২০১৫, ইতিহাসে টাইগারদের সেরা বিশ্বকাপ
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১০:৫৫ এএম, ৬ জুলাই ২০১৯ শনিবার
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হওয়া যেকোন ক্রিকেটারেরই বড় স্বপ্নের একটি। তবে ক্রিকেট দলীয় খেলা। বাস্তবতা বিবেচনায় সেই ট্রফি জয়ের লক্ষ্য থেকে সরে এসে নিজেদের মান হিসেবে একটি টার্গেট নিয়ে খেলতে হয় দলকে। সেটি পূরণ হলে বলা যায় সেই দল সফল হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য এই দিক থেকে সফল বিশ্বকাপ ছিল ২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ।
ডেইলি বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য আমাদের এবারের আয়োজন এই বিশ্বকাপ নিয়েই।
২০১৪ সালকে বাংলাদেশের ক্রিকেটে কালো বর্ষ হিসেবে অভিহিত করলে অত্যুক্তি হবেনা। বারবার শেষে এসে হারা থেকে শুরু করে সহজতম জয়ও কিভাবে কিভাবে যেনো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছিল। বছরের একদম শেষে এসে তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই নেতৃত্বে পালাবদল আসে দেশের ক্রিকেটে।

মাশরাফীর অধিনায়কত্বে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিতলেও তাই বিশ্বকাপের আগে এই দলকে নিয়ে কেউ তেমন কিছু আশা করতে পারেনি। কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পারাকেই বড় সাফল্য ধরে নিয়ে তাসমান সাগরের দেশ অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমায় বাংলাদেশ দল।
প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ । এই দলের কাছেই কয়েক মাস আগে এশিয়া কাপে পর্যুদস্ত হওয়ায় তাদের বিপক্ষে জয় নিয়েই ভয়ে ছিল টাইগার সমর্থকরা। তবে সাকিব ও মুশফিকের পঞ্চাশোর্দ্ধ ইনিংসে ২৬৭ রানের ভালো সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। ভয়কে জয় করে আফগানদের মাত্র ১৬২ রানে অল আউট করে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ জিতে যায় ১০৫ রানে।
পরের ম্যাচে বাংলাদেশ স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়। বৃষ্টিতে ম্যাচ ভেসে যাওয়ায় খেলা না হলেও গুরুত্বপূর্ণ ১ পয়েন্ট লাভ করে বাংলাদেশ।

নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে শ্রীলংকার সাথে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। শক্তির বিচারে কাছাকাছি হলেও ৯২ রানের বড় ব্যবধানে হেরে যায় বাংলাদেশ। এ ম্যাচে তিলকরত্নে দিলশান ও কুমার সাংগাকারা দুজনেই অপরাজিত সেঞ্চুরি করেন। সাকিব আর সাব্বির ছাড়া বাংলাদেশ দলের আর কেউই তেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি।
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে পরবর্তী ম্যাচে সহজ জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু কোয়েতজারের ১৫৬ রানের ইনিংসে ৩১৮ রান করে ফেলে স্কটিশরা। ফিল্ডিং এ আনামুল হক বিজয় আহত হলে বাংলাদেশ শিবিরে চিন্তা আরো ঘনীভূত হয়। তবে তামিম, রিয়াদ, মুশফিক ও সাকিবের সময়োপযোগী পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস গুলোর কল্যাণে ১১ বল ও ৬ উইকেট হাতে রেখে জয়লাভ করে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, দলীয়ভাবে এটি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল।
৯ মার্চ, ২০১৫ তারিখটির কথা না বললেই নয়। ম্যাচের আগে পয়েন্ট টেবিল অনুযায়ী এই ম্যাচে জিতলেই বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যেতো। তবে ইংল্যাণ্ডের বিপক্ষে কাজটি সহজ হবেনা জেনেই মাঠে নামে টাইগাররা। প্রথমে ব্যাট করে ২৭৫ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ।

এ ম্যাচেই বাংলাদেশ পেয়ে যায় বিশ্বকাপ ইতিহাসে নিজেদের প্রথম সেঞ্চুরিয়ানকে। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের অনবদ্য সেঞ্চুরির পরেও ম্যাচ জয় নিয়ে চিন্তিত ছিল পুরো জাতি। তবে রুবেল হোসেনের চমৎকার এক ইনসুইংগারে জেমস এন্ডারসনের স্টাম্প উড়ে যাওয়ার সাথে সাথে উড়ে যায় সব সংশয়। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ চলে যায় বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে।
গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে অনেকটা নির্ভার হয়েই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামে টাইগাররা। রিয়াদের ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরির কল্যাণে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৮৮ রান করে বাংলাদেশ। গাপটিলের সেঞ্চুরিতে ৭ বল বাকী থাকতেই জিতে যায় কিউইরা।
স্বপ্নের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। রোহিত শর্মার সেঞ্চুরিতে ভারতের ৩০২ রানের জবাবে ১৯৩ রানে থেমে যায় বাংলাদেশ। ম্যাচ হারে ১০৯ রানের ব্যবধানে।
২০১৫ সালের বিশ্বকাপেই নিজেদের আলাদাভাবে চেনায় টাইগাররা। স্বপ্ন পূরণের এই বিশ্বকাপ ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা বিশ্বকাপ।
