইত্যাদি।

প্রশ্ন : ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় কী?

তাহমিনা শিরীন : মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের তৎপরতার সঙ্গে নাগরিকদের সচেতনতা জরুরি। ফুলের টবসহ বাসার ভেতরে ও চারপাশে জমে থাকা পানি অবশ্যই তিন দিনের মধ্যে ফেলে দিতে হবে। বাসার চার পাশে পড়ে থাকা পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত ফুড কনটেইনারে পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না। নির্মাণাধীন ভবনের মেঝে, লিফটের গর্ত, ওয়াটার মিটারের গর্ত ও স্থাপনাগুলোতেও যাতে পানি জমে না থাকে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। দিনে ও রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে ছোট বড় সবাইকে শরীর ঢেকে রাখার মতো কাপড় পরতে হবে। জ্বর হলে কভিড-১৯ টেস্ট করানোর পাশাপাশি ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষাও (এনএসআই) করাতে হবে।
-কালের কণ্ঠ