শুক্রবার   ১৬ মে ২০২৫   জ্যৈষ্ঠ ১ ১৪৩২   ১৮ জ্বিলকদ ১৪৪৬

বিশ্বকাপে তিন কারণে ব্যর্থ দক্ষিণ আফ্রিকা

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১০:০৪ এএম, ১৮ জুলাই ২০১৯ বৃহস্পতিবার

বিশ্বকাপ কিংবা বড় কোনো আসর মানেই দক্ষিণ আফ্রিকা সুপার ফ্লপ। কিন্তু তবুও কমপক্ষে প্রথম রাউন্ড পার হয়ে সম্ভাবনা তৈরি করে তারা। এরপর ভাগ্যদেবী আর সহায় হয় না। কিন্তু এবারের আসরে প্রোটিয়াদের দৈণ্যদশা ফুটে উঠেছে। প্রথম তিনটি ম্যাচই হেরে বসে তারা।  

প্রথম তিনটি ম্যাচ হারের পরে সমর্থকরা আশা করেছিলেন ফাফ দু প্লেসির দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের শেষ ম্যাচগুলিতে শক্ত লড়াই করবে। কিন্তু সেই লড়াই পাওয়াই গেল না চারবারের সেমি-ফাইনালিস্টদের কাছে। ২৩ জুন পাকিস্তানের কাছে লর্ডসে ৪৯ রানে হেরে এবারের মতো শেষ হয় প্রোটিয়াদের বিশ্বকাপ অভিযান। ২০০৩-এর পর এই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের নক-আউট পর্যায়ে পৌঁছাতে ব্যর্থ হল।

 

 

যদিও এবারের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা সেরা দল নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়। যেই দলটি এসেছিল, তা তাদের আগেকার দলগুলির তুলনায় খুবই দুর্বল। গত কয়েক মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার বেশ কিছু সিরিজ জিতলেও সেগুলি শক্তিশালী দলের বিপক্ষে ছিল না।

চোট-আঘাতে জর্জরিত দল দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনা ধাক্কা খায় প্রথম থেকেই। বিশেষ করে, তাদের পেস বোলিং বিভাগ। অভিজ্ঞ ডেল স্টেইন এবং প্রতিভাবান পেসার কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডিকে নিয়ে তারা পরিকল্পনা করে। কিন্তু স্টেইনের চোট এবং তার দল থেকে ছিটকে যাওয়া ভীষণভাবেই পরিকল্পনা ব্যাহত করে। চোটের জন্য সব ম্যাচে খেলতে পারেননি এনগিডিও। পেস-নির্ভর বোলিং নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা এমন ধাক্কা খাওয়ার পরে মাত্র একটি ম্যাচে খেলানো হয় স্টেইনের পরিবর্তে বেউরন হেনড্রিক্সকে। তিনি দলের ভরসার প্রতীক হতে পারেননি।

 

 

প্রোটিয়া দলে এবার অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের সংমিশ্রণ থাকলেও মাঠে দলের সিনিয়রদের মধ্যে অধিনায়ক ডু প্লেসিস ছাড়া আর কাউকে জ্বলে উঠতে দেখা যায়নি। খারাপ ফর্ম থাকা সত্ত্বেও দলে নেয়া হয়েছিল হাসিম আমলাকে। কিন্তু তিনি নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। ফর্মে ছিলেন না কুইন্টন ডি কক, জে পি ডুমিনি, ডেভিড মিলারের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রাও। তবে রাবাদাকে নিয়ে এবার স্বপ্ন দেখেছিল প্রোটিয়ারা। বলা হচ্ছিল এবারের বিশ্বকাপ হবে রাবাদার সঙ্গে ভারতের জসপ্রীত বুমরার লড়াইয়ের মঞ্চ। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার তরুণ পেসার কয়েক মাস আগে আইপিএল-এ দুর্দান্ত বল করলেও বিশ্বকাপে নিয়েছেন মাত্র ছ'টি উইকেট।

 

 

দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং অর্ডারে এখনও যে এবি ডি ভিলিয়ার্স-এর কোনও বিকল্প উঠে আসেনি, তা পরিষ্কার হয়ে গেল এবারের বিশ্বকাপে। পঁয়ত্রিশ বছরের এবি ডি এখনও হেসেখেলে ঢুকতে পারেন দু'প্লেসির এই সাধারণ মানের দলে। কিন্তু তিনি নিজেই এক বছর আগে অবসর নিয়ে কেন বসলেন, তা তিনিই জানেন। আর সাম্প্রতিক বিতর্ক অনুযায়ী তিনি যদি সত্যিই দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে বিশ্বকাপে খেলার ইচ্ছে প্রকাশ করে থাকেন, তাহলে দোষের ভাগীদার তিনিও। এখনও বেশ কিছু বছর এবি ডি-র ক্রিকেট বাকি রয়েছে। এই বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা তা পেল না আর এর দায় ওই মারকাটারি ব্যাটসম্যানের ঘাড়েও পড়ে। মাঝখান থেকে বিতর্কের কারণে মনোসংযোগ ক্ষুণ্ণ হয় দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়দের।

 

 

দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম বড় দুর্বলতা ছিল তাদের মন্থর এবং পরিকল্পনাহীন ব্যাটিং। প্রায় প্রতি ম্যাচেই বিপক্ষকে ৩০০ রানের উপরে করতে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা। তার উপরে ধীর ব্যাটিং করে দলকে আরও চাপে ফেলেছেন ব্যাটসম্যানরা। মাঝে সাঝে স্ট্রোকের ঝলক দেখিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তাতে সার্বিক পরিকল্পনার অভাব চোখে পড়েছে বেশি।

আর ফিল্ডিং নিয়ে তো দক্ষিণ আফ্রিকা ছিল একেবারে নিরামিষ। নিউজিল্যান্ড ম্যাচে যেভাবে তাদের খেলোয়াড়রা একের পর এক সুযোগ খুইয়েছেন, তা আন্তর্জাতিক লড়াইয়ে ক্ষমার অযোগ্য।