মঙ্গলবার   ১৮ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৩ ১৪৩২   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

এশিয়ান গেমসে ভরাডুবির বছর

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১১:৫৫ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ শুক্রবার

কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে আরেকটি বছর। আর চারদিন পর দেয়ালের পুরনো ক্যালেন্ডারটি সরিয়ে জায়গা করে নেবে নতুন একটি। ২০১৯ সালকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে গোটাবিশ্ব। স্মৃতির খেরোখাতা থেকে ইতোমধ্যেই মানুষ মেলাতে শুরু করছে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব। সমাজের অন্যসব ক্ষেত্রের মতো ক্রীড়াঙ্গনেও চলছে সফলতা ও ব্যর্থতার চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিদায়ী বছরে দেশে ও দেশের বাইরে ক্রীড়াঙ্গনের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো নিয়ে ধারাবাহিক পর্যালোচনার আজকের পর্ব-এশিয়ান গেমস।

এশিয়ান গেমস ফুটবলে পদকের প্রত্যাশা কখনই ছিল না বাংলাদেশের। নিকট ভবিষ্যতে সে আশা করার মতো অবস্থাতেও নেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি। এশিয়ার সবচেয়ে বড় এই ক্রীড়াযজ্ঞে ফুটবলে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ মানেই নিয়ম রক্ষা। আর এ নিয়ম রক্ষার অংশগ্রহণে এবার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। এই প্রথম লাল-সবজু জার্সিধারী ফুটবল দল উঠেছে দ্বিতীয় রাউন্ডে। শীর্ষ ষোলো দলের মধ্যে থাকা বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন ইতিহাস।

আরেক দলীয় ডিসিপ্লিন হকিও প্রত্যাশিত ফলাফল করেছে এবার ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে। ষষ্ঠ হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে জিমি-চয়নদের প্রস্তুত করেছিলেন মালয়েশিয়ান কোচ গোবিনাথন কৃষ্ণমূর্তি। ষষ্ঠ হয়েই ফিরেছে।

ফুটবলে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা ও হকিতে প্রত্যাশিত ষষ্ঠ হওয়া ছাড়া এশিয়ান গেমসে বাকি ডিসিপ্লিনের অবস্থা খুবই খারাপ। যে সব ডিসিপ্লিনে পদক পাওয়ার সম্ভাবনায় দল পাঠায় বাংলাদেশ সেসব খেলায় এবার ডাব্বা মেরেছে বাংলাদেশ। অনেক দিন পর এশিয়ান গেমস থেকে শূণ্যহাতে ফিরেছেন বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা।

এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ১৯৭৮ সাল থেকে। প্রথম দুই আসরে পদকশূণ্য ছিল বাংলাদেশ। ১৯৮৬ সাল থেকে প্রতি আসরেই বাংলাদেশের নামের পাশে যোগ হয়েছে পদক। দীর্ঘ ৩২ বছর পর এবার এশিয়ান গেমস থেকে পদকশূণ্য ফিরেছে লাল-সবুজের দেশ। গেমসে পদক না পাওয়া ৮ দেশের মধ্যে একটি বাংলাদেশ।

এশিয়ার সবচেয়ে বড় ও মর্যাদার ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের পদক না পাওয়ার লজ্জা ৩২ বছর পর। ১৯৭৮ সালে এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের অভিষেক। ৭৮ ও ৮২ সালে বাংলাদেশ পদক পায়নি। তবে ১৯৮৬ সালে সিউল এশিয়ান গেমসে প্রথম পদক তালিকায় নাম ওঠে বাংলাদেশের। বক্সিংয়ে মোশারফ হোসেন বাংলাদেশের প্রথম ক্রীড়াবিদ হিসেবে ব্রোঞ্জ পদক পড়েন গলায়।

১৯৮৬ থেকে ২০১৪ সাল-এই ৩২ বছর বাংলাদেশ এশিয়ান গেমস থেকে ফিরেছে পদক তালিকায় নাম উঠিয়েই। ১৯৯০ সালে গেমস অন্তর্ভূক্ত হয় কাবাডি। এ খেলা থেকেই একটা পদক এসেছে প্রতি আসরে। ২০১০ সালে গুয়াংজু এশিয়ান গেমসে ক্রিকেট অন্তর্ভূক্ত হলে বাংলাদেশ পুরুষ বিভাগে স্বর্ণ, নারী বিভাগে রৌপ্য পদক পায়। ব্রোঞ্জ পায় প্রথম অংশ নেয়া নারী কাবাডি দল। ক্রিকেটের সৌজন্যে এশিয়ান গেমসে স্বর্ণ পদকের মুখ দেখে বাংলাদেশ।

ক্রিকেট ও নারী কাবাডির কল্যাণে গত ২০১৪ দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচনে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসেও পদক তালিকায় নাম উঠেছিল বাংলাদেশের। নারী ক্রিকেট দল পেয়েছিল রৌপ্য, পুরুষ ক্রিকেট ও নারী কাবাডি দল পেয়েছিল ব্রোঞ্জ পদক।

ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসের আগে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ)। এসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবার এশিয়ান গেমসে ১৪ ডিসিপ্লিনে ১১৭ জন ক্রীড়াবিদ পাঠিয়েছিল দেশের খেলাধুলার অন্যতম এ অভিভাবক সংস্থাটি।

কোচ ও অফিসিয়াল মিলে ছিলেন আরো ৩১। সেই সঙ্গে সেফ দ্য মিশন, ডেপুটি সেফ দ্য মিশন, ডাক্তার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও নামের আগে নানা পদবি লাগিয়ে ইন্দোনেশিয়া গিয়েছিলেন আরো ১৫ জন। নানাভাবে দলটি ভারি করলেও প্রাপ্তির থাকা শূণ্যই থেকেছে।

অফিসিয়ালি ১৬৩ জনের দল অংশ নিয়েছিলেন এশিয়ান গেমসে। এর বাইরে আরো কয়েক ডজন গিয়েছিলেন গেমসের নামে ভ্রমণে। গেমসের আগে নানা প্রত্যাশার গান গেয়েছিলেন কর্মকর্তারা। কিন্তু গেমস শেষে লজ্জা নিয়েই ঘরে ফিরেছে বিশাল বহর।

অ্যাথলেটিকস, আরচারি, বাস্কেটবল, ব্রিজ, ফুটবল, গলফ, হকি, কাবাডি (পুরুষ), কাবাডি (মহিলা), সাঁতার, ভারোত্তোলন, কুস্তি, শ্যুটিং, বিচ ভলিবল ও রোইংয়ে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ খালি হাতে ফিরেছে। কয়েকটি ডিসিপ্লিনে দল পাঠিয়ে বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন।