বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী যখন হিংসুটে আলিম দার!
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১০:২৫ এএম, ২৬ জুন ২০১৯ বুধবার

বাংলাদেশ-পাকিস্তানের লড়াইটা আজকের নয়। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও সুযোগ সন্ধানী পাকিস্তান সব সময় ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত। সেই ষড়যন্ত্র দেখা গেছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ১২তম আসরে। বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচ লক্ষ্য করলেই ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে দাগ কাটবে। বিশ্বকাপের এ ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দার। তার সেই ষড়যন্ত্র দেখেছে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। বাংলাদেশ যে দলের বিপক্ষেই খেলুক না কেন, যদি থাকে আলিম দার তাহলে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভুল কল দেবেই।
ইতিহাস যা বলে। আলিম দার বরাবরই বাংলাদেশি ক্রিকেট ভক্তদের নিকট একটি বিতর্কিত নাম। বাংলাদেশের বিপরীতে খেলায় তার বিচারকার্যে পক্ষপাত রয়েছে এটা পুরনো অভিযোগ- সেই অভিযোগের আরেকটি দৃষ্টান্ত দেখেছে গতকাল ক্রীড়াপ্রেমীরা। ব্যাপারটা এমন বাংলাদেশ অন্য দল নয় আলিমদারেরই প্রতিদ্বন্দ্বী।
বাংলাদেশের কোনো ম্যাচে পাকিস্তানের এই আম্পায়ার দায়িত্ব পেলেই ভুল সিদ্ধান্ত দিয়ে ক্রিকেটের সৌন্দর্য নষ্ট করতে থাকে। বিশ্বকাপেও এর ব্যতিক্রম করেননি পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দার।
গত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালেও আলিম দারের এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে বিদায় নিতে হয়েছিল টাইগারদের। এবার বিশ্বকাপে আবারো আলিম দারের বাজে আম্পায়ারিংয়ের শিকার হয় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের মধ্যকার ম্যাচ। এ ম্যাচে জিতলে বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলার আশা বেঁচে থাকবে বাংলাদেশের। এমন ‘মাস্ট উইন’ ম্যাচে আবারো আলিম দারের অপকর্মের শিকার বাংলাদেশ!
এদিন তামিম ইকবালের ওপেনিং সঙ্গী হয়েছিলেন লিটন। ১৭ বলে ২ বাউন্ডারিতে ব্যক্তিগত ১৬ রানে মুজিবের বলে যখন লিটন খুব ধীরে ডিফেন্স করেছিলেন তখন সেটা প্রায় ক্যাচ উঠে যায়। তবে সে ক্যাচ আফগানিস্তানের ফিল্ডার হাশমতুল্লাহ শাহিদি ধরে ফেলার আগেই দুই তালুর ভেতরে দিয়ে ঘাস স্পর্শ করে। ক্যাচটি হাশমতুল্লাহ শাহিদি যথার্থভাবে তালুবন্দি করতে পারেননি।
ফিল্ড আম্পায়ার নিশ্চিত ছিলেন না আউট নিয়ে। তাই ডাকা হয় তৃতীয় আম্পায়ার। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বলটি শহিদির হাত ছুয়ে মাটি স্পর্শ করেছে। অনেকক্ষণ ধরে দেখার পরেও টিভি আম্পায়ার নিশ্চিত হতে পারছিলেন না, এটি আউট কি না। এক্ষেত্রে ‘বেনিফিট অব ডাউট’ সবসময় ব্যাটসম্যানের পক্ষেই যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তৃতীয় আম্পায়ার লিটনকে আউট ঘোষণা করেন!
‘গোটা বিশ্ব দেখল এটা ড্রপ ক্যাচ অথচ থার্ড আম্পায়ার দেখলেন এটা আউট’। লিটন দাসকে থার্ড আম্পায়ারের মাধ্যমে যেভাবে আউট দেয়া হয়, তা রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত। বিশ্বকাপ এলেই কেনো বাংলাদেশের শত্রু হন এই পাকিস্তানি আম্পায়ার তা সত্যিই গবেষণার বিষয়।
বাংলাদেশের বিপক্ষে এখানেই শেষ নয়। ১৮তম ওভারের রশিদের প্রথম বল সাকিবের প্যাডে লাগে। আবেদন করা মাত্র আঙ্গুল তুলে দেন আম্পায়ার রিচার্ড কেটেলবার্গ। রিভিউ নেন সাকিব। দেখা যায় বল অনেক উপরে। তা কোনোমতেই স্ট্যাম্পে লাগত না। রিভিউ দেখে থার্ড আম্পায়ার ‘নট আউট’দেন। অথচ বোঝাই যাচ্ছিল বলটা যথেষ্ট ওপরে।
ফিল্ডে রিচার্ড কেটেলবার্গের সঙ্গে ছিলেন মাইকেল গফ। দুজনই ব্রিটিশ। থার্ড আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানের আলিম দার।
অথচ লর্ডসে পাকিস্তানের ওপেনার ফখর জামানের এমন একটি ক্যাচ ধরেন বাউন্ডারিতে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার ইমরান তাহির। ফখর জামানের ক্যাচটি তালুবন্দি করে উল্লাসে ফেটে পড়েন ইমরান তাহির। কিন্তু তাতে বাঁধ সাধেন ফিল্ড আম্পায়াররা! বল মাটি স্পর্শ করেছে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না আম্পায়াররা। পরে তারা থার্ড আম্পায়ারের সাহায্য নেন। রিপ্লেতে থার্ড আম্পায়ার দেখতে পান, বলটি মাটি স্পর্শ করে। এর পরই ক্যাচ নেন ইমরান তাহির। থার্ড আম্পায়ার ‘নট আউট’ সিদ্ধান্ত দিলে জীবন পান ফখর জামান।
২০১৫ বিশ্বকাপে প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা বাংলাদেশ দারুণ খেলছিল ভারতের বিপক্ষে। মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচের আম্পায়ার ছিলেন পাকিস্তানের আলিম দার ও ইংল্যান্ডের ইয়ান গোল্ড। ভারতের বিপক্ষে রোহিত শর্মার আউট নিয়েও বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দেন আলিম দার। রুবেল হোসেনের করা ফুলটস বলে রোহিত শর্মা আউট হন। বল রোহিত শর্মার কোমরের নীচে থাকলেও, লেগ আম্পায়ার আলিম দারের পরামর্শে ‘নো বল’ডাকেন ইয়ান গোল্ড! এ নিয়ে তুলকালাম হয় ক্রিকেটবিশ্বে! খোদ ভারতের সাবেক ক্রিকেটাররা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান।
সেই ম্যাচে এই দুই আম্পায়ারের একাধিক ভুল সিদ্ধান্তে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন শেষ হয় টাইগারদের। ভারতের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের সেই ম্যাচটা এখনো ভুলে যাননি ক্রিকেটপ্রেমীরা।
আলিমদারের পক্ষপাতিত্বও এবার রক্ষা করতে পারেনি আফগানিস্তানকে। ৬২ রানে আফগানদের হারিয়ে সেমিফাইনালের আশা জিইয়ে রাখল টাইগাররা। আসলে আউটগুলো এমনই ছিল যে আলিমদারেরও আর কিছুই করার ছিল না।
চার বছর পর আরো এক বিশ্বকাপে আবারো সেমিফাইনালের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ।