বিশ্বরেকর্ড গড়ার দিনটা স্মরণীয় করে রাখলেন কোহলি
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৯:১৫ এএম, ২৮ জুন ২০১৯ শুক্রবার

বিরাট কোহলির জন্য বোধ হয় এর থেকে ভাল উপলক্ষ আর ছিল না। বিশ্বকাপের মঞ্চ সঙ্গে চিরচেনা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল যাদের বিপক্ষে শেষ ৭-৮ দেখায় ৪টি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন বর্তমান সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান। সেই উন্ডিজদের বিপক্ষে বিশ্বরেকর্ড গড়ে দলকে জিতিয়ে নিয়েছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে ২০ হাজার আন্তর্জাতিক রান করার কৃতিত্ব গড়লেন এই ব্যাটসম্যান, এতদিন যা ছিল তারই স্বদেশী শচীন টেন্ডুলকারের দখলে।
এমন রেকর্ডের দিনে তার অসাধারণ ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্বের কাছেই হেরে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভারতের দেয়া ২৬৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র ১৪৩ রানেই গুটিয়ে যায় হোল্ডারের দল। ভারতের হয়ে ইনিংস সেরা ৭২ রান করেন বিরাট কোহলি আর সেটাই তাকে ম্যাচ শেষে পাইয়ে দেয় ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার।
টস জিতে ম্যানচেস্টারের আগেই ব্যবহৃত পিচে নির্দ্বিধায় ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল স্বপ্ন কিঞ্চিত টিকে ছিল এই ম্যাচের আগে উইন্ডিজদের। কিন্তু এই ম্যাচে হার দিয় সেটাও নিভে গেল। একমাত্র দল হিসেবে বিশ্বকাপে এখনো অপরাজিত রইল ভারত।
ড্রাই পিচে শুরু থেকেই উইন্ডিজ বোলাররা বেশ চড়াও হয়ে বোলিং করতে থাকে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। প্রথম ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান তোলে ভারত। এরপর কিছুটা মারমুখী হয়ে খেলতে থাকেন দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল। কিন্তু এতেই বিপত্তিটা বাধে। ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে কেমার রোচের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন রোহিত শর্মা। আম্পায়ার শুরুতে নট আউটের সিদ্ধান্ত দেয় কিন্তু পরে উইন্ডিজরা রিভিউ নিলে সেখানে দেখা যায় বল ব্যাটে লেগে শাই হোপের হাতে গেছে। ২৯ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর ক্রিজে আসেন বর্তমান সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে লোকেশের সঙ্গে ৬৯ রানের দারুণ জুটি গড়ে শুরুর বিপর্যয় সামাল দেন। প্রথম দশ ওভারে ৪৭ রান তোলে ভারত যা এবারের বিশ্বকাপে তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। উইন্ডিজ বোলাররা এ দিন লাইন-লেংথ মেনে বোলিং করায় তেমন সুযোগ পাচ্ছিলেন না কোহলি। তাই সিঙ্গেলস আর ডাবলের উপরেই থাকতে হয়েছে তাকে। ২০ ওভার পরে ভারতের রান যখন ৯৭ ঠিক এর পরের ওভারেই আঘাত হানেন অধিনায়ক জেসন হোল্ডার।
লোকেশ রাহুলকে অর্ধশতক থেকে মাত্র দুই রান দূরে থাকতে ক্লিন বোল্ড করেন হোল্ডার। তখন ৩০ রান নিয়ে ব্যাট করছেন বিরাট কোহলি। ৯৮ রানে দুই উইকেট হারানোর পর ক্রিজে আসেন ভিজয় শঙ্কর। কিন্তু তিনিও নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। কেমার রোচের বলে শাই হোপের হাতে ক্যাচ দিয়ে মাত্র ১৪ রান করেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন এই অলরাউন্ডার। শঙ্করের পরেই ক্রিজে আসেন কেদার যাদব। ২৮তম ওভারে ওশেন থমাসের বলে সিঙ্গেল নিয়ে এবারের বিশ্বকাপে চতুর্থ অর্ধশতক পূর্ণ করেন কোহলি।
যাদবের সঙ্গে ১৪ রানের জুটির পর যাদবও রোচের বলে ফিরে গেলে ১৪০ রানের ভেতর ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে ভারত। সেখান থেকে ধোনির সঙ্গে ৫ম উইকেটে ৪০ রানের জুটি গড়ে বিপর্যয় সামাল দেন। দলের রান যখন ১৮০, দলের যখন তাকে খুব প্রয়োজন তখনই কোহলিকে ৭২ রানে এক শর্ট ডেলিভারিতে ফেরান জেসন হোল্ডার। মিড উইকেটে থাকা বদলি ফিল্ডার ড্যারেন ব্রাভোর হাতে ক্যাচ দেন কোহলি। ৭২ রানের ইনিংসটিতে ৮টি চার মারেন বিশ্বসেরা এই ব্যাটসম্যান।
