রোববার   ১৮ মে ২০২৫   জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩২   ২০ জ্বিলকদ ১৪৪৬

পাকিস্তানের ৩২ বছরের সেঞ্চুরি খরা দূর করলেন বাবর আজম

স্পোর্টস ডেস্ক 

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১২:২৫ পিএম, ২৭ জুন ২০১৯ বৃহস্পতিবার

বাবর আজম যখন সেঞ্চুরিটা করলেন তখন ধারাভষ্য কক্ষে ওয়াসিম আকরামের মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসলো, ’৩২ বছর পর সেলিম মালিকের পর প্রথম পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান হিসেবে মিডল অর্ডারে সেঞ্চুরি করলেন বাবর আজম।’ হ্যাঁ, বাবর আজম যাকে ধরা পাকিস্তানের ব্যাটিং স্তম্ভ, যাকে আঁকড়ে ধরে পাকিস্তান বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল শুরুতে সেই আজম প্রথম দিকে না পারলেও শেষ দিকে এসে জ্বলে উঠলেন। নিজের স্বভাবসুলভ ব্যাটিং করে কুড়ালেন পুরো বিশ্বের প্রশংসা। কিউইদের বিপক্ষে বাঁচা-মরার সমীকরণে সেঞ্চুরি করে জেতালেন পাকিস্তানকে, টিকিয়ে রাখলেন বিশ্বকাপে। এমন একদিনে তিনি জ্বলে উঠলেন যেদিন তাকে খুব দরকার ছিল পাকিস্তানের। ধুঁকতে থাকা সরফরাজবাহিনীদের মাটির তলায় ছিল না কিছুই। বিশ্বকাপের সেমির যেটুকু সম্ভবনা আছে তা কেবল টিকে রইল বাবর আজমের কল্যাণেই।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নামার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়েও স্বস্তিতে ছিল না পাকিস্তান। কেননা বাংলাদেশ আগের ম্যাচেই আফগানদের হারিয়ে তাদের উপর চাপ রেখেছিল। তাই এই ম্যাচ জেতার কোনো বিকল্প ছিল না। তার উপর নিজ দেশে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের বিশেষ করে সরফরাজকে নিয়ে নানা সমালোচনার মধ্যেই এজবাস্টনে খেলতে নামে পাকিস্তান। নিজেদের ৭ম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নামার আগে বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের যে কয়টি ম্যাচে যা ফলাফল এসেছে তা পুরোটাই হুবহু মিলে গেছে ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ফলাফলের সঙ্গে। সেবার ইমরান খানের হাত ধরে বিশ্বকাপ জিতেছিল পাকিস্তান। এবার সরফরাজ ইমরান খান হতে পারেন কি না সেটা সময়েই বলে দিবে।

এজবাস্টনে বৃষ্টির কারণে এক ঘন্টা পর খেলা শুরু হয়। কিছুটা ভেজা উইকেটে টস জিতে সবাইকে অবাক করে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন কেন উইলিয়ামসন। এজবাস্টনের কানায় কানায় পরিপূর্ণ পাকিস্তানি দর্শকদের গগনবিদারী চিৎকারে ব্যাটিংয়ে দিশেহারা হয়ে পরে কিউইরা। মাত্র ২৩৭ রান তুলতে সক্ষম হয় তারা। যেখানে পাকিস্তানের হয়ে এদিন ৪টি উইকেট নিয়েছেন শাহিন আফ্রিদি।

২৩৮ রানের লক্ষ্যে নেমে শুরুতেই ফখর জামানকে দলীয় ১৯ রানে হারায় পাকিস্তান। ট্রেন্ট বোল্টের বল মিড অনের উপর দিয়ে মারতে গিয়ে টাইমিং মিস করে ক্যাচ তুলে দেন ফখর। এরপর ক্রিজে আসেন বাবর আজম। ইমাম উল হককে নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজ শুরু করেন। কিন্তু কিউই পেসার লকি ফার্গুসন, ম্যাট হেনরি ও বোল্টের পেস গতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছিল তাদের। প্রথম দশ ওভারে ৪৩ রান তুলে ১১তম ওভারেই লকি ফার্গুসনের এক বাউন্সে মার্টিন গাপটিলের অসাধারণ এক ক্যাচে ব্যক্তিগত ১৯ রানেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন ইমাম।

৪৪ রানে উদ্বোধনী দুই ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপে পড়ে পাকিস্তান। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দলের হাল ধরেন অভিজ্ঞ মোহাম্মদ হাফিজ ও বাবর আজম। কিউই পেসারদের দেখেশুনে খেলার পাশাপাশি তাদের বা হাতি অফ স্পিনার সান্টনারের টার্ন করা বলগুলোকে বেশ ভালোভাবে মোকাবেলা করতে থাকেন তিনি। ২০ ওভারে দলের রান দাঁড়ায় ৮৬। এই দুজনের ৬৬ রানের জুটিটি ভাঙেন অনিয়মিত বোলার কেন উইলিয়ামসন।

