মেলবোর্ন থেকে লর্ডস একটুও পাল্টাননি ফিঞ্চ
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১০:৪২ এএম, ২৬ জুন ২০১৯ বুধবার

দিন যায় অ্যারন ফিঞ্চ যেন পাল্টান না। মেলবোর্ন থেকে লর্ডস; ক্রিকেটের দুই ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়ামে ইংলিশদের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। চার বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় হওয়া বিশ্বকাপে ইংলিশদের বিপক্ষে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ১২৮ বলে ১৩৫ রানের অসাধারণ একটি ইনিংস খেলেছিলেন ফিঞ্চ। এবার ইংল্যান্ডের মাটিতে ক্রিকেটের মক্কা খ্যাত লর্ডসে করলেন সেঞ্চুরি। ১১৬ বলে ১০০ রানের অনবদ্য সেঞ্চুরির কল্যাণেই অস্ট্রেলিয়া পায় বড় রানের ভিত। সেই রান টপকাতে গিয়েই নতজানু হয়ে পড়ে কুলিন ইংলিশ দল। তাই অস্ট্রেলিয়ার ৬৪ রানের জয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার মঞ্চে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখলেন তিনি। অথচ এই ফিঞ্চ যে বিশ্বকাপে এতটা ভালো খেলবে সেটা কে জানতো?
সর্বশেষ ১২টি ম্যাচের আগে ১২টি ম্যাচ খেলে করেছিলেন মোটে ২৬২ রান; যেখানে একটিও সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারেননি, গড় ছিল মাত্র ২১.৮। সেই ফিঞ্চ কিনা শেষ ১২টি ম্যাচে ৮৬.০৯ গড়ে করেছেন ৯৪৭ রান। যেখানে সেঞ্চুরি রয়েছে ৪টি! অবিশ্বাস্য এই ফিঞ্চের কারণে ধুঁকতে থাকা অস্ট্রেলিয়া যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। বিশ্বকাপের আগের এক বছর ওয়ার্নার-স্মিথকে ছাড়া অজি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে অনেক বাজে সময় পার করেছেন। কিন্তু শেষ কয়েকটি ম্যাচ তথা বিশ্বকাপে যেন নিজের জাত চিনিয়েছেন এই অজি ব্যাটসম্যান। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি অধিনায়কত্বেও তিনি অন্যান্য সবার মন জয় করেছেন।
ম্যাচের গুরুত্বের দিক দিয়ে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের থেকে কম গুরুত্ব বহন করে না এই ম্যাচটি। মর্যাদার এই লড়াইয়ে শুরুতে টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ন মরগান। আগের ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে অপ্রত্যাশিত হারে কিছুটা বিপর্যস্ত দেখা গেছে এদিন ইংল্যান্ড দলকে। পুরো ম্যাচেই তাদের ফিল্ডারদের মিসফিল্ডিং ছিল চোখে পড়ার মত। অথচ এই ইংল্যান্ড অনেকেরই অচেনা। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচের থেকেও এই ম্যাচে স্পটলাইট ছিল ওয়ার্নার-স্মিথের উপর। তাদের সঙ্গে ইংলিশ সমর্থকরা কেমন আচরণ করেন সেটাই দেখার অপেক্ষায় ছিল সবাই। চিরাচরিত ইংলিশ সমর্থকরা তাদের স্বভাবখচিত ব্যবহারটাই করেছেন এই দুই জনের সঙ্গে। ব্যাটিংয়ে ওয়ার্নার কিংবা স্মিথ যখন নামেন তখনই তা সাজোরে দুয়োধ্বনি দিতে থাকেন। যদি টস করতে নামার সময় ফিঞ্চ জানিয়েছিলেন, এসব দুয়োধ্বনিকে তারা গ্রাহ্য করেন না। তারা নিজেদের খেলাটা খেলে যেতে চান।
উদ্বোধনী জুটিই ইংলিশদের পুরো ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়। ধীরে ধীরে ইনিংস বড় করার কাজ করতে থাকেন দুই ওপেনার ফিঞ্চ ও ওয়ার্নার। পেস মেশিন আর্চার ও ওকসকে বেশ ভালোভাবেই মোকাবেলা করেন তারা। প্রথম দশ ওভারে ৪৪ রান তুলে ভালো সূচনা করেন দুজনে। ১৮তম ওভারে এসে দলীয় রান দাঁড়ায় ১০০। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে দুই রান নিয়ে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন ফিঞ্চ। এর পরের ওভারেই অর্ধশতক পূরণ করেন ওয়ার্নারও। দুজনের জুটি যখন জমে ক্ষির তখনই আঘাত হানেন মঈন আলী।
