রোববার   ১০ আগস্ট ২০২৫   শ্রাবণ ২৫ ১৪৩২   ১৫ সফর ১৪৪৭

হুয়াওয়ের প্রতি শতাধিক চীনা প্রতিষ্ঠানের অকুণ্ঠ সমর্থন

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৮:৫১ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ শুক্রবার

চীন সরকারের হয়ে নজরদারির অভিযোগে হুয়াওয়ের নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একই কারণে ইউরোপেও বেকায়দায় আছে চীনা প্রতিষ্ঠানটি। তার ওপর চলতি মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে হুয়াওয়ের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মেং ওয়ানঝুকে ভ্যানকুভার থেকে আটক করে কানাডার পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গে প্রতারণার আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ আছে। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতি হুয়াওয়ের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে চীনের শতাধিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। তারা হুয়াওয়ের পণ্য কিনতে ভর্তুকি দেয়ার পাশাপাশি অ্যাপলসহ মার্কিন পণ্য বর্জনের আহ্বান জানাচ্ছে। এমনকি যারা এ নির্দেশনা মানবে না, তাদের শাস্তি বা জরিমানার হুমকিও দেয়া হচ্ছে। খবর গ্যাজেটস থ্রিসিক্সটিডিগ্রি।

হুয়াওয়ের পাশে দাঁড়িয়েছে এমন চীনা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের তালিকা বেশ দীর্ঘ। এর মধ্যে প্রযুক্তি থেকে শুরু করে খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। চীনের অনেক নাগরিকের কাছে এটা শুধু নিছক বাণিজ্যযুদ্ধ নয়, বরং জাতীয় স্বার্থ। এ কারণে তারা সাগ্রহে দেদার হুয়াওয়ের পণ্য কিনতে ভর্তুকি ও প্রণোদনা দিচ্ছেন। অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের কর্মীদের হুয়াওয়ের ডিভাইস কেনার জন্য ১০ থেকে ২০ শতাংশ দাম দেয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে, কেউ কেউ আবার পুরো দাম দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

নিক্কেই এশিয়ান রিভিউর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, সাংহাইয়ের একটি ইলেকট্রনিক পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্রত্যেক কর্মীকে দুটি হুয়াওয়ে ফোন ভর্তুকি হিসেবে দিচ্ছে। শেনঝেনের একটি প্রতিষ্ঠান কর্মীদের কেউ হুয়াওয়ে বা জেডটিইর ডিভাইস কিনলে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত দাম পরিশোধ করার ঘোষণা দিয়েছে। হেনান প্রদেশের এক পানীয় উৎপাদনকারী কর্মীদের পাশাপাশি গ্রাহকদেরও হুয়াওয়ের পণ্য কেনার বিপরীতে দামের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত পানীয় ফ্রি দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও হুয়াওয়েকে চীন সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হয়। চীনে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টিও হুয়াওয়ের জন্য করপোরেট সমর্থনে উৎসাহ দিচ্ছে। দেশটির আঞ্চলিক সরকারের এক কর্মকর্তা নিক্কেইকে জানান, হুয়াওয়ের ডিভাইস কেনার বিপরীতে প্রণোদনা বা ভর্তুকি দিচ্ছে এমন চীনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কয়েকশ।

তবে হুয়াওয়ের প্রতি চীনাদের সমর্থন প্রতিষ্ঠানটির পণ্য কেনা বা ভর্তুকি দেয়াতে সীমাবদ্ধ নেই। কিছু চীনা প্রতিষ্ঠান একধাপ এগিয়ে কর্মীদের অ্যাপলের পণ্য বর্জনের আহ্বান জানাচ্ছে। নিক্কেইয়ের প্রতিবেদনে জানানো হয়, সম্প্রতি শেনঝেনের একটি যন্ত্রপাতি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কর্মীদের কাছ থেকে অ্যাপলের পণ্য বাজেয়াপ্ত করা এবং এতে বাধা দিলে ছাঁটাই করার হুমকি দিয়েছে। মেনপ্যাড নামের শেনঝেনের একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের পণ্য কেনার বিষয়ে কর্মীদের সতর্ক করেছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, যে ব্যক্তি অ্যাপলের পণ্য কিনবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আইফোন কিনলে বোনাস বাতিল বা দামের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা হিসেবে কেটে নেয়ার কথা জানিয়েছে।

অবশ্য এ বর্জন শুধু অ্যাপলের পণ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, মেংপাই টেকনোলজি নামের একটি প্রতিষ্ঠান মার্কিন যানবাহনসহ সব ধরনের আমেরিকান দাপ্তরিক যন্ত্রপাতি কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনের জের ধরে চীনা ভোক্তা এবং প্রতিষ্ঠানের বিদেশী পণ্য বর্জনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। সেনকাকু দ্বীপ নিয়ে বিরোধের জের ধরে ২০১২ সালে দেশটিতে জাপানি পণ্যের বেশকিছু গুদাম ধ্বংস করে দেয়া হয়। অতীতে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাইসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানও এ ধরনের বর্জনের মুখে পড়েছিল। ২০১৬ সালে অ্যাপলও এ ধরনের ক্ষুদ্র ও ক্ষণস্থায়ী প্রতিবাদের মুখে পড়েছিল। প্যাটেন্ট নিয়ে কোয়ালকমের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে চীনের একটি আদালতও চলতি মাসের শুরুতে কয়েকটি মডেলের আইফোন বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

চীন এবং হুয়াওয়ের দাবি, ওয়াংঝুকে বেআইনিভাবে আটক করা হয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য, তিনি একটি চীনা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন, যার সঙ্গে হংকংয়ের একটি প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ ছিল। হংকংয়ের ওই প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মার্কিন পণ্য ইরানের কাছে বিক্রি করেছিল। এ অভিযোগে ওয়াংঝুকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তরের ঝুঁকি আছে। এ কারণে ওয়াংঝু পেলেও হুয়াওয়েকে সমর্থনকারী চীনা প্রতিষ্ঠানের সমর্থন কমেনি, বরং বাড়ছে।