যে বিশ্বকাপের আবিষ্কার সাকিব, তামিম, মুশফিক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৯:২৮ এএম, ৫ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার

বাংলাদেশের ক্রিকেটের বাক বদলের যে কয়টি মূহুর্ত আছে তার ভেতর ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ অন্যতম। এ বিশ্বকাপের পড়েই যেনো নতুন ভাবে চলতে শুরু করে বাংলাদেশের ক্রিকেট। এগিয়ে যাওয়ার নৌকার পালে হাওয়া লাগে এখানেই।
সবচেয়ে বেশি দল নিয়ে হওয়া এই বিশ্বকাপে খেলে মোট ১৬ দল। ফরম্যাট চেঞ্জ করে ৪ গ্রুপে ভাগ করে প্রতি দলের সেরা দুই দল যায় পরের রাউন্ডে।
আগের বিশ্বকাপে বলতে গেলে লজ্জাজনক খেলা উপহার দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্ত ২০০৬ সালে একের পর এক ভালো খেলায় এ বিশ্বকাপে ভালো করার ব্যাপারে আশাবাদী হয়েই ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে রওনা দেয় টিম টাইগার্স।
গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল ভারত, শ্রীলংকা ও বারমুডা। প্রতিপক্ষের বিচারে গ্রুপ পর্বের বাধা পেরোনো ছিল পাহাড় টপকানোর মতোই কঠিন ।
তবে পাহাড় ডিঙ্গানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েই ১৭ মার্চ বাংলাদেশ মুখোমুখি হয় ভারতের। সে সময়ের অন্যতম সেরা দল ছিল ভারত। শচীন, শেওয়াগ, দ্রাবিড়, সৌরভ গাংগুলি, যুবরাজ এদের নিয়ে সাজানো ব্যাটিং অর্ডার দেখে যেকোন দলেরই বুকে কাপন ধরার কথা। তবে বাংলাদেশ দলে ছিল এক দামাল ছেলে মাশরাফী। সঙ্গে দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ সতীর্থরা। তাইতো সৌরভ ও যুবরাজের প্রতিরোধের পরেও মাশরাফী, রাজ্জাক ও রফিকের তান্ডবে ১৯১ রানে অল আউট হয়ে যায় টিম ইন্ডিয়া। চেজ করতে নেমে জহির খান কে এগিয়ে এসে তামিম ইকবালের মারা ছয় তো বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা শট হয়ে যায়। তামিম, মুশফিক ও সাকিবের পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংসে ভারতকে হারিয়ে সেই বিশ্বকাপে বড় এক অঘটনই ঘটিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
নিজেদের ২য় ম্যাচে বাংলাদেশ খেলতে নামে শ্রীলংকার বিপক্ষে। জিতলেই সুপার এইট এমন হাতছানি থাকলেও শ্রীলংকার বিপক্ষে সুবিধা করে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। মাহেলা জয়াবর্ধনের সেঞ্চুরিতে ৩১৮ রানের বড় সংগ্রহ পায় শ্রীলংকা। আশরাফুলের অপরাজিত ৪৫ রানের পরেও বাকীদের ব্যর্থতায় ১১২ রানে শেষ হয় বাংলাদশের ইনিংস। ডি/এল মেথডে ১৯৮ রানে জয় পায় লংকানরা।
গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে বারমুডার বিপক্ষে খেলতে নামে টাইগাররা। সুপার এইটে উঠতে হলে এই ম্যাচ জিততেই হতো বাংলাদেশকে। বৃষ্টির কারণে ম্যাচ নেমে আসে ২১ ওভারে। প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ৯৪ রান করতে সমর্থ হয় বারমুডা। ৭ উইকেট ও ২১ বল হাতে রেখে অতি সহজেই এই লক্ষ্য পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ, উঠে যায় বিশ্বকাপের সুপার এইটে।
সুপার এইটে বাংলাদেশ প্রথম মুখোমুখি হয় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার। বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে বাংলাদেশের মামুলি সংগ্রহ কোন উইকেট না হারিয়েই পেরিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও একই ফলের পুনরাবৃত্তি হয়। বাংলাদেশ এবার হারে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে।
সুপার এইটে পরপর দুই ম্যাচ হারা বাংলাদেশ জয়ের দেখা পায় তৃতীয় ম্যাচে এসে। আশরাফুল এর দুর্দান্ত ৮৭ রানের ইনিংসে ভর করে ২৫১ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। ১৮৪ রানেই দক্ষিণ আফ্রিকা থেমে গেলে বাংলাদেশ জয় পায় ৬৭ রানে।
সুপার এইটে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে এসে আবারও হারের দেখা পায় বাংলাদেশ। এবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪৩ রান করে হারে ৪ উইকেটে।
পরবর্তী ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য আপসেট বলা যায়। জয়ের আশা থাকলেও অপ্রত্যাশিত ভাবে ৭৪ রানে হেরে যায় আয়ারল্যান্ডের কাছে।
স্বাগতিক উইন্ডিজের সঙ্গে সুপার এইটের শেষ ম্যাচ খেলতে নামে বাংলাদেশ। অন্যান্য ম্যাচগুলোর মতোই আরো একবার হারের স্বাদ পায় বাংলাদেশ দল। ব্যবধান ছিল ৯৯ রানের।
১৬ দলের টুর্নামেন্টে ৭ম হয়ে ২০০৭ বিশ্বকাপ মিশন শেষ করে বাংলাদেশ। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো ছিল সে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অন্যতম বড় অর্জন। এই বিশ্বকাপ থেকেই উঠে আসে সাকিব, তামিম, মুশফিকরা। তাই দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন দিগন্তের সূচনা করে ২০০৭ বিশ্বকাপ, একথা বলাই যায়।