২৩তম ওভারের তৃতীয় বলে হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে রুটের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৫৩ রান করে আউট হন ওয়ার্নার। যাওয়ার আগে ৬টি চার হাঁকান তিনি। ১২৩ রানের উদ্বোধনী জুটি অস্ট্রেলিয়াকে তিনশো পার করার স্বপ্ন দেখায়।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে উসমান খাজাকে নিয়ে ৫০ রানের জুটি গড়েন ফিঞ্চ। খাজা বেন স্টোকসের বলে বোল্ড হলে কিছুটা বিপর্যয়ে পড়ে অজিরা। ৩২তম ওভারে দলীয় ১৭৩ রানে খাজা আউট হলে ক্রিজে আসেন স্মিথ। এরই মাঝে জোফরা আর্চারের করা ৩৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ফাইন লেগে ঠেলে দিয়ে দুই রান নিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ফিঞ্চ। এবারের বিশ্বকাপে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে এটি তার চতুর্থ সেঞ্চুরি। ইংলিশদের বিপক্ষে ৫ম এবং সব মিলিয়ে ১৫তম সেঞ্চুরি এটি। হাশিম আমলা, বিরাট কোহল, ধাওয়ান, ওয়ার্নারের পরেই সবচেয়ে কম ইনিঙ্গসে ১৫টি সেঞ্চুরি করার মাইলফলকে পৌছান ফিঞ্চ। ১২৬ তম ম্যাচে এসে তিনি দেখা পান ১৫তম সেঞ্চুরির।
সেঞ্চুরির পরের বলটাতেই ফাইন লেগে ক্রিস ওকসের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ফিঞ্চ। ২টি ছক্কা ও ১১টি চারের সহায়তায় নিজের ইনিংসটি সাজান ফিঞ্চ। ৩৬তম ওভারে ১৯০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া যখন তিনশোর স্বপ্ন দেখছিল তখন ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে তারা। শেষ দিকে আর তেমন রান না তোলার কারণে ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৮৫ রানেই থামে অজিদের ইনিংস। শেষ দিকে এলেক্স ক্যারির ২৭ বলে ৩৮ রান দলের বড় সংগ্রহে সাহায্য করে।
২৮৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৫৩ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে ইংল্যান্ড। বাটলার ও স্টোকস কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও তা বেশিক্ষণ টিকেনি। এক স্টোকসই যা লড়াই করেছেন ইংলিশদের হয়ে। তার ৮৯ রানের সুবাদে ইংলিশরা দুইশোর কোটা পার হয়। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপের বড় ধস নামান বেহেন্ডোরফ। তিনি একাই নেন ৪৪ রানে ৫ উইকেট। এছাড়া মিচেল স্টার্ক ৪৩ রানে নেন ৪ উইকেট।
ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতা ফিঞ্চ বলেন, আমি খুব খুশি। টুর্নামেন্টের সেমিতে উঠতে না পারলে আপনি কখনোই টুর্নামেন্টটি জিততে পারবেন না। আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি এখন পর্যন্ত। ইংল্যান্ডও ভালো দল। তারা বল এবং ব্যাটে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। বেহেন্ডোর্ফ দারুণ বল করেছে। প্যাট কামিংস নতুন বল ছাড়াও ভালো বোলিং করেছে। ন্যাথান লায়ন অসাধারণ ছিল। যদিও সে উইকেট পায়নি কিন্তু সে অসাধারণ ছিল ম্যাচে। ওয়ার্নার আজকে তার সেরা দিনে ছিলে কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হয়। আমরা খুব আত্মবিশ্বাসী নিজেদের নিয়ে। আমি তেমন খারাপ খেলিনি। দলের হয়ে যেকোনো সময় কিছু করাটা অনেক বেশি স্পেশাল। সেঞ্চুরি পাওয়ার জয়টা বেশ আনন্দ দিচ্ছে। উইকেট শুরুর দিকে কিছুটা পেস সহায়ক ছিল। ওকস ভালো বল করেছে। সে টানা ৭ ওভারে করেছে। আমরা ভেবেছিলাম সে ৫ ওভার পর থেমে যাবে কিন্তু পরে আরো দুই ওভার করেছে। ওয়ার্নারকে আজ বেশ আত্মবিশ্বাসী লাগছিল কারণ আপনি জানেন যাদের বিপক্ষে আপনি ভালো খেলেন তাদের সঙ্গে খেললে আত্মবিশ্বাস বাড়বেই। আমার মনে হয় আমরা দারুণ খেলেছি। তবে সেঞ্চুরি করার পর আউট হয়ে যাওয়াটা কিছুটা হতাশ করেছে আমাকে। এই স্কোরটাই যথেষ্ট ছিল আমাদের জন্য। আমরা যদি ভালো জায়গায় বল করতে পারি তাহলে ওরা পারবে না। আমরা হয়তো আর কিছু রান করতে পারতাম কিন্তু এই রানেই আমরা তাদের আটকিয়েছি। এরকম উইকেটে রান নিলে চাপ বাড়তেই থাকে। যদি ঠিক জায়গাতে বল করেই যান তাহলে ব্যাটসম্যানদের পক্ষে রান নেয়া কষ্টকর। উইকেট কিছুটা স্লো ছিল।