রোববার   ১৮ মে ২০২৫   জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩২   ২০ জ্বিলকদ ১৪৪৬

ত্রাতা হয়ে পাকিস্তানকে বাঁচালেন ইমাদ ওয়াসিম

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১১:৪৬ এএম, ১ জুলাই ২০১৯ সোমবার

হাফ ছেড়ে যেন বেঁচে গেল কোটি কোটি পাকিস্তানি সমর্থক। আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারবে পাকিস্তান এটা বোধহয় কোনো পাকিস্তানি স্বপ্নতেও কল্পনা করতে পারেনি। সেই স্বপ্নকে কাল প্রায় দুঃস্বপ্ন বানিয়ে ফেলছিল আফগানিস্তান। কিন্তু আবারো তীরে এসে তরী ডুবল আফগানদের।

শনিবারের ম্যাচে বিশ্বকাপে একটি জয়ের জন্য বুভুক্ষের মত থাকা আফগানিরা পাকিস্তানের বিপক্ষে হারলো ৩ উইকেট তাও ২ বল হাতে রেখে। আফগানিদের স্বপ্নের মাঝে তীর বুনে দিয়েছেন পাকিস্তানি অলরাউন্ডার ইমাদ ওয়াসিম। তার হার না মানা অপরাজিত ৪৯ রানের সুবাদে কোনমতে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে পাকিস্তান। তবে পাকিস্তানের ইমাদ ওয়াসিমের যতটা না ক্রেডিট তার থেকেও বেশি ক্রেডিট দিতে হবে আফগান বোলার গুলবাদেন নাইব ও ম্যাচের দুই আম্পায়ারকে। মূলত এই দুজনের কারণেই পাকিস্তান বিশ্বকাপে টিকে থাকার ম্যাচে জয় পায়। তাদের ভুল সিদ্ধান্তগুলোই ম্যাচ থেকে ছিটকে ফেলে আফগানদের।

কী ছিল না আফগানিস্তান-পাকিস্তান ম্যাচে! সীমান্তের এপার-ওপারের প্রতিবেশী দুই দেশের লড়াই শুরু হওয়ার আগেই মাঠের বাইরে লড়াইয়ে মাতেন দুই দেশের সমর্থকরা। স্টেডিয়ামের বাইরে একে অন্যের সঙ্গে মারামারি বাধিয়ে দেয় আফগান ও পাকিস্তানি সমর্থকরা। তাদের রুখতে শেষ পর্যন্ত পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হয়। তারপরেও পুরো ম্যাচ জুড়ে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে আফগান-পাকিস্তানি সমর্তকরা কথার লড়াই কিংবা কখনো পেশী শক্তির লড়াইয়ে মেতে ওঠেন। যারা এমন গর্হিত অপরাধমূলক কাজ করেছেন তাদেরকে সঙ্গে সঙ্গে মাঠ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে এবং আজীবনের মত স্টেডিয়ামে খেলা দেখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বিশ্বকাপে একটি ম্যাচও জিততে না পারা আফগানিস্তান এদিন টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। পাকিস্তানের দুর্দান্ত বোলিং লাইন আপের বিপক্ষে যা ছিল একটি সাহসী সিদ্ধান্ত। কিন্তু আফগান ব্যাটসম্যানরা সেই সিদ্ধান্তকে কাজে লাগাতে পারেনি। প্রথম উইকেট জুটিতে ২৭ রান তুলে শাহীন আফ্রিদির বলে ১৫ রান করে উদ্বোধনী জুটির সমাপ্তি ঘটান গুলবাদেন নাইব আউট হয়ে। এরপর আফগান মিডল অর্ডারে ছিল শুধু যাওয়া আসার মিছিল। সাবেক অধিনায়ক আজগর আফগান ও ইকরাম আলিখিলের ৬২ রানের জুটি আফগানদের দেড়শো পার করায়। শেষ দিকে নাজিবুল্লাহ জাদরান ৪২ রান করলে আফগানিস্তান ২২৭ রানের পুঁজি পায়। যেটাই ছিল লড়াই করার মত। পাকিস্তানের হয়ে শাহীন আফ্রিদি ১০ ওভারে ৪৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে এমন কীর্তি গড়ে ঢুকে গেছেন রেকর্ড পাতায়। সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে ৪ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়লেন  শাহীন আফ্রিদ।

 

২২৮ রানের লক্ষ্যে তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই আফগান স্পিন জুজুতে তালগোল পাকিয়ে ফেলে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা। মুজিব উর রহমানের বলে প্রথম ওভারেই এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েন ফখর জামান। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার তিনি মুজিবের বলে শূন্য রানে আউট হলেন। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে পাকিস্তানের সেরা ব্যাটসম্যান বাবর আজম ও ওপেনার ইমাম উল হক ৭২ রানের জুটি গড়ে বিপর্যয় সামাল দেন। কিন্তু আবারো আফগানিস্তানের স্পিন এটাকে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপ।

