সেঞ্চুরি করেই সমালোচনার জবাব দিলেন বেয়ারস্টো
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৯:০৬ এএম, ১ জুলাই ২০১৯ সোমবার

ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ। স্টেডিয়ামে নেই তেমন আশানরূপ দর্শক। কিন্তু ইংল্যান্ড দলের সমালোচনা করতে যেন সবার আগে এক পা দিয়ে রাখে ইংলিশরা। পান থেকে চুন খসলেই ইংলিশদের সমালোচনা করতে জুড়ি মেলা ভার। বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে এসেও ইংলিশদের সেই চিরাচরিত রূপটা আবার দেখতে পেল সবাই।
ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের সেমির স্বপ্ন জন্য নিভু নিভু তখন সমালোচকদের এক হাত নিয়েছিলেন বেয়ারস্টো। সেই বেয়ারস্টোর কথা বলার ভঙ্গিমা আবার পছন্দ হয়নি সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইকেল ভনের। তিনিও সমালোচনা করে বসেন বেয়ারস্টোর। এই ঘটনা নিয়ে ইংলিশদের অন্দরমহলে অনেক জল গড়িয়েছে। সেগুলো সামনে না আসলেও সমালোচনার জবাব ব্যাট দিয়েই বুঝিয়ে দিয়েছেন বেয়ারস্টো। বিশ্বের বর্তমান এক নম্বর দল ভারতের বিপক্ষে দাপট দেখিয়ে তুলে নিয়েছেন বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি। যেই সেঞ্চুরির হাত ধরেই বিশ্বকাপের সেমির স্বপ্ন আবারো উজ্জ্বল করলো ইংল্যান্ড। পাক্রমশালী ভারতকে ৩১ রানে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। এই জয়ের ফলে বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে আবার টেবিলের চারে উঠে আসলো ইংল্যান্ড। শেষ ম্যাচে কিউইদের হারালেই বিশ্বকাপের সেমিতে উঠে যাবে থ্রি লায়ন্সরা।
ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে বেয়ারস্টো মন্তব্য করেছিলেন, ‘মানুষ আমাদের ব্যর্থতার জন্য অপেক্ষা করছে। তারা চায় না যে আমরা জিতি। অনেকভাবেই তারা আপনার হারের জন্য অপেক্ষা করছে। যাতে করে তারা আপনার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে।’ বেয়ারস্টোর ক্ষোভটা আসলে অনুমেয়ই ছিল। বিশ্বকাপের তিন সেমি ফাইনালিস্ট আগেই নিশ্চিত হয়ে গেছে প্রায়। শুধু একটি জায়গা বাকি ছিল। যে জায়গাটার জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল ইংল্যান্ডই। সেই ইংল্যান্ডকেই কেন এতসব সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে।
বিশ্বকাপে নিজেদের অষ্টম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে টসে জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ন মরগান। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে তিনি যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ভুল করেননি সেটিই প্রমাণ করেন ইংলিশ দুই ওপেনার জেসন রয় ও জনি বেয়ারস্টো। বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর ইনজুরিতে পড়েছিলেন জেসন রয়। সেই ম্যাচের পর দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে ছিলেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই আবার মাঠে ফিরেন এই ওপেনার। এই দুই ওপেনার শুরু থেকে ভারতীয় বোলারদের বেধরক মারের উপর রাখেন। বুমরাহ একটু রয়ে সয়ে খেললেও অন্য বোলাররা কেউই ছাড় পাননি এই দুই ওপেনারের হাত থেকে।
ম্যাচের প্রথম ১১ ওভারেই দলীয় রান ৬০ পার করেন এই দুই ব্যাটসম্যান। এদিন রয়ের থেকে বেশি মারমুখী ছিলেন বেয়ারস্টো। ১৬তম ওভারে চাহালের তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকিয়ে নিজের অর্ধশতক পূরণ করেন বেয়ারস্টো। ওই ওভারে আরো একটি ছক্কা হাঁকিয়ে ৫৮ বলে পৌছে যান ৬১ রানে। ১৬ ওভারে ইংল্যান্ডের রান গিয়ে দাঁড়ায় ১১২তে। এরপরের ওভারেই অর্ধশতক পূরণ করেন আরেক ব্যাটসম্যান জেসন রয়। দুজনের মারমুখী ব্যাটিংয়ে ২১ ওভারেই ইংল্যান্ডের রান গিয়ে দাঁড়ায় ১৫৫ তে। এক পর্যায়ে স্কোর প্রেডিক্টরে ইংলিশদের রান দেখাচ্ছিল ৩৭০ এর বেশি। কিন্তু কুলদীপ আঘাত হানলে সেই স্বপ্নে ভাটা পড়ে।
