মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ব্যবসায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জাতিসংঘের
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০১:১২ পিএম, ৭ আগস্ট ২০১৯ বুধবার

মিয়ানমারের অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের তদন্তকারী একটি দল। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নৃশংস সেনা অভিযান পরিচালনার অর্থায়ন সহ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ব্যায় এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বহন করা হয় বলে তদন্তকারী দলটি নিশ্চিত করেছে।
সোমবার জাতিসংঘের তদন্তকারী দলটি তাদের এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তারা জানায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত এ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক লেনদেন রয়েছে। যেহেতু রাখাইনে গণহত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তাই তাদের সঙ্গে ব্যবসা করা এসব কাজে তাদের সহযোগিতা করারই শামিল। আর এ জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন বন্ধ করতে বিশ্বের সব প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনা অভিযানে রাখাইন থেকে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যান। এ সময় তাদের অনেককে হত্যা করা সহ অনেক নারীকে ধর্ষণ ও তাদের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
“প্রথমবারের মতো প্রতিবেদনে বেরিয়ে এলো যে, এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নির্দিষ্ট ইউরোপীয় ও এশিয়ান কিছু প্রতিষ্ঠানের লেনদেন রয়েছে, যা জাতিসংঘের চুক্তি ও আদর্শ ভঙ্গের শামিল,” জাকার্তায় রোববার তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান মারজুকি দারুসমান এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
তদন্তে মিয়ানমারের প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, হংকং ও চীনেরও অন্তত ৫৯টি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ মিলেছে যেগুলোর সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কোনো-না-কোনো যোগসাজশ রয়েছে।
প্রতিবেদনে এ সকল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসা না করার পাশাপাশি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কাছে অস্ত্র না বিক্রির আহ্বানও জানানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ইসরায়েল, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের ১৪টি প্রতিষ্ঠান ২০১৬ সাল থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে।
দারুসমান আরো বলেন, “কর্পোরেশনের ভেতরে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও তাদের কাজের জন্য দায়বদ্ধ।” তাই তিনি মনে করেন, সেনাবাহিনীর কাছে অস্ত্র বিক্রি করে তারাও পরোক্ষভাবে “মিয়ানমারের জনগণের ওপর নির্যাতনের জন্য দায়ী।”
তদন্ত প্রতিবেদনটি মিয়ানমার সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের পক্ষ থেকে প্রতিবেদনের বিষয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কথা বলার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে মিয়ানমার সরকার বরাবরই রাখাইন প্রসঙ্গে জাতিসংঘের অবস্থানকে ‘একপাক্ষিক' বলে দাবি করে এসেছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া ও ক্যানাডা মিয়ানমারের উচ্চপদস্থ সেনাকর্মকর্তাদের তাদের দেশে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সর্বশেষ গেল জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট বার্মিজ সেনাপ্রধান মিন অং হ্লায়েং-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। জাতিসংঘ মিয়ানমারের উচ্চপদস্থ সেনাকর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিসি)-তে বিচারের আহ্বান জানিয়েছে। আইসিসি এরই মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে।