২০১৮ যেন অভিষেকের বছর
নিউজ ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০১:৪০ এএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের আগের দিনের কথা। ম্যাচ পূর্ববর্তী প্রেস কনফারেন্স শেষে বের হতেই শেরে বাংলার গেটে একজন মাঠকর্মীর প্রশ্ন, ‘কালকের ম্যাচে কার অভিষেক হবে?’- প্রশ্নটা এমনভাবে করলেন যেনো তিনি নিশ্চিত পরেরদিন বাংলাদেশের টেস্ট ক্যাপ পাবেন নতুন কোনো খেলোয়াড়।
তার এমন ভাবনাটা অস্বাভাবিক ছিলো না। কেননা বছরজুড়েই নতুন নতুন ক্রিকেটারকে বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেট অভিষেক করানোটা যে রীতিমতো নিয়মে পরিণত করে ফেলেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সে ম্যাচের আগে ২০১৮ সালে খেলা ৭ ম্যাচের মধ্যে ৫টি ম্যাচেই নতুন টেস্ট ক্যাপ পেয়েছেন ভিন্ন ৭ জন ক্রিকেটার।
উপরে আলোচিত ম্যাচে ২০১৮ সালের অষ্টম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হয় সাদমান ইসলাম অনিকের। অর্থাৎ বছরজুড়ে খেলা ৮ টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের অভিষিক্ত ক্রিকেটারের সংখ্যাটাও দাঁড়ায় আটে।
এছাড়া ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের পক্ষে অভিষেক হয়েছে মোট ১৪ জন ক্রিকেটারের। যে কারণে কেউ যদি গত হতে যাওয়া বছরটিকে বাংলাদেশের ‘অভিষেকের বছর’ হিসেবে গণ্য করতে চান, তবে খুব একটা ভুল হবে না।
তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ২০১৮ সালে অভিষেক হওয়া সেই ১৪ জন ক্রিকেটার হলেন সানজামুল ইসলাম, আবু জায়েদ রাহী, আরিফুল হক, নাজমুল ইসলাম অপু, মোহাম্মদ মিঠুন, খালেদ আহমেদ, নাঈম হাসান, সাদমান ইসলাম অনিক, আবু হায়দার রনি, নাজমুল হোসেন শান্ত, ফজলে মাহমুদ রাব্বি, আফিফ হোসেন, জাকির হাসান ও মেহেদি হাসান।
এদের মধ্যে ২০১৮ সালেই তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে নাজমুল অপু ও আরিফুল হকের। প্রথমবারের মতো টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলেছেন আবু জায়েদ রাহী। বাকি ১১ জনের অভিষেক হয়েছে যেকোনো এক ফরম্যাটে।
বছরের শুরুতে হওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজে কারো অভিষেক না হলেও, সে সিরিজ শেষে হওয়া শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির লড়াইয়েই অভিষেক হতে দেখা গিয়েছে ৭ জন ভিন্ন ক্রিকেটারের। এর মধ্যে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই খেলেছেন ৬ জন নতুন ক্রিকেটার।
এছাড়া দুবাইতে হওয়া এশিয়া কাপে অভিষিক্ত হয়েছেন তিন ক্রিকেটার। বাকি ৪ জন নিজেদের অভিষেক ক্যাপ পেয়েছেন ঘরের মাঠে হওয়া জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই সিরিজে।
অভিষিক্ত ১৪ জনের মধ্যে নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পেরেছেন কেবল গুটিকতক ক্রিকেটারই। বছরের একদম শেষ টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক হয়েছে সাদমান ইসলাম অনিকের। পিউর টেস্ট ব্যাটসম্যানের মতোই খেলে ১৯৯ বলে ৬ চারের মারে ৭৬ রানের ইনিংস খেলেন সাদমান।
এর আগের ম্যাচে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অভিষেক হয় ডানহাতি অফস্পিনার নাঈম হাসানের। মাত্র ১৭ বছর ৩৫৫ দিন বয়সে পাঁচ উইকেট শিকার করে অভিষেকে পাঁচ উইকেট নেয়া সর্বকণিষ্ঠ বোলার হয়ে যান তিনি।
নাঈম-সাদমান ব্যতীত টেস্টে অভিষিক্ত হওয়া বাকি ছয় ক্রিকেটারের কেউই সাদা পোশাকের ক্রিকেটে নিজেদের তেমনভাবে মেলে ধরতে পারেননি। তবে নিজের অভিষেক ইনিংসে শূন্য রানে ফিরলেও, দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৭ রানের ইনিংস খেলেছেন মোহাম্মদ মিঠুন। তবে এর পরে খেলা দুই টেস্টে ত্রিশের ঘরে পেরুনো হয়নি তার।
ওয়ানডে ফরম্যাটে অভিষেক হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন পাঁচ ক্রিকেটারের। কিন্তু কেউই অভিষেক ম্যাচ কিংবা তার পরবর্তীতে তেমনভাবে নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। একই চিত্র দেখা গিয়েছে বছরের শুরুতে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অভিষেক হওয়া ৬ ক্রিকেটারের ক্ষেত্রেও।
তাই বছরজুড়ে এক ডজনের চেয়েও দুইজন বেশি ক্রিকেটারকে অভিষেক করিয়েও তেমন একটা সুফল পায়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সারা বছর ধরে যে সফলতা, তার পুরোটাই এসেছে অভিজ্ঞ বা তরুণ ক্রিকেটারদের হাত ধরেই। প্রায় প্রতি সিরিজেই নিত্য-নতুন ক্রিকেটার খেলিয়ে সফল হওয়ার পরিকল্পনা যে খুব একটা ফলপ্রসু নয়, সেটিই যেনো প্রমাণ করে দিয়ে গেলো বাংলাদেশ ক্রিকেটের ২০১৮ সাল।
২০১৮ সালে টেস্ট অভিষেক হওয়া ৮ ক্রিকেটার : সানজামুল ইসলাম, আবু জায়েদ রাহী, আরিফুল হক, নাজমুল ইসলাম অপু, মোহাম্মদ মিঠুন, খালেদ আহমেদ, নাঈম হাসান ও সাদমান ইসলাম অনিক।
২০১৮ সালে ওয়ানডে অভিষেক হওয়া ৫ ক্রিকেটার : আবু হায়দার রনি, নাজমুল হোসেন শান্ত, নাজমুল ইসলাম অপু, ফজলে মাহমুদ রাব্বি ও আরিফুল হক।
২০১৮ সালে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হওয়া ৬ ক্রিকেটার : আফিফ হোসেন ধ্রুব, আরিফুল হক, নাজমুল ইসলাম অপু, জাকির হাসান, আবু জায়েদ রাহী ও মেহেদি হাসান।
