বুধবার   ১৮ জুন ২০২৫   আষাঢ় ৫ ১৪৩২   ২১ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার তাগিদ দিলেন শিশুরাও

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৯:০২ এএম, ১৬ জুলাই ২০১৯ মঙ্গলবার

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা পৃথিবীই এখন ঝুঁকির মুখে। নিম্নভূমি হওয়ায় বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল সমুদ্রপৃষ্ঠে তলিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। এ কারণে দেশের নীতি নির্ধারকদের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আরো বেশি সচেতন ও তৎপর হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন শিশুরা।

সোমবার মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে আয়োজিত ‘জলবায়ু অর্থায়ন এবং শিশু’ বিষয়ে জাতীয় সংলাপে অংশগ্রহণ করে ঢাকা নগরের বিভিন্ন স্কুল থেকে আসা প্রায় ৪০ জন শিশু। সেখানে তারা জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে নিজেদের মতামত ও জলবায়ু অর্থায়নের নানা দিক এবং প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

 

শিশুদের নিয়ে যৌথভাবে এ সংলাপের আয়োজন করে সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ, কমিউনিটি পার্টিসিপেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সিথ্রিইআর।

সংলাপে অংশগ্রহণকারী শিশুরা বলে, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এটি নিয়ে সবাই আলোচনা করছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সবাইকে এক হয়ে কার্যক্রম নেয়া উচৎ।

 

ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) এবং জাতিসংঘের ক্লাইমেট চেঞ্জ কনভেনশনের মতে বলা হয় যে, জলবায়ু পরিবর্তনে শিশুদের উপর সবচেয়ে বেশি পড়বে যা বিশ্বের বর্তমান জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ। বাংলাদেশের ১ কোটি ৯০ লাখ শিশুর মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ শিশু সবচেয়ে বেশি বিপদাপন্ন হবে। কারণ তারা নদীভাঙন এলাকা বা এসব অঞ্চলের কাছাকাছি বাস করে।

 

 

ইউনিসেফের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্য ৪৫ লাখ শিশু বাস করে উপকূলীয় অঞ্চলে। এসব শিশুকে সব সময় ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কে থাকতে হয়। প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা শিশু যারা শরণার্থী শিবিরে আছে, তারা বাঁশ ও প্লাস্টিকের তৈরি আশ্রয়স্থলে বসবাস করছে। 

এ রকম নানা সংকটের কারণে গ্রাম থেকে পরিবারের সঙ্গে শহরে চলে আসছে শিশুরা। ফলে বাংলাদেশে এখন ৬০ লাখ উদ্বাস্তু শিশু রয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এ পরিমাণ দিগুণেরও বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।

 

এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন নজিরবিহীন ভাবে বিশ্বে প্রভাব ফেলতে শুরু করে দিয়েছে। ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা ও বজ্রপাতসহ বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি তাপদাহ ও পানিজনিত কষ্টের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যার ফলে প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি শিশুরাও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিবৃষ্টি, অসময়ে বৃষ্টি, অতি গরম, দীর্ঘসময় ধরে উচ্চ তাপমাত্রা, তীব্র ঠান্ডা এবং বজ্রপাতের মত দুর্যোগ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে পূর্বের তুলনায় শিশুরা এখন বেশি অসুস্থ থাকছে।

ব্র্যাক সেন্টারে আগত শিশুরা জানায়, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কমিউনিটি এবং স্কুল পর্যায়ে শিশুকেন্দ্রিক জলবায়ু পরিবর্তন নিরুপণ, উপায় ও পরিকল্পনা প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে ১০টি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে।

এর আগে সকাল নয়টায় পিকেএসএফের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিভাগের পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদিক আহমেদ ‘জলবায়ু অর্থায়ন এবং শিশু’ বিষয়ে একটি উপস্থাপনার মাধ্যমে সংলাপ শুরু করেন।

 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. নুরুল কাদির। সংলাপের সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সিথ্রিইআর এর উপদেষ্টা ড. আইনুন নিশাত।  অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী এবং অভিনেতা তাহসান।