বুধবার   ১৯ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৫ ১৪৩২   ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

গাইবান্ধা উপ নির্বাচন বন্ধে তোলপাড়

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:০৭ এএম, ১৫ অক্টোবর ২০২২ শনিবার


মাসুদ হোসেন, ঢাকা থেকে
গাইবান্ধা উপ নির্বাচন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন এখন আলোচনায়। প্রতিটি কেন্দ্রে সিসিটিভি বসানো ছিলো। ঢাকায় বসে নির্বাচন কমিশন ওই সব সিসিটিভি মনিটর করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, তারা অনিয়ম দেখেছেন। স্থানীয় প্রশাসনকে অনিয়ম দূর করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসনের তরফে কোনও সাড়া পাননি। এমনকি পোলিং ও প্রিসাইডিং অফিসারও ইভএমে ভোট দিয়েছেন বলে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। সিইসির মতে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিলো। তাই তারা নির্বাচন বাতিল করে দিয়েছেন। এটা কোনও হটকারি সিদ্ধান্ত নয়।
গাইবান্ধার ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কেন নির্বাচন কমিশন ভোট বাতিল করেছে তা স্পষ্ট নয়। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ঢাকায় বসে নির্বাচন বাতিল করেছেন। সিসিটিভি ফুটেজে ভুল রেজোলেশন দিয়েছে কিনা তা যাচাই করা হয়নি। গাইবান্ধায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে দারুন ক্ষুব্ধ। তারা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন।
অপরদিকে, গাইবান্ধা কান্ডে বেশ ফুরফুরে মেজাজে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীন যে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না; গাইবান্ধা উপ নির্বাচন তার প্রমাণ। বিএনপি বিভিন্ন বিভাগে মহাসমাবেশ আয়োজন করছে। এরিমধ্যে চট্টগ্রামে মহাসমাবেশ সম্পন্ন হয়েছে। বিভাগীয় সমাবেশের আগে তারা ঢাকায় বিভিন্ন মহল্লায় সমাবেশ করেছে। এসব কর্মসূচিতে বিপুল জনসমাবেশ হয়েছে।
বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আরও এক বছরের বেশি সময় বাকি। পশ্চিমারা এবারও সময়মতো গুনগত মানসম্পন্ন নির্বাচন আশা করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্প চালু করে দেশে উন্নয়নের ধারায় বেশ জাগরন সৃষ্টি করেছিলো। কোভিডের ফলে মহামারিও ভালভাবে সামাল দিয়েছিলো। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে অর্থনৈতিক সংকটের ধাক্কা বাংলাদেশের মানুষের ওপর বেশ বিরুপ প্রভাব ফেলেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় নাভিশ্বাস উঠেছে। বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষের জীবনে ত্রাহি অবস্থা। মূল্যস্ফীতিতে সরকারের উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। তার ওপর চলছে লোডশেডিং। জ্বালানীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমাতে হয়েছে।
জনমনে শঙ্কা ২০২৩ সাল নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকলকে সতর্ক করেছেন। তিনি সংকট মোকাবেলার প্রয়োজনয়ি প্রস্তুতি রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। নির্বাচনের আগের বছরে বৈশ্বিক সংকটের বিরুপ প্রভাব ভোটের ওপর কী প্রভাব ফেলে সেটাই দেখার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে। তবে বিএনপি বিষয়টাকে পুঁজি করতে চাইছে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা বাদে এখন পর্যন্ত বিএনপি’র কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। বিএনপি আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বড় সমাবেশের ডাক দিয়েছে। বিএনপি নেতারা দাবি করছেন, ১০ ডিসেম্বরের পর খালেদা জিয়ার নির্দেশে দেশ চলবে। যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এসব হুঙ্কারে কান দিচ্ছে না। আওয়ামী লীগ ডিসেম্বরে দলের কাউন্সিল অধিবেশনে প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। তার আগে সারাদেশে এখন দলের কাউন্সিল হচ্ছে। ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে সবার দৃষ্টি এখন নতুন নেতৃত্বে দিকে। সভাপতি পদে কোনও পরিবর্তন আশা করা যায় না। সভাপতি শেখ হাসিনাই থাকবেন। সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। যদিও ওবায়দুল কাদের এখন শারিরীকভাবে অনেকটা সুস্থ।
আগামী ১০ ডিসেম্বর দেশে কী ঘটতে যাচ্ছে তা নিয়ে এখনই মানুষের মনে জল্পনা কল্পনা চলছে। গাইবান্ধার ঘটনা সেখানে নতুন মাত্রা দিলো। নির্বাচন কমিশনকে এতটা শক্ত অবস্থানে আগে কেউ দেখেনি। তবে এমন শক্ত অবস্থান কতটা টিকে থাকবে সেটা নিয়েও প্রশ্ন আছে। একটি উপ নির্বাচন তদারকি যতটা সহজ ৩০০ আসনে নির্বাচন তদারকি তেমনই কঠিন।
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ নির্বাচন ব্যাপক অনিয়মের কারণে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া এবং এ ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য নতুন বার্তা বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, এ নির্বাচনে সরকারি দল ও নির্বাচন কমিশন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে। এ নির্বাচনী পরিবেশ থেকে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের শিক্ষা নেওয়া উচিত। এই সঙ্গে দেশে সুষ্ঠু ভোটের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সবাইকে এগিয়ে আসার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, সিসি ক্যামেরায় অনিয়ম দেখে প্রথমে ৫১টি কেন্দ্র ও পওে পুরো নির্বাচনে ভোট বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সিসি ক্যামেরা মিথ্যা বলতে পারে না। নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্ত এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, সরকারি দল ও নির্বাচন কমিশন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে। এ নির্বাচন নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি বার্তা বহন করছে। বার্তাটি হলো, একটি আসনে উপ নির্বাচনর সুষ্ঠুভাবে করতে পারল না; সেখানে তিনশ’ আসনের ভোটগ্রহণ সুষ্ঠুভাবে করবে কীভাবে ? তবে এ আসনে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে নির্বাচন কমিশন যথার্থ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন মতপ্রকাশ করেন।
সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে যথার্থ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জনগণ নির্বাচন কমিশনে এ সিদ্ধান্তকে ভালভাবে নিয়েছে। দেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসা উচিত। গাইবান্ধার নির্বাচনে বিএনপির মতো বড় দল অংশ নেয়নি। মাত্র একটি আসনে ভোট হয়েছে। সরকারী দল নির্বাচনে জয়ী হবে বলে একটি ব্যবস্থা করেছিলো। কিন্তু নির্বাচন কমিশন গুড়েবালি দিয়েছে। এতে সরকারি দল প্রতিক্রিয়া দেখাবে না এটা আশা করা যায় না। তবে তিনি মনে করেন, একটি আসনের নির্বাচনকে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করা যায় না।
#