রোববার   ১৮ মে ২০২৫   জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩২   ২০ জ্বিলকদ ১৪৪৬

হাসি ও বেভানের হাইব্রিড হলেন ক্যারি

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৯:০৬ এএম, ৩০ জুন ২০১৯ রোববার

অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট তথা বিশ্ব ক্রিকেটে যদি একজন ফিনিশারের নাম বলতে বলা হয়, অকপটেই সবার আগে চলে আসবে মাইকেল বেভানের নাম। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দীর্ঘদিন বিশ্ব মাতিয়ে কুড়িয়েছেন প্রশংসা। ফিনিশারের তকমা গায়ে লাগিয়েছেন নিজেই। প্রতিনিয়ত ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকে। দল যখনই বিপদে পড়ুক, কিংবা ইনিংসের যখনই নামেন না কেন তার ব্যাট সবসময়েই হেসেছে। ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে হঠাৎ করে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি। বেভানের বিদায়ের পর তার জায়গাটাকে কিছুটা হলেও নিজের করে নিতে পেরেছিলেন মাইক হাসি, যদিও হাস তার থেকে উপরে খেলতেন।  

২০১২ সালে হাসি খেলেছেন সর্বশেষ ওয়ানডে ম্যাচ। তার আগে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে জিতেছেন ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ট্রফি। বিশ্ব ক্রিকেটে নন্দিত এই দুই ক্রিকেটারের সংমিশ্রণে যে নতুন কেউ আসতে পারে অজি দলে সেটাই যেন মনে করিয়ে দিলেন এলেক্স ক্যারি। ২৭ বছর বয়সী দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার এই বা-হাতি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানকে দেখে তিনবারের বিশ্বকাপ জয়ী অজি ক্রিকেটার স্টিভ ওয়াহ বলেই ফেললেন মাইক হাসি ও মাইকেল বেভানের সংমিশ্রণে তৈরি এলেক্স ক্যারি। এমনটা বলবে নাই বা কেন তিনি!

বিশ্বকাপে নিজেদের অষ্টম ম্যাচে এসে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ার পর দলকে যেভাবে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলে লড়াই করার মত পুঁজি এনে দেন তখন এমন প্রশংসা তার প্রাপ্যই বটে। অস্ট্রেলিয়ার ৮৬ রানে জয়ের দিনে ৭২ বলে ৭১ রান করে জিতে নিয়েছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। তার এমন আনন্দের দিনে একটু মন খারাপ করতেই পারেন মিচেল স্টার্ক। কেননা, এই বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মত পাঁচ উইকেট নিয়েছেন এই বাহাতি পেস বোলার। শুধু তাই নয়, এক বিশ্বকাপে গ্লেন ম্যাকগ্রার সর্বোচ্চ ২৬ উইকেট থেকে মাত্র ২ উইকেট দূরে রয়েছেন স্টার্ক। তার এমন সাফল্যের দিনে ব্যক্তিগতভাবে পুরস্কৃত না হলেও দলকে তিনি এনে দিয়েছেন মধুর এক জয়।  

দিবারাত্রির ম্যাচে শুরুতেই টস জিতে অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ এদিন ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে আগের ম্যাচগুলোর মত এদিন তেমন সুবিধা করতে পারেননি ডেভিড ওয়ার্নার ও ফিঞ্চ। পঞ্চম ওভারেই অজিদের ওপেনিং জুটিতে ফাটল ধরান কিউই পেস মেশিন ট্রেন্ট বোল্ট। লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে ফিঞ্চকে মাত্র ৮ রানেই ফিরিয়ে দেন তিনি। ওয়ার্নারও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। মাত্র ১৬ রান করে  লকি ফারগুসনের বলে আউট হলে ১০ ওভারে ৪০ রান তুলতেই দুই উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে অস্ট্রেলিয়া।

উইকেট যাওয়া আসার মিছিলে এক প্রান্ত আগলে রাখেন উসমান খাজা। ১২তম ওভারে স্টিভ স্মিথকে ৫ রানে ফিরিয়ে অজিদের ঘোরতর বিপদে ফেলেন ফারগুসন। এরপর কিছুটা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা চালায় পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু ২০তম ওভারের শেষ বলে স্টইনিসকে ব্যক্তিগত ২১ রানে ফিরিয়ে ৩৫ রানের জুটি  ভাঙেন জিমি নেশাম। তার যাওয়ার টিকতে পারেননি গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও। ব্যক্তিগত ১ রান করে সেই নেশামের বলে তার হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন অজিদের এই হার্ড হিটার। ২২তম ওভারে ক্রিজে আসেন এলেক্স ক্যারি। তখন অন্যপাশে ৫২ বলে থেকে ৩২ রান নিয়ে ব্যাট করছিলেন উসমান খাজা।