২৫তম ওভারে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে উইলিয়ামসনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফার্গুসনের হাতে ক্যাচ দেন হাফিজ। বিশ্বকাপে এই নিয়ে তৃতীয়বারের মত কোন অনিয়মিত বোলার বলে আউট হলেন হাফিজ। এর আগে অ্যারন ফিঞ্চ ও মারকরামের বলে আউট হয়েছিলেন হাফিজ। চতুর্থ উইকেট জুটিতে হারিস সোহেলের সঙ্গে জুটি গড়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যাওয়ার কাজটি সারেন বাবর আজম। এরই মাঝে ৬৫ বলে নিজের অর্ধশতক পূরণ করেন তিনি।

চতুর্থ উইকেটে বাবর ও হারিস সোহেলের ১২৬ রানের বড় জুটি পাকিস্তানকে এনে দেয় অসাধারণ এক জয়। দল যখন জয় থেকে ২ রান দূরে তখন আউট হন হারিস সোহেল। কিন্তু আউট হওয়ার আগে ৭৬ বলে ৬৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে যান তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও আগের ম্যাচে তিনি ৮৯ রান করেছিলেন। শোয়েব মালিকের পরিবর্তে দলে ঢুকে বেশ কার্যকর ভূমিকাই রাখলেন দুই ম্যাচে দলের জয়ে।

হারিস আউট হওয়ার আগেই ৭৮তম ওভারে ডিপ কভারে বল পাঠিয়ে এক রান নিয়ে এবারের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরিটি করলেন বাবর আজম। বিশ্বকাপেও এটি তার প্রথম সেঞ্চুরি। ১৯৮৭ সালে সর্বশেষ কোন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে সেলিম মালিক সেঞ্চুরি করেছিলেন পাকিস্তানের হয়ে। ২৪ বছর ২৫৪ দিনে সেঞ্চুরিটি করে সেলিম মালিকের পর তিনিই হলেন কমবয়সী পাকিস্তানি যে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি হাঁকাল। এছাড়া এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে তিনি ৩ হাজার রানের মাইলফলকও স্পর্শ করেন মাত্র ৬৮ ইনিংসে। ৫৭ ম্যাচে হাশিম আমলা করেছিলেন তারপরেই রয়েছেন বাবর। আরো কাকতালীয় ব্যাপার হলো ১৯৯২ সালে এই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে দলকে জিতিয়েছিলেন রমিজ রাজা, এবার সেঞ্চুরি করে দলকে জেতালেন বাবর আজম। মিডল অর্ডারে পাকিস্তানিদের ভেতর বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান করেছেন জহির আব্বাস ও জাভেদ মিয়াদাদ। দুজনেই করেছেন ১০৩ রান। বাবর আজম ১০১ রান করে তাদের পেছনেই রয়েছেন।  

পাকিস্তার ব্যাটিংয়ে বাবর আজমের এমন কীর্তির আগে তাদের কাজটা সহজ করে দেন দুই পাকিস্তানি ওপেনার মোহাম্মদ আমির ও শাহীন আফ্রিদি। এই দুইজনের বিধ্বংসী বোলিংয়ে একশো রানের আগেই ৫ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে কিউইরা। সেখান থেকে কলিন দে গ্রান্ডহোম ও জিমি নেশাম ১৩২ রানের জুটি গড়ে দলকে দুইশো পার করান। গ্রান্ডহোম ৬৪ রান করে আউট হলেও নেশাম শেষ পর্যন্ত ৯৭ রানে অপরাজিত থেকে দলকে সম্মানজনক এক সংগ্রহ এনে দেন।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়া বাবর আজম পুরস্কার নিতে এসে বলেন, আমার মনে হয়, ‘এটাই ওয়ানডেতে আমার সেরা ব্যাটিং কারণ এটা বাঁচা-মরার ম্যাচ ছিল। উইকেট কিছুটা স্লো ছিল যেখানে স্পিন ধরছিল। লক্ষ্যই ছিল ইনিংসের শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করে আসা এবং এটা কাজ করেছে। আমরা যখন ব্যাটিং শুরু করি তখন লক্ষ্য ছিল পেস বোলারদের বিশেষ করে ফার্গুসনকে দেখে খেলব। কিন্তু যখন সানটনার আসলো দেখলাম বল ভাল বেশ টার্ন নিচ্ছিল। আমরা বুঝতে পারছিলাম যে, ফার্গুসনের থেকে এখন সানটনারকে নিয়ে ভাবা উচিত। লক্ষ্যই ছিল তাকে দেখে শুনে খেলা। হাফিজ ভাইও আমাকে এটাই বলেছেন। পিচে আঁকড়ে থাকো এবং ভালোভাবে খেলো। আমরা যখনই ইংল্যান্ডে খেলি তখনই ভালো সমর্থন পাই দর্শকদের। আশা করছি, এমন সমর্থন সামনেও পাবো।’