আর্চারের নায়ক হয়ে ওঠার গল্প
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৯:৪২ এএম, ১৮ জুলাই ২০১৯ বৃহস্পতিবার

মাত্র ৩ ম্যাচ ওয়ানডে খেলা জোফরা আরচার এখন ইংলিশ ক্রিকেটের হিরো। ৯০ মাইল গতির বল, বাউন্স আর ইয়র্কারে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের কাবু করে এবার বিশ্বকাপ এনে দিলেন ইংলিশদের। তাকে নিয়েই তো হবে এখন ইংলিশ মিডিয়ায় যত মাতামাতি।
জোফরা ক্যারিশমায় সুপার ওভার থ্রিলারে বিশ্বকাপ জিতেছে ইংল্যান্ড। নায়ক যে শুধু জোফরা আরচ্যার তা কিন্তু নয়, বেন স্ট্রোকসও আছেন তার সঙ্গে।
আরচারকে নিয়ে মিডিয়ার হুমড়ি খেয়ে পড়ার একমাত্র কারন এটাই নয়। যে ছেলেটির খেলার কথা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে, বারবাডোজের সেই ছেলেটি ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক-এখানেই মিডিয়ার যতো কৌতুহল। সেই কৌতুহলের বশে এই ছেলেটির জন্ম,শৈশব, ক্রিকেটার হয়ে বেড়ে ওঠা আবিস্কার করেছে ইংল্যান্ডের দৈনিক দ্য টাইমস।
তার বাবা বারবাডোজ বংশোদ্ভুত হলেও তিনি বৃটিশ পাসপোর্টধারী। মা জোয়েলি'র কোলে জন্ম তার লন্ডনে। কিন্তু শৈশবেই বড় ধাক্কা খায় ছেলেটি। মাত্র ৩ বছর বয়সে বাবা-মা'র ছাড়াছাড়ি হলে ছেলেকে নিয়ে বাবা চলে আসেন বারবাডোজে। রুগ্ন শরীর নিয়ে জন্ম নেয়া ছেলেটি এমনিতেই বাবা ফ্রাঙ্ক আরচারের দূর্ভাবনার কারন ছিলেন। ছেলেটির হাতে শক্তি নেই, অনেকটা অচল। তা সচল করতে ভিডিও গেম খেলার ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন চিকিৎসক। ছেলেকে বারবাডোজে নিয়ে সঙ্গে রেখেছেন ৫টি বছর।
ছেলেটির বয়স যখন ৮ বছর, তখন আরচারকে বাবা ফ্রাঙ্ক নিয়ে আসেন ইংল্যান্ডে। কিন্তু মা জোয়েলি ঠুঁকে দেন মামলা। সেই মামলায় সন্তানকে কাছে রাখার অধিকার হারান বাবা। মা'র কাছে থাকার অনুমতিও হারান আরচার। আদালতের আদেশে এক মামা'র কাছে থাকার অনুমতি পান তিনি।
তবে বাবা ছেলের খবর নিয়মিত রেখেছেন। লন্ডনের স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর ফুটবল, এবং ক্রিকেট-দু'টি দলে খেলার জন্য পেয়েছিলেন ডাক। সিদ্ধান্ত নিজে নেননি। আরচার বাবার ইচ্ছাটাকেই দিয়েছেন প্রাধান্য। বাবা ফ্রাঙ্ক এমনটাই জানিয়েছেন-'ও শৈশবে ফুটবল এবং ক্রিকেট খেলার জন্য ডাক পেয়ে আমার মতামত নিতে এসেছিল। আমি তাকে বলেছি, ক্রিকেটে অনেক সুযোগ আসবে। তুমি বরং ক্রিকেটে মনোযোগ দাও। ৮ বছর বয়সে সে স্কুলের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার পেয়েছে।'
২০১৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের হয়ে খেলেছেন আরচার আন্তর্জাতিক ম্যাচ। কিন্তু পিঠের চোট ভুগিয়েছে তাকে। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে টিকে থাকতে পারেননি।
২০১৬ সালে সাসেক্সে নাম লিখিয়েই নিজেকে মেলে ধরেন। আসরের শেষ দিকে এসে সাসেক্সে যোগ দিয়ে সে বছর ক্লাবের হয়ে পেয়েছেন ৩৫ উইকেট। সেই থেকে শুরু।
বিশ্বকাপের মাত্র ২৫ দিন আগে কার্ডিফে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-২০ ম্যাচ দিয়ে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়। সেই ম্যাচের ৪-০-২০-২ এমন বোলিংয়ে কেড়েছেন নির্বাচকদের নজর। পেয়েছেন বিশ্বকাপ দলে ডাক। তবে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার ছাড়পত্রটা পেতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি তাকে। অভিবাসন আইন তার ক্ষেত্রে শিথিল করতে হয়েছে।
যে বাবা'র জন্য এতোটা পথ পাড়ি দিয়ে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ হিরো আরচার, সেই বাবা ফ্রাঙ্ক আরচার খেলা দেখার জন্য কিন্তু ফাইনাল খেলার টিকিট যোগাড় করতে পারেননি। খেলা দেখেছেন একটি বারে বসে।