 

 

১৬তম ওভারের শেষ বলে মোহাম্মদ নবীকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে মারতে গিয়ে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন ইমাম উল হক। ৩৬ রানে ইমামের বিদায়ের পর টিকতে পারেননি বাবর আজমও। ১৮তম ওভারে মোহাম্মদ নবীর বলে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন বাবর আজম। ৪৫ রানে থামে বাবরের এবারকার ইনিংস। ১৮ ওভারে ৮২ রানেই ৩ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানকে আউট করে ম্যাচটাকে নিজেদের দিকে নিয়ে আসতে থাকে আফগানিস্তান।

৩০তম ওভারে মুজিবের বলে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মোহাম্মদ হাফিজ। তার পরপরই রশিদ খানের বলে ব্যক্তিগত ২৮ রান করে আউট হন হারিস সোহেল। ৩৫তম ওভারে ইমাদ ওয়াসিম যখন ক্রিজে আসেন তখন পাকিস্তানের রান ১৪২ তাও ৫ উইকেট হারিয়ে। আফগানিস্তানের স্পিন এটাকের সামনে যেন মাথা নিচু করে আত্মসমর্পন করছিল পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা। ম্যাচ শেষে ইমাদ ওয়াসিম নিজেই বলেছেন, তার কাছে কোন ক্লুই ছিল না ওদের স্পিন বোঝার।

 

ইমাদের সঙ্গে জুটি গড়ার আগেই মাত্র ১৮ রান করে রানআউটের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন পাকিস্তানি অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। পাকিস্তানের তখন দরকার ৬৬ বলে ৭২ রান। প্রতিষ্ঠিত কোনো ব্যাটসম্যান তখন পাকিস্তানের ছিল না বিধায় প্রায় সবাই ধরে নিয়েছিল অবিস্মরণীয় এক জয় পেতে যাচ্ছে আফগানিস্তান। বিশ্বকাপে এর আগে কখনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে জয় পায়নি আফগানরা। তাই উপলক্ষটা থেকে যখন একটু দূরে তখনই বিশাল ভুল করে বসেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক গুলবাদেন নাইব।

৪৫তম ওভার শেষে পাকিস্তানের দরকার ছিল ৩০ বলে  ৪৬ রান। পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা যেখানে স্পিন খেলতে নাকানি চুবানি খাচ্ছিল তখন অধিনায়ক গুলবাদেন নাইব সবাইকে অবাক করে তিনি নিজে বোলিংয়ে আসেন। আর ৪৬তম ওভারটাই হয়ে ওঠে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। ওই ওভারে নাইবের বলে একাই ১৭ রান নিয়ে ম্যাচটাকে নিজেদের দিকে ঝুলিয়ে ফেলেন ইমাদ ওয়াসিম। যদিও রশিদ খানের পরের ওভারে শাদাব খান আউট হন কিন্তু ওই ওভারের শেষ বলে চার মেরে বলের সমান রান করে ফেলেন ওয়াহাব রিয়াজ। ৪৯তম ওভারে রশিদ খানকে বিশাল এক ছক্কা মেরে ম্যাচটাকে শেষ ওভারে নিজেদের করে নেয়ার সুযোগ করে দেন রিয়াজ। শেষ ওভারে পাকিস্তানের দরকার ছিল ৬ রান। দুই বল হাতে রেখেই ৪ মেরে পাকিস্তানকে অসাধারণ এক জয় এনে দেন ইমাদ ওয়াসিম। ইনিংস শেষে ৪৯ রানে অপরাজিত ছিলেন এই অলরাউন্ডার।

 

বল হাতে দুই উইকেট এবং ব্যাট হাতেও দারুণ ব্যাটিং করার জন্য ম্যান অব দ্য ম্যাচ তারই প্রাপ্য ছিল এদিন। পুরস্কার নিতে এসে বলেন, ‘আমি যখন ক্রিজে যাই তখন রশিদ অসাধারণ বোলিং করছিল। সত্যি কথা বলতে, তার বলই আমি বুঝছলাম না। আমি শুধু ক্রিজে পড়ে ছিলাম এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম অন্তত ৫০ ওভার খেলে আসব। তাদের বিশ্বসেরা স্পিনার রয়েছে। আমাদের লক্ষ্যই ছিল পেস বোলারদের আক্রমণ করা। মাঠের দর্শকদের অনেক ধন্যবাদ এমন সমর্থন দেয়ার জন্য। মনে হচ্ছিল যেন ঘরের মাঠে খেলছিল। পরের ম্যাচটি জিততে চাই। জানি না কী হবে। তবে এখন আমরা বিশ্বাস করছি এখান থেকে ভালো কিছুই হবে।’