সপ্তাহব্যাপী মন্দার কবলে পর্যটন খাত
নিউজ ডেক্স
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১২:৫৩ এএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ শুক্রবার

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ডামাডোলে মন্দার কবলে পড়তে শুরু করেছে দেশের পর্যটন খাত। এ মন্দা চলবে এক সপ্তাহব্যাপী। যার প্রভাব ইতোমধ্যে পড়তেও শুরু করেছে। প্রায় পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে কক্সবাজার, ইনানী, সেন্টমার্টিন সমুদ্র সৈকত, রাঙ্গামাটি ও বিভিন্ন পর্যটন এলাকা। সেই সঙ্গে পর্যটনকেন্দ্র, হোটেল ও মোটেলগুলো সিট বুকিং কমে গেছে। ধস নেমেছে যাত্রী পরিবহন ব্যবসা ও নৌ পথের জাহাজের টিকেট বুকিংয়েও।
বিভিন্ন হোটেল, পরিবহন ব্যবসায়ী ও ট্যুর এজেন্সি ও পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পর্যটন এলাকাগুলোতে দুইদিন আগে থেকে বাস ও মাইক্রোবাস ভাড়া কমে গেছে। কমে গেছে পর্যটকও। সেই সঙ্গে বৃহস্পতিবার থেকে সকল হোটেলে থাকা পর্যটকরা হোটেল ও মোটেল ছাড়তে শুরু করেছে। রাতের মধ্যে পুরো কক্সবাজার, ইনানী ও সেন্ট মার্টিন সমুদ্র সৈকত, রাঙ্গামাটির বিভিন্ন পয়েন্ট পর্যটক শূন্য হয়ে পড়বে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র তীরে ভূতুরে পরিবেশ নেমে আসছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ছুটে যাওয়া মানুষেরা ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। এ কারণে সেসব এলাকা থেকে ছেড়ে আসা দুরপাল্লার বাসগুলোর টিকেট নিয়ে কাড়াকাড়িও চলছে। কেউ কেউ এর সুযোগ নিয়ে ভাড়া দ্বিগুণ করেছেন।
তারা আরও জানিয়েছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের মাঝে কোনো ধরনের আতঙ্ক নেই। তবে টানা দুই দিন যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা কেউই পর্যটন এলাকাগুলোতে থাকার ঝুঁকি নিচ্ছেন না। পর্যটকরা স্ব-ইচ্ছায় হোটেল ছেড়ে দিয়েছেন। নতুন বছরের ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যটন খাতে এ প্রভাব থাকবে বলে মনে করছেন তারা। তারা এও মনে করছেন, নির্বাচনে সহিংসতা বা মারামারির মতো ঘটনা ঘটলে এই মন্দা কাটিয়ে ওঠা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে।
রিভারিয়ান ট্যুরের সত্ত্বাধিকাকারী সৈয়দ মাহবুবুল হক বুলু বলেন, ‘পর্যটন সমৃদ্ধ এলাকাগুলোতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পর্যটক কমতে শুরু করেছে। যেহুতু আগামী ২৯ ও ৩০ তারিখে নির্বাচনী এলাকায় কোনো গাড়ি চলাচল করবে না। এ কারণে বিষয়টি মাথায় রেখে অনেক দেশীয় পর্যটক হোটেল ছাড়ছে। তাদের কেউ আর বেড়াতে যাচ্ছেন না। টানা দুদিন এমন নিষেধাজ্ঞার কারণে তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে হোটেল, বাস ও ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর ওপর। পর্যটক শূন্য সব জায়গা। বেশির ভাগ মানুষ বেড়াতে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে তারা এখন গ্রামে ছুটছে। তারা এবার ভোট দিতে যাওয়াকেই হয়তো বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে।’
পরিবহন ও জাহাজ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ভুট্টো রহমান নামের একজন ব্যবসায়ী জানান, গত তিন দিন আগে থেকে তার প্রাইভেট কারের ব্যবসায় মন্দা চলছে। তিনি কোনো ভাড়া পাচ্ছেন না। অথচ কয়েকদিন আগে কারগুলো ভাড়া দিতে তাকে হিমসিম খেতে হতো। পর্যটক না পাওয়ায় তিনি ২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ রেখেছেন। সকল টিকেট বুকিংও তার বন্ধ। কারণ কোনো পর্যটক তার জাহাজের টিকেট কিনছে না।
