বুধবার   ১৯ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৫ ১৪৩২   ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

কালনা সেতু উদ্বোধনের পর পায়ে হেঁটে পার হতে মানুষের ঢল

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:৪০ এএম, ১১ অক্টোবর ২০২২ মঙ্গলবার

নড়াইলের লোহাগড়ার মধুমতি নদীর ওপর নির্মিত বহুল প্রত্যাশিত মধুমতি কালনা সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুর ১টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর থেকে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। উদ্বোধনের পর সেতুটি দিয়ে পায়ে হেঁটে পার হতে মানুষের ঢল নামে। তবে টোল দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয় সোমবার রাত ১২টা থেকে।

সেতুটি উদ্বোধনের পর থেকে রাত পর্যন্ত পুরো সেতু ও তার দুই প্রান্ত জুড়ে কয়েক হাজার উৎসুক মানুষের ঢল নামে। দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের পর কাঙ্খিত সেতুর উদ্বোধন যেন অন্যরকম  আবেগ, অনুভূতিতে একাকার হয়ে গেছে। সেতুর ওপর উঠতে পেরে স্বপ্ন পূরণের স্বাদ উপভোগ করেন। অনেকেই পায়ে হেঁটে লোহাগড়া প্রান্ত থেকে ভাটিয়াপাড়া মোড় পর্যন্ত চলে যান। আবার সেতুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে মধুমতি নদীর অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করেন।স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। 

দর্শনার্থীরা বলেন, ‘আজ সেতুটি চালু হলো। সুযোগ পেয়েই সেতুর ওপর চলে এসেছি। প্রচণ্ড রোদকে উপেক্ষা করে সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে স্বপ্ন পূরণের আনন্দ উপভোগ করছি। সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে মধুমতি নদীর সৌনন্দ উপভোগ করেছি। আগে নৌকা পার হয়ে গোপালগঞ্জ এলাকায় আসতে হতো। এখন পায়ে হেঁটেই চলে এসেছি। আজকের দিনটি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্বরণীয় হয়ে থাকবে।’

phot 2 (1)উদ্বোধনের পর কালনা সেতু দিয়ে পায়ে হেঁটে পার হতে মানুষের ঢল নামে।

নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা বলেন,‘ আমাদের আবেগ আর ভালোবাসার নাম পদ্মা ও মধুমতি সেতু। পদ্মাসেতু চালু হলেও মধুমতি সেতু চালু না হওয়ায় আমরা পরিপূর্ণ সুবিধা ভোগ করতে পারছিলাম না। মধুমতি সেতু চালুর মধ্যদিয়ে আমাদের সকল ধরণের ভোগান্তি কমে গেলো। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। মধুমতি সেতু নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী আমাদের সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।

মধুমতি সেতু নিয়ে সিনিয়র সাংবাদিক আকরামুজ্জামান মিলু বলেন, তার দাদা ও বাবা-চাচারা নৌকায় মধুমতি নদী পারাপার হয়েছেন। তিনি ৫০ বছর ধরে মধুমতি নদীর কালনা খেয়াঘাট পার হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করেছেন। এখন আর ঝুঁকি নিয়ে খেয়া পারাপার হতে হবে না, এটা ভাবতে আনন্দ লাগছে। আগে গাড়ি পরাপার হতে সময় লাগতো। এখন সড়কপথে মধুমতি সেতু দিয়ে যাতায়াতের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চালের উন্নয়ন হবে। শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের যোগাযোগ সহজ হবে ও কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
          
চরকালনা গ্রামের কৃষক শাহিদুল ইসলাম বলেন, আগে ঢাকায় যেতে একদিন সময় লাগত। এখন দুই ঘণ্টা আড়াই ঘণ্টার মধ্যে কাঁচা সবজি নিয়ে আমরা ঢাকায় যেতে পারবো। কালনা সেতু হয়ে আপনার লাভ কী এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কৃষক বলেন, ফেরি পারাপার একটা ভোগান্তি। সেতু হওয়ায় এখন যাতায়াতটা সহজ হয়ে গেল। এছাড়া আশপাশে শিল্প কলকারাখানা হবে এমন আভাসে অনেকে জমি কিনছেন।ইতিমধ্যে জমির দামও অনেকগুন বেড়ে গেছে।

photo 1উদ্বোধনের পর কালনা সেতু দিয়ে পায়ে হেঁটে পার হতে মানুষের ঢল নামে
       
এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, মধুমতি সেতু উদ্বোধনের ফলে মূলত এখন আমরা পদ্মা সেতুর পূর্ণাঙ্গ সুফল ভোগ করতে পারবো। ঢাকা থেকে নড়াইলে আসতে সর্বোচ্ছ দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগবে। ঢাকা থেকে কলকাতার দূরত্বও কমে যাবে। একদিকে যেমন সময় বাঁচবে, অন্যদিকে এ এলাকার মানুষের ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
             
এর আগে গত ২০১৫ সালে সেতুর  ভিত্তি প্রস্তর করেছিলেন। ২০১৮ সেপ্টেম্বরে মধুমতি সেতুর কাজ শুরু হয়। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে ৯৫৯ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এ সেতু নির্মিত হয়েছে।  সেতুর মাঝখানে বসানো হয়েছে ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্টিলের স্প্যান যা ধনুকের মতো বাঁকা।  ছয় লেনের এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির ও দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেতুর দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার ও প্রস্থ ২৭ দশমিক ১০ মিটার।