২৪ তম ওভারে নেশামের বলে লাথাম ক্যাচ ফেলে না দিলে হয়তো লজ্জাজনক দলীয় সংগ্রহই পেতে হতো অজিদের। তখন দলের রান ছিল মাত্র ১০৬। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে এলেক্স ক্যারিকে সঙ্গে নিয়ে উসমান খাজা গড়ে তোলেন ১০৭ রানের ম্যাচ বাঁচানো জুটি। ১০৭ রানের ভেতর ৭১ রানই ছিল ক্যারির। আর মাত্র ৩৫ রান ছিল খাজার। ৪৭ বলে নেশামকে নবম চার মেরে নিজের অর্ধশতক পূরণ করেন ক্যারি। তখন অন্য প্রান্তে ৫৮ রান নিয়ে ব্যাট করছিলেন খাজা। কিন্তু খাজার থেকেও রান তোলার গতিতে অনেক এগিয়ে ছিলেন ক্যারি। ৩৫তম ওভারে দলের রান ১৬০ পার করেন এই দুজন। অথচ ক্যারি যখন ক্রিজে আসছিল তখন স্কোর প্রেডিক্টরে দেখাচ্ছিল অজিরা করতে পারবে মাত্র ১৮৫ রান!

 

 

ক্যারি ও খাজার এই জুটিটাই পুরো ম্যাচের চিত্র পালটে দেয়। যখন নিয়মিত বোলাররা উইকেট নিতে ব্যর্থ হচ্ছে তখন নিজ হাতে বল তুলে নেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। পুরো ম্যাচে ৭ ওভার বোলিং করে ২৫ রান দিয়ে নিয়েছেন ১টি উইকেট। সেই উইকেটটি হলো ক্যারির। ৪৩তম ওভারের শেষ বলে ক্যারিকে কভারে গাপটিলের তালুবন্দী করে প্যাভিলিয়নে ফেরান উইলিয়ামসন। দলীয় ১৯৯ রানে ক্যারির বিদায়ের পর পরবর্তী সময়টা রান বাড়ানোর মিশনে নামেন খাজা। কিন্তু এ ম্যাচেও তিনি ব্যর্থ হন। উপরন্তু, ট্রেন্ট বোল্টের করা শেষ ওভারে তার হ্যাটট্রিকের প্রথম শিকারে পরিণত হন খাজা। ৮৮ রান করে আউট হওয়ার পরে  স্টার্ক এবং বেহেনডোর্ফকে পরপর দুই বলে আউট করে এবারের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক করেন ট্রেন্ট বোল্ট। অন্য হ্যাটট্রিকটি করেছেন মোহাম্মদ শামী। ২৪৩ রানের লড়াকু পুঁজিকে অস্ট্রেলিয়ান বোলাররা পাহাড়সম করে তোলেন। আর এই কাজে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মিচেল স্টার্ক।

নিয়মিত ওপেনার কলিন মুনরোর ধারাবাহিক ব্যর্থতার দরুণ এই ম্যাচে সুযোগ পান হেনরি নিকোলস। তিনিও ব্যর্থ হন। মাত্র ৮ রানেই বেহেনডোর্ফের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। এরপর গাপটিলও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। মাত্র ২০ রান করেই ফেরেন তিনি।  তৃতীয় উইকেটে ৫৫ রানের জুটি গড়লে সেই জুটিতে ভাঙন ধরান মিচেল স্টার্ক। উইলিয়ামসনকে ৩০ রানে ফিরিয়ে কিউইদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেন তিনি। এরপর শুধু যাওয়ার আসার মিছিলেই ব্যস্ত ছিল কিউইরা। ৪৩.৪ ওভারেই মাত্র ১৫৭ রানে অলআউট হয়ে যায় তারা। মিচেল স্টার্ক ২৬ রান দিয়ে নেন ৫ উইকেট।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়া ক্যারি পুরস্কার নিতে এসে বলেন, ‘আমরা ব্যাটিংয়ে এমন বাজে শুরু চাইনি। ৯২ রানে ৫ উইকেট পড়ে গিয়েছিল আমাদের। কিন্তু সেটাকে মানিয়ে কীভাবে আমরা ক্রিজে টিকে ছিলাম সেটাই মুখ্য বিষয়। আমার কোনো তাড়া ছিল না, শুধু পরিস্থির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে আমি আমার স্বাভাবিক খেলা খেলছিলাম। পিচ কিছুটা স্লো ছিল। এজন্য এখানে স্পিনাররা আজ বেশ ভালো বোলিং করেছে। আমি স্বাভাবিক থেকেই আমার শক্তির জায়গাগুলোকে আস্তে আস্তে প্রকাশ করছিলা। আজকের দিনটাই আমাদের জন্য আনন্দের। খাজাকেও ক্রেডিট দিতে হয়, কারণ সে সঠিক সময়ে সঠিক ইনিংসটাই খেলেছে। তাছাড়া স্টার্কও। অসাধারণ বোলিং করেছে আজও। আমি ব্যাটিংটাকে বেশ উপভোগ করছি, যখনই সুযোগ পাই না কেন। যদিও শেষ দশ ওভারেই আমি বেশি সুযোগ পেয়ে থাকি। রস টেলরের ক্যাচটা ধরা কঠিন ছিল। নীল আকাশের সঙ্গে মিলিয়ে বলটাকে নজর রেখে ধরাটা অনেক কঠিন ছিল। আমরা এমন ভালো পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা বজায় রাখব আশা করি।’