ব্যবসায়ী ভুট্টো বলেন, ‘কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকার হোটেল মোটেলে যেসব পর্যটক উঠেছিলেন তারা ইতোমধ্যে কক্সবাজার ছাড়তে শুরু করেছেন। গত মঙ্গলবার থেকে ছাড়া শুরু হয়েছে। পুরো কক্সবাজার ফাঁকা হয়ে যাবে। কলাতলীতে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের ঝামেলা হওয়ায় যারা ছিলেন তারাও হোটেল ছাড়ছেন।’
কক্সবাজার ট্যূরিস্ট পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই এলাকায় পর্যটকরা থাকবে না। তারা এলাকা ছাড়তে শুরু করেছে। যেসব হোটেল ও মোটেলে পর্যটকরা ছিলেন তারা শুক্রবার সকালের মধ্যে ছেড়ে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি অঘঘোষিত নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
স্বপ্ন বিলাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফুর রহমান বলেন, ‘এখন কক্সবাজারে মাত্র ১ শতাংশ পর্যটক অবস্থান করছেন। আর এর মধ্যে যারা বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করেন তাদের মধ্যে ১০ শতাংশ আছেন। তারা কক্সবাজারের ১৭টি হোটেলে অবস্থান করছে। তা ছাড়া তারা কাজের খাতিতে আগে থেকেই থাকেন।’
তিনি জানান, সারা দেশের মতো কক্সবাজারেও এবার থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন হচ্ছে না। নির্বাচনের পরের দিনের রাত হওয়ায় নিষেধাজ্ঞাটা বেশি জোরালোভাবে মানছে পর্যটকরা। ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারে গাড়ি চলছে কিন্তু কোনো পর্যটক নেই।
হোটেল কল্লোলের আব্দুর রহমান নামের একজন কর্মচারী জানান, কক্সবাজারে গাড়ি চলছে তবে পর্যটক নাই। গত ২৫ থেকে ২৬ পর্যন্ত তাদের হোটেল বুকিং পেয়েছেন তারা। এরপর থেকে বন্ধ হয়ে গেছে বুকিং। পর্যটকরা তাদের হোটেলে আর কেউ উঠেনি। এখন পুরো হোটেল ফাঁকা।’
কক্সাবাজারে ৪২০টি হোটেল ও প্রায় ১০০ এর মতো মোটেল রয়েছে। এসব হােটেল ও মোটেলেই সাধারণত পর্যটকরা থাকেন। কিন্তু এখন পুরো কক্সবাজার সৈকতের তীরগুলো খাঁ খাঁ করছে। পর্যটক শূণ্য হয়ে পড়েছে পুরো কক্সবাজার এলাকা। যেসব বিদেশি পর্যটক আছেন তারা নেহায়েত নিজের কাজেই পড়ে আছেন। তাও সংখ্যায় খুব অল্প। পর্যটকের ভিড়ে কক্সবাজার, রামু, ইনানী, সেন্ট মার্টিন গমগম করলেও কয়েকদিনে এখন শূন্য।
পর্যটন নিয়ে কাজ করা একটি ট্যুরিজম কোম্পানির মালিক জানান, আগামী ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর দেশের সকল নির্বাচনি এলাকায় যানবাহন থাকায় পর্যটকরা ঝুঁকি নিচ্ছে না। তারা যেসব হোটেল ও বাসের টিকেট বুকিং দিয়েছিলেন তা বাতিল করছেন।
কক্সবাজার হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম জানান, সকল হোটেল থাকা পর্যটকরা বৃহস্পতিবার হোটেল ছেড়েছেন। আগামী চারদিন পর্যন্ত কোনো হোটেলে পর্যটক থাকছে না। বুকিংও দুইদিন আগে থেকে বন্ধ হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে পর্যটক শূন্য এখন কক্সবাজার।
রাঙ্গামাটি পর্যটন মোটেলের ম্যানেজার সৃজন বিকাশ জানান, গতবার তারা এই ডিসেম্বরে ৫৫ লাখ টাকা আয় করেছিলেন। কিন্তু এবার ১৫ লাখ কম আয় হয়েছে। তাদের পর্যটন মোটেলের ৮৬টি রুটের মধ্যে মাত্র আটটি ভাড়া রয়েছে, সেটিও শুক্রবার পর্যন্ত।
যে সকল পর্যটক ছিলেন তারা আজ রুম সবাই ছেড়ে চলে গেছেন। রাঙ্গামাটি এলাকার বিভিন্ন হোটেলগুলোতে এখন কোনো পর্যটক নেই বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘গত ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর তাদের মোটেলে বিদেশি পর্যটকরা বুকিং দিলেও পরে তা বাতিল করেছেন। এই সময়ে গতবার দারুণ ব্যবসা হয়েছিল। কিন্তু এবার তাও হচ্ছে না।’
কক্সবাজারের পর্যটন মোটেল লাবনীর ম্যানেজার রায়হান আলী জানান, তিনি গতবার এই সময়ে ২৬ লাখ টাকা আয় করলেও এবার ৯ লাখ টাকা কম করেছেন। নির্বাচনের কারণে এমন ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।