ব্যাটিংয়ে সবাই যদি একটু ক্লিক করতো...
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০২:০৫ পিএম, ৭ জুলাই ২০১৯ রোববার

এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে বাংলাদেশী ক্রিকেটার ও সমর্থক সবারই স্বপ্ন ছিল কমপক্ষে সেমিফাইনাল খেলা। অভিজ্ঞ দল সহ বিভিন্ন কারণে এই চাওয়া অমূলক মনে হয়নি কারও কাছে। তবে বিশ্বকাপের গ্রুপপর্ব শেষে এ মিশন যেনো ব্যর্থতাই চোখে পড়ছে বেশি।
১০ দলের বিশ্বকাপে সেরা চারের লক্ষ্যে থাকা দল টুর্নামেন্ট শেষ করছে সপ্তম স্থানে থেকে, এটি মানতেই যেনো বেশি কষ্ট হচ্ছে সমর্থকদের।
কিন্তু কেনো এমন পারফরমেন্স? কি হতে পারে এর পেছনের কারণ? বিশ্বকাপের ঠিক আগে ট্রাইনেশন সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলের কেনো এ অবস্থা? এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা শেষে কয়েকটি কারণ পাওয়া গিয়েছে। যার প্রথম পর্বে ব্যাটিংয়ের সফলতা ব্যর্থতা তুলে ধরা হলো।
এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম অভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইন-আপ ছিল বাংলাদেশ দলের। সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদের সঙ্গে সৌম্য-লিটন-মোসাদ্দেকদের নিয়ে গড়া ব্যাটিং লাইনআপ যে কোন দলেরই ঈর্ষার কারণ হতে পারতো। বোলিং সাইডে আশা কম থাকলেও ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট নিয়ে সকলের আশা ছিল একটু বেশি।
বিশ্বকাপের আগে হওয়া ট্রাইনেশন সিরিজে ব্যাটসম্যানদের ফর্ম দেখে বড় স্বপ্নে বুক বেধেছিল টাইগার ভক্তরা। তবে সময়ানুযায়ী ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট ক্লিক না করা ছিল স্বপ্নভঙ্গের অন্যতম বড় কারণ।
বিশ্বকাপ শুরু হতেই যেনো বড় ইনিংসের খরা শুরু হলো ব্যাটসম্যানদের। একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রতিটি ম্যাচে ভালো ব্যাট করেছেন সাকিব। তারপর মুশিই যা একটু করেছেন। বাকী ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স যেনো শুধু এক ইনিংসময় হয়ে ছিল।
প্রথমেই আশা যাক দেশসেরা ওপেনার তামিমের ব্যাপারে। ৮ ম্যাচ খেলে প্রায় ৩০ গড়ে তিনি রান করেছেন ২৩৫। মাত্র একটি ইনিংসে পান অর্ধশতকের দেখা, যা ৬২ এর বড় করতে পারেননি। উল্টো প্রায় প্রতি ইনিংসে ডট বল ও আত্মবিশ্বাসহীনতার ছাপ দেখা গিয়েছে স্পষ্ট।
আরেক ওপেনার সৌম্যের অবস্থা তামিমের চেয়েও খারাপ। ৮ ম্যাচে ২০.৭৫ গড়ে তার সংগ্রহ মাত্র ১৬৬ রান। নেই কোন সেঞ্চুরি বা হাফ সেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ ইনিংস ৪২ রানের।
তিনে ব্যাট করা সাকিবকেই একমাত্র লেটার মার্ক দেওয়া যায়। বলতে গেলে দলের ব্যাটিং এর দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে বেড়িয়েছেন পুরো টুর্নামেন্টে। ৮ ম্যাচে ৮৭ গড়ে ৬০৬ রান তার অতিমানবীয় পারফরমেন্সের কথাই সাক্ষ্য দেয়। ২ শতকের সঙ্গে ৫ অর্ধশতকে নিজেকে অনন্য স্থানে নিয়ে গিয়েছেন তিনি।
স্কোয়াডের ব্যাটসম্যানদের ভেতর উপরোক্ত তিনজনের পর ৮ ম্যাচই খেলেছেন শুধুমাত্র মুশফিক। ৫২ গড়ে ৩৬৭ রানকে খারাপ বলার সুযোগ নেই। ঝুলিতে পুরেছেন ১টি করে সেঞ্চুরি ও হাফসেঞ্চুরি। তবুও মাঝে মাঝে দলকে বিপদে ফেলে আউট হয়েছেন বড্ড অসময়ে।
এরপর ৭টি করে ম্যাচ খেলেছেন ডার্ক নাইট রিয়াদ ও মোসাদ্দেক। ১টি অর্ধশতকে ৪৪ গড়ে রিয়াদের ২১৯ রান ভদ্রস্থ বলা গেলেও মোসাদ্দেকের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। ৭ ম্যাচে ১৯.৫ গড়ে ১১৭ রান মোসাদ্দেকের ব্যাটিং দৈন্যতাই তুলে ধরে। অথচ ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালেও তিনি ছিলেন দুর্দান্ত।
টুর্নামেন্টের শুরুতে দলে না থাকলেও পরে সুযোগ পাওয়া লিটন দাসও খুব বেশি ভালো করেননি। ৫ ম্যাচে ১৮৪ রান করেছেন, যার ভেতর ১ ইনিংসেই খেলেছেন অপরাজিত ৯৪ রানের ইনিংস। বাকী সবগুলোতেই ছিলেন ব্যর্থ।
এছাড়া মিথুন, সাব্বির ছিলেন সুপার ফ্লপ। তারা দলের প্রয়োজন পূরণের বদলে দলকে বিপদেই ফেলেছেন বেশি।
বোলারদের ভেতর সাইফউদ্দিন শেষ ম্যাচে ৫১ রানের একটি ইনিংস খেলেছেন। এছাড়া ব্যাট হাতে বোলারদের ভূমিকা অতি নগন্য। টেলএন্ডে তারা মোটামুটি সমর্থন দিতে পারলে কিছু কিছু ম্যাচের চিত্র অন্যরকম হতে পারতো।
উপরের তথ্যগুলো থেকেই বোঝা যায় টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের ব্যাটিং কেমন ছিল। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তামিম, সৌম্য, মোসাদ্দেকের অফফর্ম খুব ভুগিয়েছে দলকে। এছাড়া দলের ব্যাটিং একসাথে বা নিয়মিত জ্বলে উঠেছে কমই।
তাই আশা জাগিয়েও নিরাশায় ডুবতে হয়েছে বারবার। ৮ ম্যাচে ৩ জয়ে টাইগারদের ফিরতে হচ্ছে বিফল মনোরথে।
দিনশেষে মনে হতেই পারে, ইশ ব্যাটিংয়ে সবাই যদি একটু ক্লিক করতো...