বৃহস্পতিবার   ১৫ মে ২০২৫   জ্যৈষ্ঠ ১ ১৪৩২   ১৭ জ্বিলকদ ১৪৪৬

মানসিক চাপ থেকে আসতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৩:৪৬ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার

সিদ্ধান্ত গ্রহণ। শব্দের মাত্রায় ছোট হলেও জীবনের মাত্রায় এর গভীরতা ব্যাপক। সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে প্রতিনিয়ত নানা প্রান্তে নানা রকম দূর্ঘটনার সামনে পড়ছে মানুষ। কিন্তু ফলাফল হাতে আসার পরই প্রায়ই আমরা আক্ষেপের মাঝে থাকি। কিন্তু কেন বারবার ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ? 

সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) এই ব্যাপারে চালিয়েছে দারুণ এক গবেষণা। যার ফলাফলে বেরিয়ে এসেছে মানুষের মনের নানা সাধারণ আচরণের অনেক চমকপ্রদ তথ্য। 

এমআইটির নিউরোগবেষকরা আবিষ্কার করেছেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়গুলো যাকে বলা হয় “লাভ লোকসান দ্বন্দ” এটি অনেকাংশেই আমাদের মানসিক চাপের ফলে নিয়ন্ত্রিত হয়। গবেষণায় অবশ্য প্রথম পরীক্ষা চালানো হয়েছে আর সব পরীক্ষার মতোই কিছু ইঁদুরের ওপর। পরীক্ষায় দেখা যায়, চাপের মুখে থাকা অবস্থায় ইঁদুরগুলো ঝুঁকি নিতে কিংবা অনেক বেশি ছাড় দিতে প্রস্তুত থাকে। 

গবেষকরা অবশ্য এধরনের পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্রেইনের কার্যকরী অংশ খুঁজে পেয়েছেন। গবেষণার আরেক ফলাফল অনুযায়ী আমাদের মস্তিষ্কের এই একই অংশ আমাদের স্বাভাবিক অবস্থায় গৃহীত সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তিনির্ভর সহায়তা দিয়ে থাকে। যার অর্থ, মানসিক চাপের ফলে আমরা শুধুই ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। বরং একই সাথে ভুল সিদ্ধান্তের পক্ষে অযাচিত যুক্তিও তৈরি করতে থাকি। সাধারণত বিভিন্ন জটিল মানসিক অবস্থায় ভুগতে থাকা মানুষ যেমন, ডিপ্রেশনের রোগী, মাদকাসক্ত কিংবা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ মানুষেরা এই সমস্যার কারণেই প্রতিনিয়ত নিজের জীবনের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভুল কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। 

গবেষণা দলের সদস্য এবং এমআইটি অধ্যাপক এ্যান গ্যাব্রিয়েল এ ব্যাপারে বলেন, “আমরা একেবারেই সাধারণ কিছু কথা বলছি। এবং আমাদের জন্য সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা হলো, আমরা নিজেদের নিউরনে এমন কিছু মাইক্রো উপাদান ধারণ করি যা আমাদের এই মানসিক চাপের মাঝেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। তবে এখন পর্যন্ত এটি ইঁদুরের ওপরেই চালিত একটি পরীক্ষা হবার কারণে এ নিয়ে বিস্তারিত বলা সম্ভব হচ্ছে না।”      

জটিল সিদ্ধান্ত

এ্যান গ্যাব্রিয়েলের এই গবেষণা মোটেই সাম্প্রতিক নয়। বরং একটি দীর্ঘ গবেষণার ফল হিসেবে নতুন এই সিদ্ধান্তে আসতে সক্ষম হয়েছেন তার পুরো দলের সাথে। সর্বপ্রথম ২০১৫ সাল্বে এ্যান গ্যাব্রিয়েল, ফ্রিডম্যান এবং তার সতীর্থরা মানুষের মস্তিষ্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নেওয়া অংশগুলোর সাথে পরিচিত হতে থাকেন। মানব মস্তিষ্কের মেডিয়াল প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কাজ করে থাকে। আর এই অংশেই আমাদের মুড বা মানসিক অবস্থা এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করার জন্য প্রয়োজনীয় স্নায়ু “স্ট্রিয়েসাম” অবস্থান করে। স্ট্রিয়েসাম স্নায়ুর অবস্থানকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয় স্ট্রিয়েটাম। এই স্ট্রিয়েটামেই নির্ধারিত হয় আমাদের আচরণ কি হবে, আমাদের কার্যক্রমের পদ্ধতি কি হবে কিংবা আমাদের পরিস্থতি অনুযায়ী অনুভূতি কি হতে পারে। 

পরীক্ষা কার্যক্রম 

পুরো গবেষণা পরিচালনার জন্য দুটি ভিন্ন পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। উজ্জ্বল আলো এবং জটিল একটি গোলকধাঁধার একপ্রান্তে রাখা হয় খুব ঘন চকোলেট দুধ। এবং বিকল্প হিসেবে ছিল, মৃদু আলো এবং সহজ একটি পথে কম ঘনত্বের দুধ। 

স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হলে সব ইঁদুরই মৃদু আলোয় সহজ পথে এগিয়ে গিয়ে নিজের খাদ্য গ্রহণ করছিল। কিন্তু কৃত্রিমভাবে স্ট্রিয়েটামে চাপ প্রয়োগ করা হলে এর ফলাফল হয় বিস্ময়কর । বারবার বিপজ্জনক এবং কঠিন পথ জেনেও এই পর্যায়ে ইঁদুরের দল অপেক্ষাকৃত জটিল পথ অনুসরণ করতে শুরু করে। 

এখন হয়তো প্রশ্ন আসতে পারে, ইঁদুরের ওপর চালিত এই পরীক্ষা মানুষের ওপর কতটা যুক্তিযুক্ত হবে। উত্তরে বলা যেতে পারে, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে স্নায়ুবিক কিংবা ভ্যাকসিনেশনের ক্ষেত্রে প্রথম পরীক্ষা সবসময় ইঁদুরের ওপরই পরিচালিত হয়ে আসছে। তাই পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে নিজেকে শান্ত রাখা আপনার জন্য সবচেয়ে জরুরি কাজ হতে চলেছে।