এই ৭২ রানের ইনিংসের মাঝেই বিরাট কোহলি স্পর্শ করেন সেই ল্যান্ডমার্কটি। সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে ২০ হাজার আন্তর্জাতিক রান করার কৃতিত্ব গড়েন তিনি টেন্ডুলকারকে টপকে মাত্র ৪১৭ ইনিংসে। ২০০৩৫ আন্তর্জাতিক রানের ভেতর ৬৬টি সেঞ্চুরি, ৯৩টি হাফ সেঞ্চুরিও রয়েছে তার। ১৫ হাজার, ১৬ হাজার, ১৭ হাজার, ১৮ হাজার, ১৯ হাজার আন্তর্জাতিক রানের মাইলফলকও সবার চেয়ে অনেক দ্রুত সময়ে স্পর্শ করেছেন কোহলি।
কোহলির আউটের পর কিছুটা ঢিমেতালে চলে ভারতের ইনিংস। তবে শুরুতে দেখেশুনে খেলে শেষ দিকে এসে তাণ্ডব চালান ধোনি ও হার্দিক পান্ডিয়া। দুজনের ৭০ রানের জুটি ভাংগে পান্ডিয়ার ৪৬ রানে আউট হওয়ার মধ্য দিয়ে। আর ধোনি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৫৬ রানে। শেষ ওভারে ওশেন থমাসের বলে একাই ১৬ রান নেন তিনি যার ভেতর ছিল ২টি ছক্কা ও একটি চার।
২৬৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই বুমরাহ, শামিদের বোলিং তোপে ব্যাকফুটে পড়ে উইন্ডিজরা। বলার মত ওপেনিংয়ে প্রথমবার খেলতে নামা সুনিল এমব্রিস ৩১ ও নিকোলাস পুরানের ২৮ রান ছাড়া কোন ব্যাটসম্যানই তেমন দাঁড়াতে পারেননি ভারতীয় বোলারদের সামনে। আগের ম্যাচে হ্যাটট্রিকসহ ৪ উইকেট নেয়া মোহাম্মদ শামি এই ম্যাচে মাত্র ১৬ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট।
১২৫ রানের বড় জয়ে অধিনায়ক হিসেবেও কিছু রেকর্ড গড়েছেন কোহলি। প্রথম ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে এশিয়ার বাইরে টানা ১০ ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়লেন কোহলি। তাছাড়া বিশ্বকাপে ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে টানা ৫ ম্যাচ জয়েরও রেকর্ড এখন কোহলির দখলে। মাত্র ৭২ রান করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন কোহলি। যা তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সবচেয়ে কম রান করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতার নজির। এর আগে ২০১৩ সালে রাচিতে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ৭৭* রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন।
বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মত ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার নিতে এসে কোহলি বলেন, আমরা গতকালই র্যাংকিংয়ে এক নাম্বার হয়েছি। সত্যি কথা বলতে আমরা দীর্ঘদিন ধরেই ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে যাচ্ছি। শেষ দুই ম্যাচে আমরা আশানরূপ ব্যাটিং করতে পারিনি কিন্তু তারপরেও আমরা জয় পেয়েছি, যেটা সত্যিই আনন্দ দেয়। নিজের পারফরম্যান্সে আমি খুশি। আমরা আগের ম্যাচের মতই এই ম্যাচে একই অবস্থায় ছিলাম। কিন্তু সেখান থেকে ২৭০ রান পর্যন্ত যাওয়াটা ইতিবাচক।
কোহলি বলেন, আগের ম্যাচে আমরা ভালো মত হিসাব কষতে পারিনি, দ্রুত দুই উইকেট হারাই কিন্তু আজ আমরা অনেক উন্নতি করেছি। হার্দিক ভালো খেলেছে, ধোনি সেটা শেষ করে এসেছে। যখন এই দুইজন ভালো খেলে তখন আমরা বড় স্কোর পাই। ২৭০ রান আসলেই ভালো। বিপক্ষ দলকে শুরু থেকেই চাপে রাখতে পেরেছি। আমার দলের ব্যাটসম্যানদের তেমন কিছু বলার প্রয়োজন মনে করি না আমি, কারণ তারা পিচের সঙ্গে মানিয়ে ভালো খেলার চেষ্টা করছে তাদের সামর্থ্য এবং দুর্বলতা অনুযায়ী। আমার গেম প্লানই হল, সিঙ্গেলস-ডাবলস নেব যেটা ওয়ানডে ক্রিকেটে বড় ফ্যাক্টর। আমার ৭০ শতাংশ রান এভাবেই আসে। দুই কঠিন পিচে দলের এমন পারফরম্যান্সে আমি সত্যিই খুশি।