ইসলামে সব ধরনের জুয়া হারাম
ধর্ম ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১১:৫৯ এএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ শুক্রবার
জুয়া খেলার আধুনিক ব্যবস্থাপনা ও আসরকে ক্যাসিনো বলা হয়। বিভিন্ন দেশে ক্যাসিনো ব্যবসা বৈধ হলেও বাংলাদেশের আইনে তা অবৈধ। আর ইসলামে জুয়া সম্পূর্ণ হারাম ও নিষিদ্ধ। কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে জুয়া ঘৃণ্য কাজ।
বুধবার র্যাব অভিযান চালিয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানের চারটি ক্যাসিনো বন্ধ করে দিয়েছে। এ সময় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রায় ৬০টির বেশি ক্যাসিনো রয়েছে, যেখানে জুয়ার পাশাপাশি নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো বলে অভিযোগ আছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশ এবং পাবলিক গ্যাম্বলিং আইন অনুসারে টাকার বিনিময়ে জুয়া খেলা অবৈধ। স্বাভাবিকভাবে আমাদের সমাজে যেকোনো পর্যায়ের জুয়া খেলাকে ঘৃণিত ও গর্হিত কাজ হিসেবে দেখা হয়। ইসলামের দৃষ্টিতেও তা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং জুয়ার মাধ্যমে উপার্জিত সম্পদ হারাম।
জুয়াকে আরবিতে ‘মায়সির’ ও ‘কিমার’ বলা হয়। মায়সির ও কিমার এমন খেলাকে বলা হয়, যা লাভ ও ক্ষতির মধ্যে আবর্তিত থাকে। অর্থাৎ যার মধ্যে লাভ বা ক্ষতি কোনোটাই স্পষ্ট নয়। জুয়ার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। নবী করিম (সা.)-এর আগমনের সময় তৎকালীন মক্কায় নানা ধরনের জুয়ার প্রচলন ছিল। বর্তমানে প্রাচীন পদ্ধতি ছাড়াও জুয়ার ক্ষেত্রে আরও বহু নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। যেমন হাউজি, টাকা বাজি রেখে ঘোড় দৌড়, ক্রিকেট নিয়ে জুয়া ও তাস খেলা ইত্যাদি, এগুলোর সবই হারাম।
জুয়া হারাম হওয়ার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, শুধু নাম পরিবর্তনের কারণে বস্তুও মূল প্রকৃতি এবং হুকুম পরিবর্তন হয় না। কাজেই প্রাচীনকালে প্রচলিত জুয়া সম্পর্কে যে হুকুম প্রযোজ্য ছিল, আধুনিককালের জুয়ার ক্ষেত্রেও সেসব হুকুম প্রযোজ্য।
ইসলামি শরিয়তে জুয়া হারাম। একাধিক কোরআনের আয়াত ও হাদিসে এ সম্পর্কে স্পষ্ট বিবরণ রয়েছে। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো, তাহলেই তোমরা সফলকাম হতে পারবে। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণে ও নামাজ আদায়ে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না।’ সুরা মায়িদা : ৯০-৯১।
বর্ণিত আয়াতে মদ ও জুয়াকে ঘৃণ্য বস্তু আখ্যায়িত করা হয়েছে। এগুলোকে শয়তানের কাজ বলা হয়েছে। আয়াতে এগুলো থেকে দূরে থাকার হুকুম করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, এতে পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। অধিকন্তু এর দ্বারা শয়তান মানুষকে নামাজ আদায় করা এবং আল্লাহতায়ালার স্মরণ থেকে বিমুখ রাখে। কাজেই মদের মতো জুয়াও হারাম। এর হারাম হওয়ার বিষয়টি কোরআনের অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত। যদি কেউ এই হুকুমকে অস্বীকার করে, তবে সে কাফের বলে গণ্য হবে।
এ প্রসঙ্গে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কেউ যদি তার সাথীকে বলে, এসো জুয়া খেলব। তাহলে (এ কথার অপরাধের কারণে) সদকা করা তার ওপর অপরিহার্য। অতএব, জুয়াকে অর্থ উপার্জনের উপায় হিসেবে গ্রহণ করা যেমন কোনো মুসলমানের জন্য জায়েজ নেই, তেমনি একে খেলা ও অবসর বিনোদনের উপায়রূপে গ্রহণ করা বৈধ নয়। জুয়া খেলায় বহু অপকারিতা রয়েছে। এ খেলায় যেমন অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়, তেমনি এতে মানুষের চারিত্রিক ক্ষতিসাধিত হয়।
জুয়ায় অভ্যস্ত ব্যক্তি ক্রমান্বয়ে উপার্জনের ব্যাপারে অলস ও উদাসীন হয়ে ওঠে। জুয়ার জয়-পরাজয় মারামারি এমনকি হত্যাকাণ্ডের কারণ হয়। জুয়া খেলায় মানুষ আল্লাহ বিমুখ এবং নামাজ-রোজা তথা ইবাদত-বন্দেগির ব্যাপারে চরম উদাসীন হয়ে যায়। কেননা জুয়াড়ির একমাত্র ধ্যান-ধারণা কেমন করে আরও টাকা বানানো যায় অথবা কেমন করে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়া যায়। কাজেই জুয়ার এমন সর্বনাশা গ্রাস থেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য।
সমাজে প্রচলিত লটারি, হাউজি, ক্রিকেটে বাজি ধরা, চাক্কি ঘোরানো ও রিং নিক্ষেপ থেকে শুরু করে প্রভৃতি নামে নানা ধরনের জুয়ার প্রচলন রয়েছে। এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামেও বসছে জুয়ার আসর। কৃষক, তরুণ, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছেন মরণনেশা জুয়ায়। এসব আসরে উড়ছে লাখ লাখ টাকা। মাদকের মতোই জুয়ার ছোবল এখন দৃশ্যমান।
এমতাবস্থায় দেশের সচেতন অভিভাবকদের প্রত্যাশা, অনৈতিক এসব জুয়ার আসর বন্ধে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। আরেকটি কথা, সব ধরনের জুয়াবাজি অবৈধ এবং এর থেকে প্রাপ্ত সম্পদ হারাম। আর হারাম সম্পদ ভোগ করে ইবাদত-বন্দেগি করলে আল্লাহতায়ালার দরবারে তা কবুল হয় না। তাই মুসলমান হিসেবে সব ধরনের জুয়াবাজি থেকে দূরে থাকা আবশ্যক।
লেখক: মুফতি ও ইসলামবিষয়ক লেখক