ইংলিশ ও কিউইরা যেভাবে ফাইনালে
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৯:৫৫ এএম, ১৪ জুলাই ২০১৯ রোববার

ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ প্রায় শেষের দিকে। ১৪ জুলাই লর্ডসে ফাইনালের মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপের। নির্ধারিত হবে কারা ক্রিকেটের রাজমুকুট পড়ে থাকবে আগামী চার বছর। গ্রুপপর্বে নানান চড়াই উতড়াই শেষে সেমিফাইনালের গন্ডি পেরিয়ে ফাইনালে এসেছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড।
তবে এতদূর আসা কি আসলেই খুব সহজ ছিল? কিভাবে এলো তারা ফাইনালে? বিশ্বকাপে তাদের এই পথচলা নিয়েই ডেইলি বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য আজকের এ আয়োজন।
এবারের বিশ্বকাপে যে কয়টি দলকে টুর্নামেন্টের হট ফেভারিট ধরা হয়েছিল ইংল্যান্ড তাদের ভেতর একটি। ২০১৫ বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বে বিদায়ের পর নিজেদের আমূল বদলে ফেলা ইংল্যান্ড দল নিয়ে যে কেউই বাজি ধরলে অবাক হওয়ার কিছু ছিলোনা। ব্যাট বল এমনকি অলরাউন্ডার সবদিক দিয়েই অসাধারণ দল ছিল ইংল্যান্ড। এছাড়া নিজেদের মাঠে খেলা হওয়াও তাদের ফেভারিট ধরার অন্যতম কারণ ছিল।
উদ্বোধনী ম্যাচ দিয়েই বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০৪ রানের বড় জয়ে মিশন শুরু করে তারা। তবে ধাক্কা খায় পরের ম্যাচেই। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি হেরে যায় ১৪ রানে।
বাংলাদেশকে ১০৬ রানে হারিয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় থ্রি লায়ন্স। উইন্ডিজকে ৮ উইকেটে হারানোর পর আফগানদেরও উড়িয়ে দেয় ১৫০ রানের ব্যবধানে।
উড়তে থাকা ইংল্যান্ডকে মাটিতে নামিয়ে আনে শ্রীলংকা। ২০ রানে লংকানদের বিপক্ষে হারার পর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেও তারা হেরে বসে ৬৪ রানে। এ অবস্থায় সেমিফাইনাল কঠিন হয়ে পড়ে তাদের জন্য।
তবে ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ে ইয়ন মরগানের দল সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলে। গ্রুপ পর্বের ৯ ম্যাচে ৬ জয় ও ৩ হারের মুখ দেখে থ্রি লায়ন্সরা। ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয় স্থানে থেকে শেষ করে গ্রুপ পর্ব।
সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে এতো সহজে জয়লাভ করার কথা ইংল্যান্ড ভক্তরাও হয়তো ভাবেনি। তবে ব্যাট বল দুদিকেই অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে চলে এসেছে ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ডের ফাইনালে ওঠার পেছনে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে দলীয় পারফরমেন্স। ব্যাটিং বোলিং ফিল্ডিং ৩ বিভাগেই সমানভাবে পারফর্ম করেছে তারা। ব্যাট হাতে জেসন রয়, বেয়ারস্টো, মরগান, রুট প্রত্যেকেই পেয়েছেন সেঞ্চুরির দেখা। মরগান তো ১ ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড করেছেন আফগানদের বিপক্ষে।
বোলিং দিয়েও বরাবরই প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করেছে ইংল্যান্ড। জোফরা আর্চার, মার্ক উড, বেন স্টোকস, মঈন আলী বিভিন্নসময় জ্বলে উঠে ধ্বসিয়ে দিয়েছেন প্রতিপক্ষকে। বেন স্টোকস ও ক্রিস ওকস তো টুর্নামেন্টেরই সেরা কিছু ক্যাচ ধরে ফেলেছেন এরই মাঝে।
ইংল্যান্ড ফেভারিটদের কাতারে থাকলেও এবারের টুর্নামেন্ট ফরম্যাটের কারণে নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে শুরুতে খুব বেশি কেউ আশা করেনি। সেমিফাইনালিস্টের কাতারে খুব কম বিশেষজ্ঞই ফেলেছিলেন কিউইদের। ফাইনাল তো আরো দূরের গল্প। তবে ধারাবাহিক ভালো খেলার মাধ্যমেই ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে তাসমান সাগর পাড়ের দেশটি।
টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় দিনেই মিশনে নেমে পড়ে নিউজিল্যান্ড। শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচ ১০ উইকেটে জিতে নিয়েই যেনো আগমনবার্তা দিয়ে দেয় দলটি। এরপর বাংলাদেশের সাথে ম্যাচটি অনেকটা ভাগ্যের জোরেই জিতে যায় তারা। আফগানিস্তানের সঙ্গে তৃতীয় ম্যাচও জিতে যায় সহজেই। ব্যবধান ছিল ৭ উইকেটের।
এরপর বৃষ্টিবাধায় ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়। পরবর্তী দুই ম্যাচেও অব্যাহত থাকে কিউইদের জয়রথ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪ উইকেটের জয় পায় উইন্ডিজের সাথে।
টুর্নামেন্টের শেষদিকে এসে অবশ্য খেই হারিয়ে ফেলে নিউজিল্যান্ড। একটানা ৩ ম্যাচ হারায় পয়েন্ট টেবিলের চতুর্থ দল হিসেবে বিশ্বকাপ শেষ করেছে তারা। এর আগে টুর্নামেন্টের বড় একটা সময়জুড়ে ছিল পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। তবে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হার সেমির রাস্তা থেকে সরাতে পারেনি কেন উইলিয়ামসনের নেতৃত্বাধীন দলকে।
সেমিফাইনালে কিউইরা মুখোমুখি হয় ভারতের বিপক্ষে। এ ম্যাচে স্বাভাবিকভাবেই আন্ডারডগ হয়ে খেলতে নামে তারা। শুরুতে ব্যাট করে ২৪০ রান করার পর নিউজিল্যান্ডের শেষও দেখে ফেলেছিলেন অনেকেই। তবে এখানেও দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে দেশটি।
এই দলের মূল শক্তি বোলিং। অধিকাংশ ম্যাচেই শক্তিশালী পেস ইউনিটের মাধ্যমে গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রতিপক্ষকে। ট্রেন্ট বোল্ট, লকি ফার্গুসন, ম্যাট হেনরিদের নিয়ে গড়া পেস লাইনআপ টুর্নামেন্টজুড়েই রাজত্ব করেছে। ট্রেন্ট বোল্ট এরইমধ্যে করে ফেলেছেন হ্যাটট্রিক।
এছাড়া অলরাউন্ডাররাও বারবার এগিয়ে এসেছেন দলের বিপদে। জিমি নিশাম, ডি গ্রান্ডহোম, স্যান্টনার ব্যাট বল দুইদিকেই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলকে বিপদমুক্ত করেছেন।
ব্যাট হাতেও কেন উইলিয়ামসন ও টেইলর লড়েছেন ভালোভাবেই।
নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে ফাইনালে উঠেছে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। দুই দলের যেই জিতুক একটা ব্যাপার নিশ্চিত। এবার ট্রফি উঠবে নতুন কোন দলের হাতে।
সেরার স্বীকৃতির লড়াইয়ে ফাইনাল তাই হবে আকর্ষণীয় একটি ম্যাচ, এমনটা আশা করতেই পারেন ক্রিকেটভক্তরা।