২৩ তম ওভারের প্রথম বলেই লং অন দিয়ে ছক্কা হাকাতে গিয়ে বদলি ফিল্ডার জাদেজার হাতে ক্যাচ দেন জেসন রয়। ভাঙে দুজনের ১৬০ রানের জুটি। জেসন রয় ৬৬ রানে আউট হলেও ঠিকই সেঞ্চুরি তুলে নেন বেয়ারস্টো। ২৬তম ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে এবারের বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিটির দেখা পান তিনি। জেসন রয়, জো রুট, জশ বাটলার, ইয়ন মরগানের পর পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরির দেখা পান বেয়ারস্টো।
সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি বেয়ারস্টো। শতরানের সঙ্গে আর মাত্র ১১ রান যোগ করে মোহাম্মদ শামীর বলে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি। ৩২ ওভারে ২০৫ রানে যখন ইংলিশদের দুই উইকেট পড়ে তখন ক্রিজে আসেন ইয়ন মরগান। কিন্তু আদোতে তেমন কোন প্রভাবই ফেলতে পারেননি তিনি। ৯ বল থেকে মাত্র ১ রান করে শামির বলে আউট হন মরগান। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ইনিংস মেরামতের কাজ করেন জো রুট ও বেন স্টোকস। দুজনের ৭০ রানের জুটি আবারো বড় রানের স্বপ্ন দেখায় ইংল্যান্ডকে। মাঝের ওভারগুলোতে ভারতীয় বোলাররা কিছুটা চেপে ধরেছিল ইংল্যান্ডকে।
৫৪ বলে ৪৪ রান করে মোহাম্মদ শামীর তৃতীয় শিকারে পরিণত হন রুট। ৪৪ ওভারের প্রথম বলে তিনি যখন আউট হন তখন দলের রান ৪ উইকেট হারিয়ে ২৭৭। শেষ দিকে বেন স্টোকস ও জশ বাটলার কিছুটা ঝড় ওঠানোর চেষ্টা করেন। বেন স্টোকস বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় অর্ধশতক তুলে ৭৯ রানে আউট হন। আর অন্যদিকে, জশ বাটলার করেন ২০ রান। ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩৩৭ রানের লড়াকু পুঁজি পায় ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপে এত রান টপকে আর কোন দলই কোন ম্যাচ জিততে পারেনি।
এত বিশাল রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই লোকেশ রাহুলের উইকেট হারায় ভারত। এরপর কোহলি ও রোহিত শর্মা জুটি গড়ে তোলেন। ১৩৮ রানের জুটি গড়ে যখন ইংল্যান্ডকে ভয় লাগিয়ে দিচ্ছিল ভারত। তখন বিরাট কোহলিকে ৬৬ রানে আউট করে ম্যাচে প্রাণ ফিরিয়ে আনেন লিয়াম প্লাঙ্কেট। কিন্তু অন্য প্রান্ত আগলে রেখে ঠিকই এবারের বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন রোহিত শর্মা। ১০২ রান করে তিনি থামেন ওকসের বলে। সৌরভ গাঙ্গুলির পর রোহিতই একমাত্র ভারতীয় ব্যাটসম্যান যে কি না এক বিশ্বকাপে ৩টি সেঞ্চুরি করলো। রোহিতের আউটের পর আর পেরে ওঠেনি ভারত। শেষ পর্যন্ত ৩১ রান দূরে থাকতেই ইনিংস থামে ভারতের।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়া জনি বেয়ারস্টো বলেন, ‘টস জেতার পর দলের জন্য একটা প্লাটফর্ম তৈরি করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সতীর্থরা খুব হতাশ হয়ে পড়ছিল কারণ আমরা ভালো খেলছিলাম টুর্নামেন্টে কিন্তু ফলাফল আমাদের পক্ষে আসতেছিল না। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে আমরা আরো উন্নতি করার চেষ্টা করবো। আমি প্রত্যেক বলই শট খেলার চেষ্টা করেছি। ভিভিএস লক্ষণ সানরাইজার্স হায়দরাদাবাদে আমার অনেক উপকার করেছে। ও দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে স্পিনারদের বিপক্ষে মারমুখী হয়ে খেলতে হয়। তারা প্রথম দিকে ভালো বোলিং করেছিল। আমার কয়েকটি ব্যাটের কিনারাতেও লাগে। কিন্তু পরবর্তীতে সেগুলোকে মানিয়ে খেলেছি আমরা। আমাদের জন্য পরবর্তী কয়েকদিন তিনটি অবশ্যই জিততে হবে এমন ম্যাচ রয়েছে। কিন্তু আগে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটাতেই বেশি নজর দিচ্ছি।’