প্রেসক্রিপশন ছাড়াই বিক্রি করা যাবে ৩৯ ধরনের ওষুধ
নিউজ ডেক্স
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৬:১৯ এএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার

বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর প্রেসক্রিপশন ছাড়া ৩৯টি ওষুধ বিক্রির অনুমোদন দিলেও রাজধানীর ফার্মেসিগুলোতে বিক্রি হচ্ছে অ্যান্টেবায়োটিকসহ সব ধরনের ওষুধ। চিকিৎসকরা বলছেন, রোগী অনুপাতে চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে এই তালিকায় থাকা কোনও কোনও ওষুধ নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন চিকিৎসকেরাও। রাজধানীর ফার্মেসিগুলোতে এসব ওষুধের কোনও তালিকা না থাকলেও প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের ওষুধ।
জাতীয় ওষুধ নীতি ২০১৬-এর ধারা ৩ (১৫)- তে প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রিযোগ্য ওষুধের তালিকা প্রণয়নের বিষয়ে বলা হয়েছে— ‘উন্নত দেশগুলোর আদলে সাধারণভাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে’ এই তালিকা প্রণয়ন করা হবে। ধারা ৪ (১৮) -এ ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) বা প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রিযোগ্য ওষুধ সম্পর্কে বলা হয়েছে— নিবন্ধিত অ্যালোপেথিক, আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি চিকিৎসা পদ্ধতির ওষুধের মধ্য থেকে সাধারণভাবে ব্যবহৃত এবং কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ওষুধ তালিকাভুক্ত করা হলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সময় সময় এ তালিকা হালনাগাদ করবে বলে ওই নীতিমালায় বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্র জানায়, এই নীতিমালা অনুযায়ী ৩৯টি অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়াই দিতে পারেন ফার্মেসির বিক্রেতা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে— কৃমির ট্যাবলেট (এলবেনডাজল চিউয়্যাবল ট্যাবলেট), গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট বা সিরাপ বা সাসপেনশন (এন্টাসিড চিউয়্যাবল ট্যাবলেট বা সাসপেনশন), ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট, বেনজিল বেনজোয়েট লোশন, চর্মরোগসহ বিভিন্ন ধরনের লোশন, চোখ ও কানের ড্রপ, ব্যথার জন্য জেল, কনডম ও জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, গ্লিসারিন সাপোজিটরি, মেট্রোনিডাজল ট্যাবলেট (এন্টিবায়োটিক) বা সাসপেনশন, গ্যাস্ট্রিকের সিরাপ (মিল্ক অব ম্যাগনেশিয়া), মাউথ ওয়াশ, মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল বা ড্রপ, ওমিপ্রাজল ক্যাপসুল, ওরস্যালাইন, প্যারাসিটামল ট্যাবলেট/সিরাপ/সাসপেনশন/ সাপোজিটরি, পারমেথ্রিন ক্রিম, রেনিটিডিন ট্যাবলেট, পোভিডন আয়োডিন, ভিটামিন এ ক্যাপসুল, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (একক বা যৌথ) ট্যাবলেট/সিরাপ/ড্রপ, জাইলোমেটাজোলিন জিরো পয়েন্ট ওয়ান নাসাল ড্রপ)।
এই তালিকায় থাকা ওষুধ মেট্রোনিডাজল ট্যাবলেট/ সাসপেনশন নিয়ে তরুণ চিকিৎসকদের সন্দেহ রয়েছে। ওষুধটিকে অ্যান্টেবায়োটিক হিসেবে চিহ্নিত করে তরুণ চিকিৎসক মারুফুর রহমান বলেন, ‘এটি কেন তালিকায় রাখা হলো তা বোধগম্য নয়।’ তবে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক সৈকত কুমার কর বলেন, ‘মেট্রোনিডাজলকে আমরা অ্যান্টেবায়োটিক বলি না। এটি ডায়রিয়া হলে দেওয়া হয়। মেট্রোনিডাজল জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই কম।’ একই মতামত দেন বাংলাদেশ হেলথ রাইটস মুভমেন্টস-এর প্রেসিডেন্ট ডা. রশীদ-ই-মাহবুব। তিনি বলেন, ‘মেট্রোনিডাজল অ্যান্টেবায়োটিক না। তবে এটা রোগ নিরাময়ে কাজ করে।’
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ওষুধের দোকান ঘুরে দেখা যায়, কিছু ফার্মেসিতে অ্যান্টেবায়োটিক প্রতিরোধে সচেতনতামূলক পোস্টার টাঙানো রয়েছে। তবে কোথাও নির্দিষ্ট ওষুধের তালিকা (ওটিসি তালিকা) টাঙানো নেই। কোনও কোনও বিক্রেতা এই তালিকা মুখস্থ থাকার দাবি করলেও অনেককেই সব ধরনের ওষুধ বিক্রি করতে দেখা গেছে।
রাজধানীর লালবাগে ‘মা মেডিক্যাল হল’-এর বিক্রেতা ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ দেই না। তবে জ্বর-ঠাণ্ডা-গলা ব্যথার ওষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়া দেই। আরেক ফার্মেসির বিক্রেতা সুজন আহমেদ বলেন, ‘মানুষ খুচরা ওষুধের জন্য আমাদের কাছে আসে। কেউ আসলে ওষুধ দিতে না করি না।