বঙ্গবন্ধুর নৌকা বানিয়ে জীবন পার
নিজস্ব প্রতিবেদক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০২:৪১ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ শুক্রবার
নৌকা বানিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে দেন আব্দুল মান্নান। তার নৌকায় থাকে আল্পনার রঙতুলি। এসব নৌকা বানিয়ে জীবন স্মৃতিও তুলে ধরেন। যেমন প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। পাকিস্তানি সেনা, বিহারিসহ অসংখ্য রাজাকারদের নিজ হাতে হত্যা করেছেন।
এলাকার সবাই জানেন তিনি মুক্তিযোদ্ধা। তবে স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও স্বীকৃতি পাননি। এতে তার মনে অনেক আক্ষেপ আছে। কিন্তু বয়োবৃদ্ধ এই মান্নান এখনো কারো কাছে মাথা নত করেননি। নিজ হাতে ‘বঙ্গবন্ধুর নৌকা’ বানিয়ে জীবন সংগ্রাম করে চলেছেন। এই নৌকাই তার জীবনের প্রধান অবলম্বন।
আব্দুল মান্নান ঈশ্বরদী পৌরসভার সাঁড়াগোপালপুর গ্রামের মহব্বত আলী চৌধুরীর ছেলে।
আব্দুল মান্নান বলেন- বিয়ের ছয় থেকে সাতদিন তখন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। ঘরে গৃহবধূ। দেশের মায়ায় ঘর ছেড়েছি। ঈশ্বরদীর বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধে অংশ নেই। কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন কাজী সদরুল হক সুধা, কমান্ডার জন। গ্রুপ লিডার ছিলেন জিয়াউল। দেশ স্বাধীনের পর অস্ত্র জমা দিয়ে রিকশা চালিয়ে, দিন মজুরির কাজ করেছি। গ্যারেজে সাইকেল, রিকশা মেরামতের কাজ করে সংসার চালিয়েছি।
এরপর হঠাৎ পেশা পাল্টে ফেলি। ২০ বছর আগে শখ করে টুকরো টিন দিয়ে নৌকা বানানো শুরু করি। এরপর থেকে নৌকা বানানোর নেশায় পেয়ে বসে তাকে। এরপর থেকে তিনি ছোট ছোট নৌকা বানিয়ে সাজিয়ে রাখেন নিজের ছোট্ট দোকান ঘরে।
আওয়ামী লীগের জনসভা হলে কিংবা কোন নেতাকে উপহার দেয়ার জন্য সবাই তার কাছ থেকে কিনে নেয়। প্রথমে তেমন একটা গুরুত্ব না দিলেও এলাকায় ‘নৌকা মান্নান’ হিসেবে পরিচিত পেয়েছেন তিনি। তার তৈরি নৌকা দেশের অনেক মন্ত্রী ও নেতাদের শোকেসে শোভা পাচ্ছে।
এই নৌকা বানিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার। চোখের সামনে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ছড়াছড়ি। তারা যখন ভাতাসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা পায় তখন আব্দুল মান্নানের ভিষণ কষ্ট হয়।
আব্দুল মান্নান বলেন, যখন কোন রাজাকারকে দেখি স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছেন। তখন চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারি না।সাঁড়াগোপালপুরেই তিন থেকে চারজন মুক্তিযোদ্ধা আছেন। তারা সব সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদে খোঁজ নিয়ে জানা যায় মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে ‘আবেদন যথাযথ ভাবে দাখিল হয়েছে (নং-ডিজিআই ১০১২৮৭)’ বলে একটি কাগজ এসেছে কিন্তু এখনো মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম ওঠেনি। এরইপূর্বে সারাদেশে এ ধরনের ১৭২ জনের নামের তালিকা করা হলেও সে তালিকা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
এলাকার মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার কামরুজ্জামান বলেন, আব্দুল মান্নান তাদের সঙ্গেই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় এখনো অন্তর্ভূক্ত না হওয়াটা খুবই দুঃখজনক।
