রোববার   ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আশ্বিন ৫ ১৪৩২   ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

বছরের শুরুতেই নিন সবুজবান্ধব পদক্ষেপ

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৯:৩০ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ শুক্রবার

নতুন বছর ঘিরে পরিকল্পনা থাকে কমবেশি সবারই। আর পরিবেশ বিষয়ে যারা বরাবরই ভাবেন, নতুন বছরে সবুজকে স্বাগত জানানোর জন্য তারা কিছু উদ্যোগ নিতেও পিছপা হন না। যে কথা না বললেই নয় তা হলো, সবুজ জীবনযাপন কেবল অর্গানিক পণ্য ব্যবহার ও বাজেয়াপ্ত জিনিসকে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে তোলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার্য উপকরণ থেকে খাওয়া-দাওয়ায়ও এর ছাপ বিদ্যমান। এই যেমন রান্নার পাত্র, পরিধেয় কাপ, ঘরের আলোক ব্যবস্থা এমনকি কেমন যানবাহনে চড়ে কর্মস্থলে যাচ্ছেন এসব ক্ষেত্রেও এর প্রভাব রয়েছে বৈকি! তাই সবুজ জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই গড়ে তুলুন কিছু অভ্যাস।

নিরাপদ সাবান

বাইরে থেকে ফিরেই হাত ধুতে বেসিনে যাই আমরা। তবে জীবাণুনাশের জন্য যে সাবান ব্যবহার করা হয় তা শরীর, ত্বক ও পরিবেশের জন্য কতটুকু উপযোগী’ তা ভেবেছেন কি? গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব সাবানে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল উপাদান ট্রাইক্লোজেন ও ট্রাইক্লোকার্বন রয়েছে, সেগুলো অন্যসব সাবানের চেয়ে— যেগুলোয় এসব উপাদান নেই— খুব একটা কার্যকরী ভূমিকা রাখে না। এসব অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার প্রজনন ঘটায়। পাশাপাশি হরমোন তৈরিতে বিঘ্নতা ও পেশির দুর্বলতার অন্যতম কারণও হয়ে দাঁড়ায়। তাই যেসব সাবানে এসব ক্ষতিকারক উপকরণ নেই, সেগুলো ব্যবহার করুন। সম্ভব হলে বাড়িতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে নিন। এজন্য বিশুদ্ধ পানি, অ্যালোভেরা জেল, দারচিনি গুঁড়ো, লবঙ্গ গুঁড়ো, লেবুর রস দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে স্প্রে বোতলে ভরে রাখুন। হাত ধোয়ার সময় এ মিশ্রণ ব্যবহার করুন।

ঘরের জন্য

বর্তমানে ঘরের সাজসজ্জায় বিভিন্ন ধরনের বাতি আমরা ব্যবহার করি। ঘরের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য অনেক পাওয়ারের বাতিও লাগানো হয়। তবে কথা যখন সবুজের পক্ষে, তখন বলতেই হবে যে কমপ্যাক্ট ফ্লুরেসেন্ট লাইট (সিএফএল) ব্যবহার করে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে শক্তি অপচয় রোধ করা সম্ভব। কারণ সিএফএল বাল্ব দ্যুতিময় বাল্বের চেয়ে ৭৫ শতাংশ কম শক্তি অপচয় করে ও আলো দেয় ১০ গুণ বেশি সময় অবধি। আবার শক্তির অপচয় রোধে ঘরে এয়ারকন্ডিশনের পরিবর্তে লাগানো যেতে পারে সিলিং ফ্যান। কারণ ফ্যান এয়ারকন্ডিশনের তুলনায় ১০ শতাংশ কম শক্তি ব্যবহার করে। বাড়িতে কাপড় ধোয়া বা গোসলের জন্য গিজারের ব্যবস্থা রাখা হয়। কিন্তু এটিও কিছু শক্তিক্ষয় করে। তাই হাঁড়িতে পানি গরম করে ব্যবহার করলে এ অপচয় আর হবে না।

রান্না ও খাওয়া-দাওয়া

রান্নাঘর থেকে বছরের শুরুতেই সরিয়ে ফেলুন ননস্টিক কুকওয়্যার। কারণ এর মসৃণ পৃষ্ঠ তৈরি করতে এক ধরনের রাসায়নিক পরত বসানো হয়, যার নাম ফ্লুরোপলিমার। উচ্চতাপে রান্না করার সময় এ রাসায়নিক উপাদান বাতাসে ছড়িয়ে যায়। তাছাড়া এ রাসায়নিক উপাদান ভেঙে পারফ্লুরোকটানোইক অ্যাসিডে পরিণত হয়, যা মিশে যায় খাবারে। পরবর্তীতে এটি হূদরোগ তৈরি করে। তাই এর পরিবর্তে ব্যবহার করুন লোহার কড়াই। তাছাড়া বাড়িতে অতিথি এলে বা কোনো অনুষ্ঠানে ওয়ান টাইম প্লেট, গ্লাস বা স্ট্র ব্যবহার না করাই ভালো। এগুলো প্রচুর আবর্জনা তৈরি করে ও সহজে মাটিতে মেশে না বলে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

 

গাছের পরিচর্যা ও পোকামাকড় নিধন

একজন পরিবেশপ্রেমীর বাড়িতে গাছ থাকবে না— এ কথা যেন ভাবাই যায় না। তাই অন্দরের সবুজের স্বাস্থ্য রক্ষায় নিয়মিত গাছে পানি দিতে হবে ও প্রাকৃতিক সার ব্যবহার করতে হবে। গাছে নানা ধরনের পোকামাকড় হতে পারে বা শীতের সময় প্রচুর মশার উৎপাত দেখা দিতেই পারে। তবে এজন্য কীটনাশক ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক সমাধান খুঁজতে হবে। মশার উৎপাত কমাতে ডিশওয়াশিং সাবানের সঙ্গে ভিনেগার মিশিয়ে বাড়ির পাশের ঝোপ ও আনাচে-কানাচে স্প্রে করুন। টানা কয়েক দিন করলে মশা কমে যাবে।

পরিবেশবান্ধব পরিষ্কারক

ঘরের আসবাবপত্র পরিচ্ছন্ন করার জন্য দামি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল পরিষ্কারক ও সাবানের পরিবর্তে পরিষ্কারক হিসেবে সাদা ভিনেগার ও পানি ব্যবহার করুন। কারণ বাজারি পরিষ্কারকের মধ্যে যেসব উপকরণ থাকে, তা থাইরয়েডের ক্ষতিসাধন করে ও পানি দূষিত করে। ১০ ভাগ পানিতে এক ভাগ ভিনেগার মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে রাখুন। পরিষ্কারক হিসেবে ব্যবহার করুন। আবার বাসন পরিষ্কারের জন্য ব্যবহার করতে পারেন ভিনেগার, বেকিং সোডা, লেবু ও লবণ।